চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সর্বপ্রথম ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি লিখে তাক লাগান চট্টগ্রামেরই কৃতী সন্তান

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ মার্চ, ২০২১ | ৩:৩০ অপরাহ্ণ

‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির প্রণেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের সাক্ষাৎকার

রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ৬৯’ এর গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির নায়কদের মধ্যে তিনিও অন্যতম। জীবনবাজি রেখে পাকিস্তানি শাসকের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রাজপথ তাঁতিয়ে রেখেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহহধন্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। সেদিনের উত্তাল রাজনীতির বেড়াজালে নিজেকে গুটিয়ে না রেখে সাহসের সাথে কলম ধরেছেন। রাজনীতির বুলেটিন প্রকাশ করে ছদ্ধনামে প্রবন্ধ লিখে কর্মীদের মনে বারুদ জ্বালিয়ে দিতেন। তিনিই প্রথম ঢাকা কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে ‘আজব দেশ’ নামের একটি প্রবন্ধে সর্বপ্রথম ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি শেখ মুজিবের নামের আগে লিখে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ’৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র-জনতার বিশাল সংবর্ধনা সভায় তৎকালীন ডাকসুর ভিপি, বর্তমানে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিটি ঘোষণা করেন। সেই থেকে তিনি বাঙালি হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু হয়ে চির জাগরুক। কিন্তু জানা হয়নি সেই বঙ্গবন্ধু শব্দটির প্রণেতা কে। কে সেই জন? স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে বিষয়টি নানাভাবে আলোচিত। সেই পেছনের নায়ক আর কেউ নন, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক, চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান। আনোয়ারা থানায় পৈত্রিক নিবাস। দৈনিক পূর্বকোণের সাথে একান্ত আলাপে তিনি অজানা অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন পূর্বকোণ ঢাকা অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক শিবুকান্তি দাশ।

পূর্বকোণ : আপনার ভাবনায় ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি কীভাবে আসলো ? বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করে যদি বলেন।
মুশতাক : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর বিশেষত, ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্ন’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন-সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে যান। আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বন্দীশালায় থাকাকালে শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। মূলত তাকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে। তিনি ছিলেন মূল প্রেরণাশক্তি এবং তাকে ঘিরে বাঙালি জাতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সংগ্রামী ছাত্রসমাজের মাঝে বিষয়টি খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করেছিল। শেখ মুজিবুর রহমান ধীরে ধীরে হয়ে উঠছিলেন বাঙালি জাতিসত্ত্বার প্রতীক ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মহানায়ক। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান সবার প্রিয় মুজিবভাই হিসেবে সমাদৃত। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের ও শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে যাবার পর থেকে সংগ্রামী ছাত্রসমাজ ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গশার্দুল’, ‘সিংহশার্দুল’ প্রভৃতি খেতাব জুড়ে দেন। কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবকে শেখ সাহেব, মুজিব ভাই, বঙ্গশার্দুল, সিংহশার্দুল বলে যথার্থ তাৎপর্য ও গুরুত্ববহ বলে মনে করতে পারছিলাম না। একটি যুৎসই উপাধি দেওয়ার তাগিদ অনুভব করছিলাম। বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতার জন্য একটি যুৎসই উপাধি আমি মনে মনে খুঁজছিলাম। এর কিছুদিন পর ‘আজব দেশ’ প্রবন্ধে আমি শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু‘ শব্দটি সংযুক্ত করি ।

পূর্বকোণ : ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ছাত্রলীগের বুলেটিনে ‘আজবদেশ’ শিরোনামে প্রবন্ধের লেখকের নাম ‘সারথী’ ছিল, এ প্রসঙ্গে যদি বলতেন ?
মুশতাক : ১৯৬৮ সালে আমি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফার আন্দোলনের ছোঁয়ায় আমি দারুণভাবে উজ্জীবিত হই। ৬ দফা আন্দোলনের ঢেউ ততদিনে পূর্ববাংলার টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ নামটি আমার ছদ্ধনাম ছিল। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ঢাকা কলেজ শাখার প্যাডেই আমি প্রবন্ধটি লিখেছিলাম। প্রবন্ধটি লিখে আমি কিছুটা সংশয়ে ছিলাম। কারণ তৎকালীন সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমার এই প্রবন্ধটি আমার নিজের এবং আমার সংগঠনের জন্য কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কিনা এ রকম একটা অজানা শঙ্কা আমার মনের মধ্যে বিরাজ করেছিল। এধরনের লেখা তৎকালীন সময়ে একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। এজন্যই ‘আজব দেশ‘ প্রবন্ধে আমি ‘সারথি’ ছদ্মনাম ব্যবহার করি।

পূর্বকোণ : আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে বঙ্গবন্ধু উপাধির বিষয়ে শেখ কামাল কি অবহিত ছিলেন?
মুশতাক : শেখ কামাল আমার সহপাঠী ছিলেন। আমরা দুইজন একই ক্লাসে পড়তাম। শেখ কামাল একজন চৌকষ সংগঠক ছিলেন। নিজে কোন পদ-পদবীতে না থেকে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার জন্য দিনরাত কাজ করতেন। সে সময় ঢাকা কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের ব্যাপক প্রভাব ছিল। যদিও বা ১৯৬৭ সালের ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ছাত্র সংসদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ বিপুল ভোটাধিক্যে বিজয় লাভ করে।

নির্বাচনের আগে শেখ কামালের সাথে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা করি। আলোচনার একপর্যায়ে আসন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচনে আমাকে জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) পদে প্রার্থী হতে বলেন শেখ কামাল। আমি দ্বিমত প্রকাশ করলে কামাল আমাকে পাল্টা প্রস্তাব করে বলেন ‘তাহলে তুমি ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নাও। ছাত্রলীগকে সাংগঠনিভাবে শক্তিশালী করতে হবে। আমি এতেও সম্মতি না জানিয়ে কামালকেই এই দায়িত্বটি গ্রহণ করতে বলি। কামাল বললেন ‘আমি তো রয়েছিই, তুমিই ছাত্রলীগের কলেজ শাখার দায়িত্ব গ্রহণ কর।‘ তারপর আর কোন কথা চলে না। কামালকে কোন পদ গ্রহণের প্রস্তাব করলেই সে এড়িয়ে চলতেন এবং বলতেন ‘আমি তো মুজিবের পোলা’ সবসময় তোমাদের সাথেই আছি।

পূর্বকোণ : আপনার প্রণিত ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির খবরটি সিরাজুল আলম খানের কাছে পৌঁছানোর পর উনার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল ?
মুশতাক : আজব দেশ প্রবন্ধটি লেখার পর সিরাজুল আলম খানের সাথে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। তিনি এটা না ছাপানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওই প্রবন্ধে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটির ব্যবহার এবং প্রতিধ্বনি বুলেটিনে ছাপার অক্ষরে প্রথম প্রকাশের ব্যাপারটিও তিনি জানতেন।
পূর্বকোণ : ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি ঘোষণা করেন। সেদিন আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল।

মুশতাক : সম্প্রতি নাগরিক টিভি’র সাংবাদিক রাজীব দাস এর সঞ্চালনায় ‘বঙ্গবন্ধু‘ উপাধির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ধারণকৃত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন ‘এই শব্দটা কিন্তু আগেও ঢাকা কলেজের রেজাউল মুশতাক নামে আমাদের এক কর্মীর একটা লেখার মধ্যে ছিল কিন্তু আনুষ্ঠানিকতা পায় নাই, আনুষ্ঠানিকভাবে আমিই ঘোষণা করেছি’’।
পূর্বকোণ : ২৩ ফেব্রুয়ারি সবাই জানলো তোফায়েল আহমেদই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির ঘোষক। কিন্তু নেপথ্যের ঘটনা আড়ালে থেকে গেলো না ?

মুশতাক : ছাত্রলীগের তৎকালীন সিনিয়র নেতারা আমার লেখা সম্পর্কে অনেকেই জানতেন। আর আমার সতীর্থ বন্ধু শেখ কামাল তো শুরু থেকেই সব জানতেন একদম প্রবন্ধ রচনা থেকে প্রতিধ্বনি বুলেটিনের প্রকাশ পর্যন্ত। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও উপাধিটি যে আমার লেখা সেটিও তিনি জানতেন। যে কারণে তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন।

পূর্বকোণ : পরববর্তীতে তোফায়েল ভাইর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে এ নিয়ে কোনও কথা হয়েছে?
মুশতাক : তোফায়েল ভাই’র সাথে আমার সবসময় ভালো সম্পর্ক ছিলো এখনো আছে। আমি অবশ্যই তাঁকে আমার রাজনৈতিক চেতনার নেতা হিসেবে সম্মান করি তিনিও আমাকে স্নেহ করতেন। তাঁর সাথে দেখা হলেই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির বিষয়টি স্মরণ করেন।

পূর্বকোণ : বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আপনি তো একটি জীবনীগ্রন্থও রচনা করেছিলেন ?
মুশতাক : বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি জীবনীগ্রন্থ প্রকাশের চিন্তা করি আমি। তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানে প্রকাশিত ফজলে লোহানী’র ধারাবাহিক কলামকে সংকলন করে ‘এই দেশেতে জন্ম আমার’ শিরোনামে দেড় ফর্মার একটি পুস্তিকা আমি প্রকাশ করি আমার ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু রায়হান ফেরদাউস মধু ও বন্ধুবর সাংবাদিক বদিউল আলম এর সহযোগিতায়। বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য এই পুস্তিকাই বঙ্গবন্ধুর জীবনী বিষয়ক সর্ব প্রথম ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত গ্রন্থ।

পূর্বকোণ : শেখ কামাল ছিলেন আপনার বন্ধু। সেই সূত্রে বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়া, সরাসরি দেখা বা কথা হয়েছিল?
মুশতাক : শেখ কামালের সাথে অনেকবার আমি ধানমন্ডির ৩২নং বাসায় গিয়েছি। কয়েকবার খাবারও খেয়েছি। ধানমন্ডির বাসায় বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। দেখা হলে কুশলাদি জানতে চাইতেন এবং সাংগঠনিক খোঁজ খবর নিতেন। ১৯৭০ এর সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগের কর্মীদেরকে নিয়ে উনার সাথে দেখা করতে গেলে উনি আমাকে কাছে ডেকে বলেছিলেন রাত তো অনেক হলো তোদের তো কিছু খাওয়াতে পারলাম না, (এটা নে বলে ৫০০ টাকা দিয়ে বললেন সবাইকে নিয়ে একসাথে তোরা খেয়ে নিস।)

পূর্বকোণ : একজন বন্ধু হিসেবে শেখ কামালকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মুশতাক : একজন বন্ধু হিসেবে শেখ কামালকে মূল্যায়ন করতে গেলে অনেক কথায় বলতে হয়। শেখ কামালকে নিয়ে আমার এত স্মৃতি তা এ সংক্ষিপ্ত সময়ে বলে শেষ হবে না। শেখ কামালের সাথে আমার পরিচয়ের যোগসূত্র হলো মরহুম জননেতা এম এ আজিজ। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর আমি ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু ঢাকা কলেজে আমার মন টিকে না, সবসময় আমি বিষন্নতায় ভুগতাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকা কলেজে পড়বো না। চট্টগ্রাম কলেজে গিয়ে ভর্তি হবো, যেখানে আমার বন্ধুরা পড়ে। কলেজ ছুটিতে একদিন আমি চট্টগ্রাম গেলাম, কয়েকদিন থাকলাম, একদিন সন্ধ্যায় আন্দরকিল্লায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাই, সেখানে দেখা হয় জননেতা এমএ আজিজের সাথে। তাঁর সাথে আমার পূর্বপরিচয়। মুসলিম হাই স্কুলে পড়াকালীন সময়ে আমি ছাত্রলীগ স্কুল শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং নগর ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম সেই সূত্রে এমএ আজিজের সাথে আমার পরিচয় ছিল (তাছাড়া তিনি আমার আত্মীয়ও ছিলেন)

ঢাকা কলেজে আমার পড়ালেখার অনাগ্রহ এবং চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছার কথা জানালে এমএ আজিজ আমাকে বারণ করে বলেন ‘ঢাকায় আমাদের নিজস্ব লোক থাকার প্রয়োজন তাছাড়া ওখানে মুজিব ভাইয়ের ছেলে কামালও পড়ে। তোমার কোন সমস্যা হবে না, আমি কামালকে বলে দিব।’ (তিনি আগে থেকেই জানতেন শেখ কামাল ঢাকা কলেজে পড়েন।) এই বলে এমএ আজিজ শেখ কামালকে একটি চিরকুট লিখে আমার হাতে দিলেন। আমি ঢাকায় গিয়ে শেখ কামালকে চিরকুটটি দিলাম। এমএ আজিজের চিরকুট পেয়ে শেখ কামাল আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। সেই থেকে কামালের সাথে আমার বন্ধুত্ব, ঘনিষ্ঠতা। এমএ আজিজের চিঠি আর আমার সাংগঠনিক পরিচিতি সব মিলিয়ে শেখ কামালের সাথে আমার সম্পর্ক নিবিড় থেকে নিবিড়তর হয়ে ওঠে। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা, ৩২নং ধানমন্ডির বাসায় দুপুরের খাবার খাওয়া, ক্লাস ছুটির পর বলাকা সিনেমা হলে ম্যাটিনী শো দেখতে যাওয়া, বানচিং চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ঢাকা কলেজের সামনে চিট্টগাং রেস্টুরেন্টে খাওয়া, গল্প করা, কত স্মৃতি আজ কামালকে ঘিরে।

পূর্বকোণ : আপনি শেখ কামালের বন্ধু, ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির প্রণেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বিষয়টি জানেন?
মুশতাক : বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জানেন। গত বছর (২০২০ সাল) ২ মার্চ উনার সাথে গণভবনে দেখা করে ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর নেপথ্যের ইতিহাস নামক একটি এ্যালবাম হস্তান্তর করি। তিনি সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সমস্ত দলিলগুলো দেখে তিনি আরো সুন্দর করে ছাপানোর পরামর্শ দেন।

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট