চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আনোয়ারার ৩ জয়িতা বুলু উর্মী নাহার

এম আনোয়ারুল হক, আনোয়ারা

২৩ জুন, ২০১৯ | ১:০৫ পূর্বাহ্ণ

‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কার্যক্রমে আনোয়ারার মনোনীত তিনজন হলেন বুলু আকতার (৫৫), উর্মী আকতার (৩০) ও নুরুন নাহার বেগম (৩৬)।
উপজেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার অধীনে সফলতা কার্যক্রম কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পর জয়িতা হিসাবে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যক্তি জীবনে তারা পিছিয়ে পড়ে পুনরায় ঘুরে দাঁড়িয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। জীবনে হার না মেনে জয় যারা ছিনিয়ে আনেন তারাইতো জয়িতা।
বুলু আক্তার: আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া ইউনিয়নের বাথুয়া পাড়া গ্রামের মৃত আবদুস সালামের স্ত্রী বুলু আকতার। ২০০০ সালে আর্থিক অবস্থা সচ্ছল না থাকায় বিনা চিকিৎসায় তার স্বামী মারা যান। ছোট ছেলে সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েন বুলু আকতার। অভাবের সংসারে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া। শেষ পর্যন্ত অন্যের ঘরে গৃহস্থী কাজ শুরু করেন তিনি। রাতদিন পরিশ্রম করে ছেলে মেয়েদেরকে আগলে রেখে দুই মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করেন। বড় ছেলে দিন মজুরের কাজ করলেও ছোট মেয়ে অংশ নেবে এবারের এসএসসি পরীক্ষায়। নিজের উপার্জিত অর্থে নিজের ছেলে-মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করার অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বুলু আকতার।
উর্মী আকতার: উপজেলার আবুল বশর দফাদরের মেয়ে উর্মী আকতারের জন্ম হাইলধর ইউনিয়নের হেটিখাইন গ্রামে। অল্প বয়সে উর্মী আকতার পোলিওতে আক্রান্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডান ও বাম পা। পাঁচ-ভাই বোনের মধ্যে উর্মী সবার ছোট। চোখেমুখে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল উর্মীর। স্কুলের শুরু থেকে একাকী ও অসহায় জীবন কেটেছে উর্মীর। তার কোন বন্ধু-বান্ধব ছিল না। কেউ তার সাথে স্কুলে যেতে চাইতো না। শারীরিক অবস্থার কারণে উর্মীর মা-বাবাও তাকে স্কুলে পাঠাতো না। পারিবারিক অসহযোগিতা ও অবহেলার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে উর্মী। পরিবারের কোন আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছে বেড়াতে গেলে তাকে কেউ সাথে নিত না। বাইরে যেতে ভয় পাওয়া উর্মী এখন অর্থনৈতিকভাবে নিজে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অন্য প্রতিবন্ধীদেরও সাহায্য করে যাচ্ছেন। একটি বেসরকারি সংস্থা সংশপ্তকের সহায়তায় ঢাকায় মাত্র ২৮ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে উর্মী বাড়ি ফিরে এলাকার অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিত করে সংগঠন সৃষ্টির জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রশিক্ষণটি উর্মীর জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। প্রশিক্ষণটি উর্মীকে ঘর থেকে বের হওয়ার এবং নিজের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করার সাহস দিয়েছে। প্রতিবন্ধীদের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে পরিবার ও এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ শুরু করেন। এলাকার মানুষ তার অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখে বিস্মিত হন। উর্মী দর্জি প্রশিক্ষণ, গবাদি পশু পালন প্রশিক্ষণও লাভ করেন। আয়ের জন্য সংশপ্তক থেকে একটি সেলাই মেশিন পান। নিজের ঘরে দর্জি দোকান দিয়েছেন। হুইল চেয়ারের মাধ্যমে চলাফেরা করেন। সেলাই কাজের আয় দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন উর্মী। উর্মীর এ অবস্থা দেখে পরিবারের লোকজনও তার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করছে না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারের ব্যাপারে আলোক দিশারী নামের একটি সংগঠন নিয়ে সচেতনতার লক্ষ্যে কাজ করছে উর্মী।
নুরুন নাহার বেগম: সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখা নারী ইউপি সদস্যা নুরুন নাহার বেগম বারখাইন গ্রামে ১৯৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তাকে মাহাতা গ্রামের শহীদের সাথে বিয়ে দেন অল্প বয়সেই। তবে বাবার মতো সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন তিনিও। ২০১১ সালে পরৈকোড়া ইউনিয়নের মাহাতা ৫ নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্যা নির্বাচিত হন। সমাজে উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের অবদানস্বরূপ পরবর্তীতে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইউপি সদস্যা নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি নারীদের বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্দেশ্যে ৩টি দল গঠন করেছেন। এলাকায় নারীদেরকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, দুস্থ ও গরিব মহিলাদের সেলাই মেশিন বিতরণসহ আরো উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। উপজেলার বিভিন্ন তথ্য, প্রশিক্ষণের খবরাখবর ইত্যাদি উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছে দেন তিনি। বিভিন্ন এনজিওর সহায়তায় মহিলাদের উন্নয়নে কাজ করছেন। উপজেলা যুব উন্নয়নের সহায়তায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়–য়া মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট