চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কারাগার কম্পাউন্ডেই ইয়াবা নিয়ে নারীসহ দু’জন ধরা

কারাগারে মাদক ঢুকছে তিন মাধ্যমে

নাজিম মুহাম্মদ

২৩ জুন, ২০১৯ | ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ষ কারাফটকে তল্লাশিতে বন্দীদের কাছে প্রায় ইয়াবা মেলে : জেল সুপার

ষ হাজতখানায় বন্দিদের ইয়াবা নেয়া সম্ভব নয় : এডিসি প্রসিকিউশন

কারারক্ষীর মাধ্যমে কারাগারে ইয়াবা সরবরাহের খবর প্রকাশ হওয়ার জের না কাটতেই এবার আদালত পুলিশের হেফাজতে থাকা বন্দির কাছে মিলল ইয়াবা বড়ি। পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী রেজাউল করিম ওরফে ডাইল করিম প্রকাশ ছোট ডাইল করিম আদালতে হাজিরা দিয়ে কারাগারে প্রবেশের সময় ১৮০ পিস ইয়াবা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে কারারক্ষীদের তল্লাশিতে ধরা পড়েন। গতকাল শনিবার মুক্তা বেগম (৩৫) নামের এক মহিলাকে চট্টগ্রাম কারাগারের মাঠ থেকে ২২ পিস ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। তিনি কারাবন্দি স্বামী আনোয়ারের সঙ্গে দেখা করে ইয়াবা বড়ি দিতে এসেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আনোয়ার কারাবন্দি আছেন। এর আগে আদালতের হাজতখানা থেকে ফেরার পথে গত দু’মাসে আরো নয় আসামির কাছ থেকে জেল গেটে তল্লাশির সময় ইয়াবা ধরা পড়ে। চট্টগ্রাম কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. কামাল হোসেন বলেন, আদালতে হাজিরা শেষে ফেরার পথে কারাফটকে ২০ থেকে ৩০ পিস ইয়াবা বহন করে আনার সময় আসামিদের ধরা পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবে ডাইল করিম অনেক বেশি ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়লেন। গত দুই মাসে অন্তত এ ধরনের এগারোটি ঘটনা ঘটেছে। ডাইল করিমকে বৃহস্পতিবার রাতে আটক করলেও

চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার কোতোয়ালী থানায় মামলা করে। আর মুক্তা বেগমকে গতকাল (শনিবার) বেলা ১১টায় আটক করা হয়। এ দুই ঘটনায় কারাগারে তিন মাধ্যমে মাদক প্রবেশের বিষয়টি স্পষ্ট হলো। এই তিন মাধ্যম হলো-কারারক্ষীর মাধ্যমে মাদক প্রবেশ, আদালতে হাজিরা শেষে জেল ফেরত বন্দি ও বন্দিদের দেখতে আসা স্বজনদের মাধ্যমে কারা অভ্যন্তরে মাদক পাচার। তবে পুলিশ ও কারা কর্মকর্তারা বলেছেন, জেলখানা থেকে আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দিদের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক কারাগারে প্রবেশ করে। কারাগার থেকে আসামি বুঝে নেয়ার পর দিনভর আদালতের পুলিশ হাজতখানায় থাকা বন্দিদের কাছে কিভাবে ইয়াবা আসছে বিষয়টি সন্তোষজনক উত্তর মিলছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
গত ১৫ জুন সাইফুল ইসলাম নামের এক কারারক্ষী ৫০ পিস ইয়াবা বড়িসহ কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তিনি ছিলেন কারাবন্দি নুর আলম ওরফে হামকা আলমের ইয়াবা সরবরাহকারী। হামকা আলম কারাগারে বসেই কারাগারের ভেতরে ও বাইরে ইয়াবা ব্যবসা করেন বলে সাইফুল পুলিশকে তথ্য দেন। রেজাউল করিম ওরফে ডাইল করিমের (৪৫) বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদি হলেন চট্টগ্রামের ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২০ জুন রাত সাড়ে আটটায় চট্টগ্রাম মহানগর আদালত থেকে ফেরার পথে ডাইল করিমকে কারাফটকে তল্লাশি করা হয়। তখন তার গোপনাঙ্গের নিচে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ১৮০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। গতকাল দায়ের করা মামলা ছাড়াও ডাইল করিমের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী, বন্দর ও হালিশহর থানায় ১০টি মাদক মামলা রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বন্দর এলাকায় তিনি মাদকসহ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তার বাড়ি নগরীর হালিশহরের ছোটপুলি কাঁচাবাজার এলাকায়। ২০০৭ সালে তিনি মাদকসহ প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
এর আগে গত ১৬ জুন আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো আসামি নুর মোহাম্মদের পেট থেকে সাড়ে ৩০০ ইয়াবা উদ্ধার করে কারা কর্তৃপক্ষ। নগরীর কর্ণফুলী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার নুরকে মাদক মামলায় থানা থেকে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। গত ৬ মে কর্ণফুলী থানা থেকে মাদক মামলার আসামি ইশিতা সুলতানাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন ৭ মে নারী কারারক্ষীরা তার পেট থেকে ৭৩টি ইয়াবা উদ্ধার করে। গত ৭ মে আমিনুল ইসলাম নামে একজন আসামি আদালতে হাজিরা শেষে কারাগারে ফেরার পর তাকে কাছ থেকে ১০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গত ২ জুন আদালত থেকে হাজিরা দেওয়ার পর কারাগারে পাঠানো আসামি মো. শাহাবুদ্দিন মোল্লা ওরফে সাবু ও আলমাসের কাছ থেকে যথাক্রমে ২৬টি ও ২৮টি ইয়াবা জব্দ করে কারা কর্তৃপক্ষ। ১১ জুন কারাগারের মো. মনির হোসেনের কাছ থেকে ১৪ পিস এবং আসামি সাইফুল করিমের কাছ থেকে ১৬ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
আদালত ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম আদালতের হাজতখানায় আসা বন্দিদের সঙ্গে তাদের স্বজনরা হরহামেশাই দেখা করতে পারেন। তারা বন্দিদের জন্য বাসা বাড়ি থেকে আনা খাবারও খাওয়ান। তবে এজন্য প্রতি বন্দির স্বজনকে সর্বনি¤œ দুই হাজার টাকা তুলে দিতে হয় কোর্ট হাজতের দায়িত্বে থাকা পুলিশের হাতে। আদালতের হাজতখানার সামনেই একজন পুলিশ কাগজ কলম নিয়ে বসে বন্দিদের স্বজনদের আসা যাওয়া বাবদ দেওয়া অর্থ প্রকাশ্যে গ্রহণ করেন। পুলিশের এই নগদ অর্থ লাভের সুযোগেই কারাবন্দিরা নিয়ে আসেন মাদক থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিসপত্র। অথচ জেলখানার মতোই আদালতেও বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের দেখা করার সুযোগ থাকার কথা নয়।
আদালতের কয়েদখানায় দেখা করার বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও তা পুরোপুরি অস্বীকার করে বসলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, এভাবে বন্দিদের সঙ্গে কারো কথা বলার সুযোগই নেই। আদালত থেকে কারাগারে ফেরার পথে বন্দিদের শরীর ব্যাপকভাবে তল্লাশি করা হয়। তাহলে রেজাউল করিমের শরীরে ইয়াবা বড়ি কীভাবে পাওয়া গেল এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমন খবর আমার জানা নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট