চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

কর্মপন্থা ঠিক করতেই দু’মাস পার

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৩ জুন, ২০১৯ | ১:৫০ পূর্বাহ্ণ

ষ রমজানের জন্য বন্ধ ছিল, এখন
শুরু হচ্ছে : কমিটির প্রধান
ষ ১৯তম সভার সিদ্ধান্ত ছিল
১৫ মে’র মধ্যে নিজ উদ্যোগে
স্থাপনা উচ্ছেদ, ৩০ এপ্রিলের
মধ্যে বিদ্যুৎ পানি গ্যাস
সংযোগ বিচ্ছিন্ন

এক মাসের মধ্যে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হলেও ‘উচ্ছেদ কর্মপন্থা’ ঠিক করতে বসছে দুই মাস পর। উচ্ছেদ সংক্রান্ত উপ-কমিটি আগামীকাল কর্মপন্থা নির্ধারণী সভায় বসছে। এতে পাহাড় মালিক ও উচ্ছেদ সংশ্লিষ্ট ১৭ সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৯তম সভায় এক মাসের মধ্যে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গত ১৫ মে’র মধ্যে পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত ছিল। এছাড়াও ৩০ এপ্রিলের মধে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু উচ্ছেদ কমিটি সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বৈঠকে বসছে দুই মাস পর। এজন্য সংশ্লিষ্ট ১৭ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৯তম সভায় সরকার ও ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ‘কর্মপন্থা নির্ধারণের’ জন্য ২৪ জুন পরিবেশ অধিদপ্তরের হালদা কনফারেন্সে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে পুলিশ কমিশনার, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম), ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগের তিন সার্কেলে নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, নগর পুলিশের সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিসি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক, নগরীর সদর, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, কাট্টলি সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি), হাটহাজারী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, খুলশী, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), সিটি করপোরেশনের ১,৬,৭,৮,৯,১০,১১,১৩,১৪,১৭,১৮,১৯ নং ওয়ার্ড

কাউন্সিলর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় মালিকদের । উচ্ছেদ সংক্রান্ত উপ-কমিটির আহ্বায়ক পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘ইতিমধেই আমরা কিছু প্রোগ্রাম করেছি। মাঝখানে রমজানের জন্য উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ ছিল। এখন আবার শুরু করছি।’ নগরীতে ১৭ পাহাড়ে ৮৩৫ পরিবার অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী হিসেবে চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। সরকারি মালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী হচ্ছে ৫৩১টি পরিবার আর সরকারি মালিকানাধীন ৭ পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী হচ্ছে ৩০৪ পরিবার। সরকারি পাহাড়ের মধ্যে সিটি করপোরেশন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ওয়াসা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ২৫ এপ্রিল পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব-অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) ১৯তম সিদ্ধান্তের আলোকে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে সরকারি তিন সংস্থার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিদ্যুৎ পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। একইভাবে ১৫ মে’র মধ্যে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদের জন্য পাহাড় মালিকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগেই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করার কথা ছিল কিন্তু কোন সংস্থা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি।
এদিকে, রমজান মাসে জেলা প্রশাসন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ বসবাসকারীদের বিদ্যুৎ পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছিল। মতিঝর্ণা পাহাড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিল জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিম। উচ্ছেদ ঠেকাতে মাঠে নেমেছিল আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম ও বিএনপি নেত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজনীতির মাঠে দুই মেরু হলেও পাহাড় নিয়ে তারা একাট্টা হয়েছেন। লালখান বাজার মোড়ে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধও করেছিল তারা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট