চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শখ থেকেই সফল উদ্যোক্তা নাসরিন সরওয়ার মেঘলা

আকলিমা আক্তার

১১ এপ্রিল, ২০২১ | ৮:৫৫ অপরাহ্ণ

এইচএসসিতেই বিয়ে। বিয়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। পরে ডাবল এমবিএ। স্নাতকে পড়া অবস্থায় বাচ্চা হওয়া। কথায় আছে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। আসলেই কি তাই! এমন একজন নারীর গল্প বলবো যিনি দৃঢ় মনোবল, সাহস ও অক্লান্ত পরিশ্রমেই গড়েছেন নিজের জগত। যিনি চট্টগ্রামে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে সম্পৃক্ত থেকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশীয় সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তিনি হলেন নাসরিন সরওয়ার মেঘলা। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তার স্বীকৃতি চট্টগ্রামের সীমানা অতিক্রম করে জাতীয় অঙ্গনে পৌঁছেছে অনেক আগেই। পাশাপাশি সফল ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে চট্টগ্রামে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি।

ছোটবেলা থেকে চিত্রকলার সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও শুধুমাত্র ভালোলাগা, শখ ও নিজের চেষ্টায় দেশীয় সংস্কৃতি কাজ করা শুরু হয় তার। তাই ১৯৯৯ সাল থেকে কাজ শুরু করেন ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে। যা ২০১৬ সালে এসে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। দেশীয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার অর্জনের পাশাপাশি নাসরিন সারোয়ার মেঘলা যুক্ত আছেন চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সঙ্গে।

আলাপচারিতায় নাসরিন সরওয়ার মেঘলা বলেন, ‘প্রয়োজন থেকে নয় বরং দেশের প্রতি, দেশের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পড়াশুনা না করেই শুধুমাত্র শখের বসেই শিখলেন বুটিক, সেলাই ও বুননের কাজ। তারপর করতে করতে শেখা।’

১৯৯৮ সালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে আসেন নাসরিন সরওয়ার মেঘলা। প্রথমে তিনি দেশীয় পোশাক নিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছোট পরিসরে শুরু করেন ব্যবসা। এক সময় মেঘলা যুক্ত হন স্বামীর ব্যবসার সঙ্গে। এর মধ্যে ২০০০ সালে বাংলায় মাস্টার্স এবং ২০০৫ ও ২০০৭ সালে ডাবল এমবিএ করেন তিনি। পোশাক নিয়ে কাজ করতে করতে ২০১৬ সালে এসে চট্টগ্রামের খুলশী টাউন সেন্টারে খুলে ফেলেন নিজের বুটিক হাউজ।


ছোট ছেলে এবং মেয়ের নামানুসারে এই বুটিক হাউজের নাম দেন ‘মেঘরোদ্দুর’। কি নেই তার হাউজে! শাড়ি, কামিজ, পাঞ্জাবি, গহনা সবই আছে। সর্বনিম্ন ৯শ’ থেকে সর্বোচ্চ ১১ হাজার মূল্যের পোশাক পাওয়া যায় এই বুটিক হাউজে। স্বল্পমূল্যে শিক্ষার্থীরা যাতে দেশীয় পোশাক কিনতে পারেন এই কথা ভেবে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থাও করেছেন এই নারী উদ্যোক্তা।

দেশীয় পোশাক নিয়ে কেন ব্যবসা করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে নাসরিন সরওয়ার মেঘলা বলেন, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং দেশকে ভালোবাসি বলেই দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করি। তবে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, অনেক ক্রেতা দোকানের ভেতরে না ঢুকেই শুধুমাত্র দেশীয় পোশাকের কথা শুনেই চলে যান। আবার অনেকেই তো সুতির হ্যান্ডমেড কাপড়ের এতো কি দাম বলেও ভ্রু কুঁচকান। কিন্তু এই কাপড়ের কাঁচামাল কিনতে কি পরিমাণ খরচ হয়, কি পরিমাণ পরিশ্রমের পর একজন ডিজাইনার তার দেশের সংস্কৃতিকে কাপড়ে ফুটিয়ে তোলেন তা কেউ বুঝে না।

কখনো কি মনে হয়েছে বুটিক ব্যবসা ছেড়ে ঢাকায় চলে যাবেন- এমন প্রশ্নে মেঘলা বলেন, আমি খুব ইতিবাচক মানুষ। কিছু মানুষের কথায় নিজের ভালোলাগাকে কিভাবে ছেড়ে দিতে পারি!

দেশীয় পোশাককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রাক্কালে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়েছিলেন কিনা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে দেশীয় পোশাককে ভালোবাসে এমন ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। প্রতিবন্ধকতার কথা বললে সেদিক থেকে ছিল। তবে পরিবার, স্বামী যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছিল বলেই আজ আমি নিজের একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দিতে পেরেছি। দেশীয় সংস্কৃতিকে পোশাকে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে পেরেছি।’

সংসার, বাচ্চা, পড়াশোনা আবার স্বামীর ব্যবসা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মেঘরা বলেন, ‘সংসার আমার। বাচ্চাও আমার। তাছাড়া মা হতে পারা পরম সৌভাগ্যের। সেটাতে হিমশিম খাবার প্রশ্নই আসেই না। মা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া ভালো লাগার কাজ করতে ভালোই লাগে। প্রয়োজন না বরং মনের ক্ষুধা থেকেই পোশাকের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া। তাই হিমশিম খেতে হয়নি। বরং মজা পেয়েছি প্রচুর।’

করোনাকাল না থাকলে মেঘরোদ্দুরকে ভবিষ্যতে কোন জায়গায় দেখতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে নাসরিন সারোয়ার মেঘলা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের দেশকে, দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চাই।’

দেশীয় পোশাকের কাঁচামালের নির্দিষ্ট কোন বাজার না থাকায় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে এই ফ্যাশন ডিজাইনার বলেন, সরকার যাতে দেশের হ্যান্ডমেড পণ্যগুলোর জন্য একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে। দেশের পোশাকশিল্প নিয়ে যারা কাজ করে তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করার ব্যবস্থা করে। দেশীয় কাঁচামাল শিল্পের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধও জানান সফল এই নারী উদ্যোক্তা।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট