চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

কোথাও ক্রেতা কম কোথাও ভিড়

মিজানুর রহমান 

১০ এপ্রিল, ২০২১ | ১২:০৮ অপরাহ্ণ

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ক’দিন পরেই খুশির ঈদ। বড় এই দুই উৎসবকে ঘিরে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। দোকানে দোকানে নিত্য নতুন পণ্যের পসরা সাজিয়ে ক্রেতা টানতে প্রস্তুতিও ছিলো তাদের।

কিন্তু ফের করোনার ধাক্কায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সেই স্বপ্ন। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া ৭ দিনের লকডাউনের কারণে ৪ দিন পুরোপুরি বন্ধ রাখার পর সরকারি নির্দেশনা মেনে গতকাল নগরীর অভিজাত শপিং মল, বিপণি বিতান, মার্কেট খুললেও তাতে ক্রেতা ছিলো কম। ঋণ, ধারদেনা করে ভালো বিনিয়োগের পরেও ভরা মৌসুমে কম বিক্রিতে হতাশ ব্যবসায়ীরা।

কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শপিং মল, বিপণি বিতান, মার্কেট ও দোকান খোলা যাবে- গত বৃহস্পতিবার সরকারের এই ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি আসে লকডাউনে দোকান খোলার দাবিতে আন্দোলন করা ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তবে দোকান খোলার পর বেচাকেনা কম হওয়ায় আগের দিনের স্বস্তি গতকাল হতাশায় রূপ নেয়।

অভিজাত মার্কেটে মানুষ কম

তখন বিকেল ৩টা। অভিজাত শপিং মল সানমারে প্রবেশ করতে চাইলে জীবাণুনাশক স্প্রে নিয়ে এগিয়ে আসেন একজন কর্মী। শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করেন অন্যজন। ভেতরে গিয়েই রেডিমেড কাপড়ের জনপ্রিয় ব্রান্ড শৈল্পিক, জেন্টাল ম্যান, ম্যানসহুড দেখা গেলো প্রায় ক্রেতাশুন্য। এস্কেলেটর ব্যবহার করে দ্বিতীয় তলায় উঠে প্রসাধন সামগ্রীর দোকানে কিছু ক্রেতার দেখা মিললেও তারা কেনার চেয়ে উইন্ডো শপিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

তবে তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কাপড়ের দোকানে কিছু ক্রেতার দেখা পাওয়া গেছে। দিনের এই সময়ে পঞ্চম তলার মোবাইলের দোকান এবং ষষ্ঠ তলার ফুড কোর্টে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও গতকাল তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। ৭ম তলার বাটা, এপেক্স এবং ওরিয়নে কিছু ক্রেতার আনাগোনা দেখা গেছে।

ভরা মৌসুমে ক্রেতা কম থাকায় হতাশার সুর সানমারের ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে। জানতে চাইলে সানমার ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদ ইফতেখার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে ফের লকডাউনের খবরে মার্কেটমুখী হচ্ছেন না ক্রেতারা। তাই শুক্রবার তেমন বেচাকেনা হয়নি। কিছু করার নেই। এবারও ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

সানমারের মতো ক্রেতা সংকট দেখা গেছে সেন্ট্রাল প্লাজা, ইউনেস্কো, আমিন সেন্টার, বিপণি বিতান, লাকি প্লাজা, আখতারুজ্জামান সেন্টার, বালি আর্কেড, আফমি প্লাজা ঘুরে। তবে নগরীর মিমি সুপার মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। অভিজাত এসব মার্কেট ক্রেতাদের মাস্ক পরা এবং হাত ধোয়া ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ভেতরে সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষিত হলেও ভিড় এড়াতে এসব মার্কেটের প্রবেশ পথ ও বের হওয়ার পথ আলাদা রাখা হয়।

টেরিবাজার-রেয়াজ উদ্দিন বাজারে ভিড়

অভিজাত মার্কেটগুলোর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের মার্কেট হিসেবে পরিচিত টেরিবাজার, রেয়াজুদ্দিন বাজার এবং হকার মার্কেটে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রেয়াজুদ্দিন বাজারের বাহার লেনে গিয়ে দেখা যায়- নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই এলাকার সিডিএ মার্কেট, আজিজ শপিং সেন্টার, চিশতীয়া মার্কেটে কেনাকাটা সারছেন। ভিড় দেখা গেছে তামাকুম-ি লেনের মার্কেটেও।

বাহার লেনে কথা হয়- কাপড়ের দোকানি শামসুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ক্রেতাদের অনেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানার কর্মী। বেতন পেয়ে পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। বছরের এই সময়ে দিনে ৩০-৪০ হাজার টাকা বিক্রি হলেও শুক্রবার ১২ হাজার টাকা বিক্রি করেছি মাত্র। এখন আবার লকডাউনের কথা শুনছি। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।

মেয়ের জন্য জামা কিনতে আসা নাসরিন আক্তার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, দেশের পরিস্থিতি আমরা বুঝতে পারলেও শিশুদের তা বুঝানোর উপায় নেই। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মেয়ের জন্য একটি জামা নিতে এসেছি। প্রসাধন সামগ্রী কিনতে আসা উম্মে সাদিয়া মিতু বলেন, কদিন পর ফের লকডাউনের কথা শুনছি। তেল, সাবান, ক্রিমসহ কিছু জিনিষ দরকার ছিলো। তাই বের হওয়া।

মানুষের ভিড় দেখা গেছে টেরিবাজার ঘুরেও। টেরিবাজারের মূল প্রবেশ পথের দুই পাশের থান কাপড়ের দেকান, দুদু মিয়া মার্কেট, ঘোষাল মার্কেট, নুর মার্কেট, জনতা মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। তবে এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন- রমজানের আগের এই সময়ে যে পরিমাণ বিক্রি হওয়ার কথা- শুক্রবার এর তিন ভাগের একভাগও হয়নি।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতা সমাগম কিছুটা ছিলো। তবে তা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। তিনি আরও বলেন, ৪ দিন পর দোকান খুলতে পেরে ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও ফের লকডাউনের খবরে হতাশ। ব্যাংক ঋণ, ধারদেনা করে দোকানে পুঁজি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভরা মৌসুমে লকডাউন আমাদের পথে বসাবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট