চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামের নিখোঁজ শিক্ষার্থী শাকিবকে দেখা গেছে কুমিল্লায় (দেখুন ভিডিওসহ)

নাজিম মুহাম্মদ

২৩ জুন, ২০১৯ | ১১:৪৬ অপরাহ্ণ

নিখোঁজের তিনদিনের মাথায় কিশোর সাকিব সাহাবকে (১৫) কুমিল্লার চকবাজার এলাকায় দেখা গেছে। গত ১৯ জুন সাকিব তার মায়ের মুঠোফোনে ফোন করে বলেছে, ‘আমি ভালো আছি, দোয়া করবেন, আমি এক জায়গায় আছি’ চিন্তা করবেন না’। এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয়। গত ১৬ জুন বড় বোনের সাথে স্কুলে যাবার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বোনের সাথে স্কুলে গেলেও ব্যাগে বই খাতার পরিবর্তে দুটি পাঞ্জাবি, একটি জিন্সের প্যান্ট, টুথপেস্ট, ব্রাশ, সাবান, চুলকানির ওষুধ, মায়ের আলমিরা থেকে তিন হাজার টাকা, একটি স্বর্ণের চুড়ি নিয়ে গেছে। যে ছেলেটি নগরীর রাস্তাঘাট ভালভাবে চিনেনা সে কিভাবে কুমিল্লা গেলো তা বুঝতে পারছে না তার মা বাবা।

সাকিব নগরীর নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র। একই স্কুলের দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত তার বড় বোন। সাকিবের নিখোঁজের সংবাদ শুনে তার সৌদিআরব প্রবাসী বাবা সাহাবউদ্দিন জরুরিভাবে দেশে চলে এসেছেন। সাকিবের সন্ধান পেতে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ও নগর গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে।
কাউন্টার টেরোরিজমের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ জানান, কিশোর নিখোঁজের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ তদন্ত করছে।
সাকিবের মা ইসমত আরা জানান, গত ১৯ জুন দুপুরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করেছিলো সাকিব। বললো, মা আমি সাকিব। আমি ভাল আছি- দোয়া করবেন। আমি এক জায়গায় আছি, চিন্তা করবেন না। বেশি কথা বললে টাকা দিতে হবে এই বলে লাইন কেটে দেয়। সাথে সাথে অপরিচিত সেই ফোন নম্বর নগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টসূত্র জানায়, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে সাকিবের মায়ের দেয়া সেই মুঠোফোনের নম্বরটি কুমিল্লার চকবাজার এলাকার এক দোকান কর্মচারির। পরদিন (২০ জুন) কুমিল্লার চকবাজারে গিয়ে সেই দোকান কর্মচারির সাথে কথাও বলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। উক্ত দোকান কর্মচারী জানিয়েছে, এক কিশোর তার কাছে এসে বলেছে মায়ের সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলবে। কিন্তু পাঁচ মিনিট সময় দিতে রাজি হয়নি উক্ত কর্মচারী। পরে দোকানের পেছনের রুমে গিয়ে দেড় মিনিটের মতো কথা বলে চলে গেছে। বাসা থেকে স্কুল ড্রেস পরে বের হলেও কুমিল্লার সেই দোকান থেকে কথা বলার সময় পরনে পাঞ্জাবি ছিলো।
কুমিল্লার সেই এলাকার একটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ১৯ জুন বেলা পৌনে দুইটার সময় একটি নীল রঙের একটি পাঞ্জাবি, জিন্সের প্যান্ট, জুতো, মুখে মাস্ক ও মাথায় কালো ক্যাপ পরে ফুটপাত দিয়ে হেটে যাচ্ছে। পিটে ব্যাগটি ছিলো না।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, কিশোর নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত চলছে। আমাদের ধারণা সাকিব নিজেই চলে গেছে।
সাকিবের মা ইসমত আরা জানান, ১৬ জুন স্কুলে যেতে দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি বাসা থেকে আগে নিচে নামেন। কিছুক্ষণ পর সাকিবও স্কুল ব্যাগ নিয়ে নামে। নিখোঁজের পর তার রুমে গিয়ে দেখি স্কুলব্যাগ নিয়ে বের হলেও সে কিন্তু বই খাতা কিছুই নেয়নি। ব্যাগে পাঞ্জাবি, প্যান্ট ও ব্যবহারের অন্যান্য টুকটাক জিনিসপত্র নিয়েছে। আলমিরা থেকে তিন হাজার টাকা ও একটি স্বর্ণের চুড়িও নিয়ে গেছে।
ইসমত আরা জানান, আলমিরায় টাকা আর স্বর্ণের অলংকার আরো থাকলেও সব নেয়নি। তাছাড়া ছোট বেলা থেকে কখনো আমাকে না বলে টাকা পয়সা নেয়নি। আমাকে ছেড়ে কখনো একা থাকেনি। কিভাবে কি হয়ে হলো বুঝতে পারছিনা।
ছেলের নিখোঁজের সংবাদ শুনে সৌদিআরব থেকে দ্রুত চলে এসেছেন সাকিবের বাবা সাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, সাকিবের জন্ম সৌদি আরবে। ব্যবসা বাণিজ্য মন্দা হওয়ায় গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে দেশে আসি। মেহেদীবাগের ফ্ল্যাট বাসায় উঠে জানুয়ারিতে বড় মেয়ে ও সাকিবকে সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করাই। গত এপ্রিল মাসে তাদের রেখে সৌদি আরব চলে যাই।
তিনি বলেন, আমার ছেলের পরনের অনেক কাপড় রয়েছে। প্রায় সময় টি শার্ট পরতো। তার অনেকগুলো টি শার্ট আছে। কিন্তু পাঞ্জাবি কেন নিয়ে গেলে তা বুঝতে পারছিনা। ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছে সৌদিআরবে। চট্টগ্রাম শহরের রাস্তাঘাটও ভালভাবে চিনে না। মাঝে মাঝে বাসার সামনে সিডিএ মসজিদে নামাজ পড়তে যেতো। কুমিল্লা কিভাবে গেলো তা আমরা বুঝতে পারছিনা। অনেক আদরের ছেলে আমার। কখনো বড় করে কথা বলতোনা। বাজারে গেলে কখনো বাজারের ব্যাগ আমাকে হাতে নিতে দিতোনা। আমি তো কারো ক্ষতি করিনি। আমার এত বড় ক্ষতিটা কে করলো?
১৬ জুন সাকিবকে বহনকারী সিএনজি ট্যাক্সিচালক মহিউদ্দিন জানান, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে ছেলেটি আগে গাড়ি থেকে নামে। এরপর পরই তার বড় বোন গাড়ি থেকে নামেন। বোন স্কুলের গেট পার হবার পর ছেলেটি ফিরে এসে বললো, ‘বাসা থেকে ভুলে টিফিন নিয়ে আসেনি। এই বলে গাড়িতে উঠে ষোলশহর যেতে বললো। নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে গিয়ে গাড়ি নিয়ে মেইন রোডে উঠে ষোলশহর স্টেশনের বিপরীতে গাড়ি থামিয়ে আমাকে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে ছেলেটি নেমে যায়। এরপর কোথায় গিয়েছে আমি জানি না’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট