চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইয়াবা কারিশমায় স্কুলছাত্র জালাল এখন কোটিপাতি

আরফাতুল মজিদ , কক্সবাজার

২৪ জুন, ২০১৯ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

বয়স ১৭, তাতে কি? এই বয়সে কোটি কোটি টাকার মালিক। আলিশান জীবন-যাপন। এমন ভাগ্য কয়জনের কপালে জুটে! শুধু জুটেছে জালাল উদ্দিনের। জালাল টেকনাফের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। হ্নীলা ইউনিয়নের বড় লেচুয়াপ্রাং এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে সে। এই সময়ে জালাল কোটি কোটি টাকার মালিক। টেকনাফ কক্সবাজার চট্টগ্রাম ও ঢাকায় তার অবাধ বিচরণ। নিয়মিত কক্সবাজারের বিভিন্ন নামিদামি হোটেলেও তার অবস্থান। ইয়াবা ট্যাবলেটের কারিশমায় অল্প বয়সে জালালের এই

উত্থান। এমন উত্থানে অবাক তার এলাকাবাসী ও স্কুল বন্ধুরাও। তবে স্কুল জীবনেই ইয়াবা নিয়ে দু’বার কারাগারে যায় জালাল। রয়েছে মামলাও। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কৌশলে আত্মগোপনে রয়েছে সে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে বেশ কয়েকবার তার বাড়িতে অভিযান চালায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সর্বশেষ গত শনিবার র‌্যাবের একটি দল তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে সে পলাতক রয়েছে। গত ৫ দিন আগেও টেকনাফ থানা পুলিশ জালালের বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু অল্পবয়সী কৌশলী এই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে তার ইয়াবা ব্যবসা ও সিন্ডিকেট সম্পর্কে সব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে টেকনাফ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) এম এস দোহা বলেন, জালালের ব্যাপারে পুলিশের অবস্থান পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট। ইতিমধ্যে তার বাড়িতে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেছি, সে বর্তমানে আত্মগোপনে থাকায় তাকে আটক করতে পারিনি। তাকে আটক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পড়াশোনায় এখনো সেকেন্ডারির পাঠ চুকাতে পারেনি জালাল। কিন্তু পড়াশোনার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। ড্রেস পরিহিত অবস্থায় স্কুল ব্যাগে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে নির্বিঘেœ পাচার করেছে ইয়াবা। অল্প বয়স এবং অল্প সময়ে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে হিতাহিত জ্ঞাত হারিয়ে ফেলে সে। অবৈধ অর্থ তাকে বেপরোয়া করে তুলে।
জালালের ইয়াবা ব্যবসা এবং পাচারের অন্যতম ‘মাধ্যম’ ছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক সিন্ডিকেট। তার সিন্ডিকেটের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। সিন্ডিকেটের রোহিঙ্গা সদস্যদের নগদ টাকা ও সম্পদ জমা থাকে তার কাছে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইয়াবা ব্যবসায়ী আলম আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। রোহিঙ্গা আলম ছিল তার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। তার সমস্ত সম্পত্তি, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার জমা আছে ইয়াবা ব্যবসায়ী জালালের কাছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করলে নিহত রোহিঙ্গা ইয়াবা আলমের সকল সম্পদের সন্ধান ও পুরো সিন্ডিকেটের নাগাল পেতে পারে বলে ধারণা অনেকের।
ইতোমধ্যে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে দুইবার আটক হয় জালাল। প্রথমবার বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ ২০১৬ সালে মিরসরাই জোরারগঞ্জ থানায় আটক হয়। ওই সময় টানা কয়েকমাস কারাভোগ করে। এরপর কারাগার থেকে বের হয়ে আবারও পাচার শুরু করে। এর পরপরেই ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম সদরঘাট থানায় ফের ইয়াবাসহ আটক হয়। সেই সময়ও টানা কয়েকমাস কারাভোগ করে। বয়স কম হওয়ায় দু’বারই সে কারাভোগ করে শিশু কয়েদি হিসেবে।
সম্প্রতিক মাদকবিরোধী অভিযানে কয়েকজন নিহত ও বাকিরা গা ঢাকা দিয়েছে। এখনো অধরা হ্নীলার জালাল উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। তারা বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে মূলত ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। অতি কৌশলী হওয়ায় থানা পুলিশ এখনো নাগাল পায়নি জালাল উদ্দিনের। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের আস্তানায় পুলিশের অভিযান সীমিত হলেও অনেক ক্ষেত্রে নজরে রেখেছে বলেও তথ্য দেন পুলিশ।
এসব বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জালাল উদ্দিন বলেছে, আমি হ্নীলা উচ্চ বিদালয় থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। স্কুলের শিক্ষকসহ সবাই আমাকে চেনেন। তবে আমি এখন ইয়াবা ব্যবসা করি না। এক সময় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম। তবে ইয়াবা আমার না হলেও আমি জেলও কেটেছি ইয়াবাসহ আটকের ঘটনায়। তবে এখন জড়িত নেই। ইয়াবা কারবারে আমার কোনো সহযোগীও নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট