চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্ড সুবিধায় আমদানি করা কাগজ বোর্ড খোলাবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ জুন, ২০১৯ | ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বন্ড সুবিধায় আমদানি করা কাগজ ও বোর্ড খোলা বাজারে বেচে দেয়া হচ্ছে। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং এসব পণ্যের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদার ভিত্তিতে শুধুমাত্র ৩০০ গ্রাম ও তদুর্ধ্ব গ্রামের কাগজ এবং বোর্ড বন্ড সুবিধায় আমদানি করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বন্ড সুবিধা ভোগকারী কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারি এই নীতিমালা লঙ্ঘন করে

নির্বিচারে বিভিন্ন গ্রামের কাগজ ও বোর্ড আমদানি করছে। বন্ড সুবিধার আওতায় শূন্য শুল্কে আমদানি করা ৩০০ গ্রামের চেয়ে কম ওজনের এসব কাগজ ও ডুপ্লেক্স বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড ইত্যাদি খোলা বাজারে বেচে দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল জানান, দেশের মুদ্রণ প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইডিস বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ এডহেসিভ পেপারের বিপুল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এসব পণ্যের আমদানিতে সর্বোচ্চ হারে শুল্ক বিদ্যমান । বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল একারণে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাতে লাভবান হচ্ছে চোরাপথের ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হলো- এভাবে আমদানি হওয়া কাগজ পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বন্ড সুবিধায় আমদানি হওয়া কাগজ পণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা ধরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তা প্রকৃত ব্যবসায়ীদেরকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন করছে। গতকাল রাজধানীতে চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপ এবং অপর ৫টি সংগঠন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের মুদ্রণ, প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রপ্তানিকারকদের বন্ড সুবিধা অব্যাহত রেখে বাণিজ্যিকভাবে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে কাগজ পণ্য আমদানি করার সুযোগ দিলে
বন্ডের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ হবে ও বাজার স্থিতিশীল হবে। তাতে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং মুদ্রণ শিল্প আরো বিকশিত হবে।
গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আটক করা কাগজ পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, সেলফ কপি পেপার, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার এবং পেপার বোর্ড। বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কাগজ পণ্য এভাবে খোলাবাজারে বেচে দেয়ার ফলে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বলে অনুমান বৈধ ব্যবসায়ীদের। তারা বলেছেন, বন্ডের কাগজ আমদানি ও ব্যবহারের ওপর সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। বন্ডের কাগজ কিভাবে বন্দর থেকে খালাস হয়ে খোলাবাজারে যাচ্ছে, সেটা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব কাস্টমসের। উচ্চ হারে শুল্ক থাকায় এ শিল্পের ব্যবসায়ীরা অব্যাহতভাবে লোকসানের মুখে রয়েছে। কাঁচামাল হিসেবে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইডিস বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ এডেহেসিভ পেপারের বিপুল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এই পণ্যগুলো দেশে উৎপাদন হয় না। কিছু কাগজের মিল কারখানা রয়েছে, যারা শুধু কাঁচামাল হিসাবে সেগুলোতে শুধুমাত্র ছাপা ও লেখার কাগজ, নিউজ প্রিন্ট, মিডিয়া ও লাইনার পেপার, সিগারেট পেপার, টিসু পেপার ও নি¤œ মানের বোর্ড উৎপাদন করে। তাই অন্যান্য দেশীয় শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে যে হার বিদ্যমান আছে, মুদ্রণ শিল্পেও সেই হারে শুল্ক আরোপ করে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট