চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাঁশখালীর জনগণের মুখে মুখে প্রশ্ন

নুর মোহাম্মদ-ওসমান গংদের অস্ত্রবাজি ঠেকাবে কে?

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী

২৪ জুন, ২০১৯ | ১:০৮ পূর্বাহ্ণ

উপজেলার সরল ইউনিয়নের ত্রাস, দুধর্ষ সন্ত্রাসী, ডাকাত মেম্বার জাফর গত শুক্রবার দিনেদুপুরে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের মধ্য দিয়ে এক গ্রুপ-প্রধানের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তবে অপর গ্রুপে নুর মোহাম্মদ ও ওসমান গংদের সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি ঠেকাবে কে? বাঁশখালীর জনগণের মুখে মুখে এমনই প্রশ্ন। যদিও সরলের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা প্রচার হলে চাম্বল ও বাহারছড়ার চিহ্নিত কতিপয় ডাকাত ও সন্ত্রাসী এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
বাঁশখালীর প্রতিটি এলাকার মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রুপভিত্তিক বাহিনী গড়ে উঠেছে। এই বাহিনীর প্রভাবশালী গডফাদারদের মুখোশ উন্মোচন করার দায়িত্ব প্রশাসনের। খুন, ডাকাতি, অস্ত্রবাজি, ভূমিদস্যুতাসহ ২৭ মামলার আসামি ডাকাত মেম্বার জাফর খুনের পর ঐ বাহিনীর সরকারি চরের জায়গা দখলের জন্য কে দায়িত্ব নিচ্ছেন? জাফরের মৃত্যুর পর সরলের পরিস্থিতি শান্ত হবে, নাকি আরো অস্থিতিশীল হবে? বনবিভাগের সরকারি চরের জায়গা দখলের জন্য লাভবান কে? আগামীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কোন এলাকার কোন ডাকাত, সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবেন? এমন আলোচনা চলছে বাঁশখালীর পাড়া, মহল্লা, চায়ের দোকান ও অফিস আদালতসহ নগরীতে অবস্থানকারী বাঁশখালীবাসীর মধ্যে।
বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলার ফরিদ ডাকাত, মোনাফ ডাকাত, মনু ডাকাত, শফিক ডাকাত, বশির ডাকাতসহ ৮/১০ জন ডাকাত ডাকাতিকালে মৃত্যুবরণ করেছে। ওই সময় ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণ করত স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। বর্তমানেও উপজেলার ছনুয়া, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, সরল, চাম্বল ও গ-ামারা এলাকায় গডফাদারদের যোগসাজসে গড়ে তোলা হয়েছে এলাকাভিত্তিক দুর্ধর্ষ বাহিনী। এই বাহিনীর লোকজন এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার, ঝাউ বাগান উজাড় করে লবণ ও চিংড়ি ঘের তৈরি, জমি দখল, সরকারি জায়গা দখল সবকিছুতেই নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে থাকে। আড়ালে থাকে গডফাদাররা। পর্দার আড়ালে থেকে এই গডফাদাররা বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলকে অস্থির করে রেখেছেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের ব্যক্তিগত দখল কাজে অস্ত্রধারী হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন জলদস্যু, ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের। এতে এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানা। অবৈধ অস্ত্রগুলো দিয়ে সাগরপথে মাছ ধরার নৌকা ডাকাতির সময় জাল-মাছ লুট করা, জেলেদের জিম্মি করে বিকাশের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। বাঁশখালীতে ডাকাত ও জলদস্যু বাহিনীর সংখ্যা অন্তত ৮টি রয়েছে। এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে মহেশখালী থেকে দেশীয় তৈরি অস্ত্র কিনে এনে এলাকায় মহড়া দেয়। দিনে দিনে হয়ে ওঠে চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সাধারণ মানুষ থাকে ভয়-ভীতির মধ্যে। থানা পুলিশ প্রশাসন জেলা পুলিশের সহায়তায় অস্ত্রধারীদের ধরতে মরিয়া হয়ে রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন ইউনিয়নে অভিযান চালিয়েও অস্ত্র উদ্ধারে সুফল পাচ্ছে না। সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে। জায়গা দখল থেকে শুরু করে সবকিছুতে ভাড়াটে হিসাবে অস্ত্রধারীরা ব্যবহৃত হচ্ছে। সন্ত্রাসের জনপদ হিসাবে চিহ্নিত এলাকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানায় স্থানীয়রা।
বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, বাঁশখালী উপজেলায় চাম্বল, ছনুয়া, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, সরল ও গ-ামারা এলাকার সন্ত্রাসীদের তালিকা পুলিশের হাতে রয়েছে। যেকোন মুহূর্তে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী অভিযানে গ্রেপ্তার হবে। বিভিন্ন এলাকায় সোর্সের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। কোন অবস্থাতেই সন্ত্রাসীদের ছাড় দেয়া হবে না। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট