চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভবনের অনুমোদন নিয়ে ধোঁয়াশা

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১২ এপ্রিল, ২০২১ | ১:২৬ অপরাহ্ণ

নগরীর গোয়ালপাড়ায় হেলেপড়া পাঁচতলা ভবনটির নির্মাণের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক কাঠার কম জায়গায় মাত্র শূন্য দশমিক ৭৫ কাঠায় কিভাবে পাঁচতলা ভবনের অনুমোদন পেল, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে, ২৫ বছর আগে হেলেপড়া ভবনটি সিডিএ থেকে অনুমোদন  নেয়া হয়েছে বলা হলেও, ভবনের বয়স ২৫ বছর হবে না বলে ধারণা করছেন সিডিএ’র নগর পরিকল্পনাবিদ। ইতোমধ্যে ভবনটিতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে সিডিএ ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে, হেলেপড়া ভবনটি অপসারণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। গতকাল রবিবার চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এই চিঠি দেন সিডিএ’র অথরাইজড অফিসার মো. হাসান। তবে সিটি কর্পোরেশনের জন্য অপেক্ষা না করেই ভবন মালিক নিজেই ভবনটি অপসারণ করছেন।

গতকাল রবিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক জনতা ভবনটি দেখার জন্য ভীড় করছেন। ভবনের উভয়পাশে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। ভবন অপসারণের জন্য কাজ করছেন ৮-১০ জন শ্রমিক।

ভবন মালিক প্রয়াত কার্তিক ঘোষের সন্তান রাজু ঘোষের দাবি, সিডিএ’র অনুমোদন নিয়েই ১৯৯৬ সালে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। গতকাল ভবনটি পরিদর্শনে আসলে সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ ও ফায়ার সার্ভিসের টিমকে তা দেখিয়েছেন। রাজু ঘোষসহ মোট ছয় ভাই পরিবার নিয়ে ভবনটিতে থাকতেন। তিনি আরো বলেন, ভবনের নিচতলায় গোয়াল ঘর ছিল। ফ্লোরের কাজ করতে গিয়ে মাটি সরাতে গেলে শনিবার রাতে ভবনটি দেবে যায়। সেটি জানার পর সেখান থেকে তারা সবাই পরিবার নিয়ে সরে যান। এছাড়া, আশপাশের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নিজ উদ্যোগে ভবনটি ভেঙে ফেলছেন বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান বলেন, ভবন মালিক আমাদের কাছে দাবি করেছেন তিনি ১৯৯৬ সালে ভবনের অনুমোদন নিয়েছেন। সে হিসেবে এই ভবন ২৫ বছর পুরোনা হওয়ার কথা। কিন্তু এই ভবন এত পুরাতন না। যে কেউ দেখলে বুঝতে পারবে, এই ভবন সর্ব্বোচ্চ ১০-১২ বছরের পুরোনো হবে। এছাড়া, কোন ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ ছাড়াই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।

ভবনের অনুমোদন নেই জানিয়ে এই নগর পরিকল্পনাবিদ আরো বলেন, ভবনটি মাত্র ০.৭৫ কাঠার উপর নির্মিত হয়েছে। এত অল্প জায়গায় ৫ তলা ভবনের অনুমোদন পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে ভবন মালিক যেহেতু দাবি করছেন, তিনি ১৯৯৬ সালে অনুমোদন নিয়েছেন। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি, সে সময়ের সিডিএ’র ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে কিনা।

ভবন মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি হেলে পড়া ভবনের অনুমোদন দেখাতে না পারে, শীঘ্রই ভবন মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে, গতকাল রবিবার সকালে হেলে পড়া পাঁচতলা ভবন পরিদর্শনে যান চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়াত গৃহ মালিক কার্তিক ঘোষের সন্তানদের সাথে কথা বলেন। ভবনে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান। মেয়র সে সময় বাড়ির মালিককে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয়পূর্বক ভবনটি ভেঙ্গে বিধিসমেতভাবে পুনঃনির্মাণের জন্য পরামর্শ দেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট