চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম কারাগার: খুনের আসামি নিখোঁজে তোলপাড়

নাজিম মুহাম্মদ

৮ মার্চ, ২০২১ | ৫:৪৭ অপরাহ্ণ

খুনের মামলার আসামি ভাসমান ফরহাদ হোসেন রুবেল নিখোঁজে তোলপাড় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের পঞ্চম তলায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বন্দী ছিলেন রুবেল। ২০১৮ সালে দুটি ও ডবলমুরিং থানায় ২০১৯ সালে একটি অস্ত্র মামলায় কারাভোগ করেছেন রুবেল। সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান রুবেল। মামলায় বর্তমান ঠিকানায় তাকে ভাসমান উল্লেখ করা হয়েছে।

কারাগার থেকে হাজতি আসামি রুবেল নিখোঁজের ঘটনায় চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার ও ডেপুটি জেলারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বরখাস্ত করা হয়েছে দুই কারারক্ষীকে। সহকারী প্রধান কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়েছে। কারাঅভ্যন্তর থেকে রুবেলের হাওয়া হয়ে যাবার ঘটনা তদন্তে কারা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ঘটনার খবর শুনে শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম এসেছেন। তাঁরা ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গতকাল (রবিবার) বিকেলে স্বরাষ্ট্রসচিব শহীদুজ্জামানও চট্টগ্রাম কারাগার পরিদর্শন করেছেন। রুবেল নিখোঁজের ঘটনায় শনিবার রাতে জেলার রফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগরে উপ-কারামহাপরিদর্শক ফজলুল হক জানান, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ও ডেপুটি জেলারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জেলার রফিকুল ইসলামকে কারা অধিদপ্তরে এবং ডেপুটি জেলার আবু সাজ্জাদকে চট্টগ্রাম বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। সহকারী প্রধান কারারক্ষী কামাল হায়দারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এছাড়া সহকারী প্রধান কারারক্ষী মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া ও কারারক্ষী মো. নাজিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

খোঁজনিয়ে জানা যায়, সদরঘাট থানার অন্য একটি মামলায় ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন ফরহাদ হোসেন রুবেল। সেই সময় কারাঅভ্যন্তরে নালায় প্রায় দুইদিন লুকিয়েছিলেন ফরহাদ। পরে তাকে অনেকটা অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেছিলো কারাকর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে যে কয়দিন কারাগারে ছিলেন তাকে পায়ে ডা-াবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিলো।

দুই তদন্ত কমিটি : কারাগারের ভেতর থেকে রুবেলের হাওয়া হয়ে যাবার ঘটনা তদন্ত করতে কারা অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারা অধিদপ্তরের কমিটিতে খুলনা বিভাগরে উপ-কারা মহাপরিদর্শক ছগির মিয়াকে প্রধান করা হয়েছে। বাকি দুই সদস্য হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল সুপার ইকবাল হোসেন ও বান্দরবান জেলা কারাগারের জেলার ফোরকান ওয়াহিদ।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির প্রধান ছগির মিয়া জানান, তদন্ত কমিটির বিষয়টি ইতিমধ্যে আমাকে অবহিত করা হয়েছে। সোমবার (আজ) থেকে আমরা তদন্ত কাজ শুরু করবো। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান জানান, বন্দি নিখোঁজের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন, একজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও একজন ডেপুটি জেলার। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোমিনুর বলেন, শনিবার থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রামে অবস্থান করছে। তাঁরা ইতিমধ্যে কারাগার পরিদর্শন করেছেন। গতকাল (রবিবার) স্বরাষ্ট্রসচিব চট্টগ্রাম কারাগার পরিদর্শন করেছেন।

মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে : রুবেল নিখোঁজের ঘটনায় শনিবার রাতে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম। এতে বলা হয়েছে, ফরহাদ হোসেন রুবেল গত ৯ ফেব্রুয়ারি একটি হত্যা মামলার আসামি হিসাবে আদালত থেকে কারাগারে আসেন। তিনি কারাভ্যন্তরে কর্ণফুলী ভবনের ৫ম তলায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে হাজতি ও কয়েদিদের সাথে থাকতেন। ৬ মার্চ ভোর সাড়ে ছয়টায় সহকারী প্রধান কারারক্ষী কামাল হায়দার ওয়ার্ডে থাকা হাজতি ও কয়েদী গণনা করতে গিয়ে দেখতে পান হাজতি রুবেল ওয়ার্ডে নেই। ওয়ার্ডে থাকা কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন জানান, রুবেল ভোর ৫ টা ১৫ মিনিটে ওয়ার্ড থেকে বের হয়েছে। সহকারী কারারক্ষী ইউনুস মিয়াও একই কথা জানান। পরে খোঁজাখুজি করে হাজতি রুবেলকে আর পাওয়া যায়নি। কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, আমরা ইতিমধ্যে কারাভ্যন্তরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সোমবার (আজ) ফের ঘটনাস্থলে যাবো। কারাগারে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় রুবেলের পালানোর কোন ফুটেজ প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি।

যে মামলায় কারাগারে রুবেল : গত ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আবু কালাম ওরফে কালু (২৭) নামে এক যুবক। এ ঘটনায় ফরহাদ হোসেন রুবেলকে একমাত্র আসামি করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত কালামের মা মর্জিনা বেগম। ছুরিকাঘাতের ঘটনার জের ধরে ছুরিকাঘাতের ঘটনার ছয় ঘণ্টার মাথায় হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে রুবেলকে আটক করেছিলো পুলিশ। কালামকে প্রথমে ছুরিকাঘাত করা হয়। আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। ঘটনার ছয় ঘণ্টার মাথায় কালাম মারা যান। এ ঘটনায় নিহত কালামের মা মর্জিনা বেগম (৪৫) বাদি হয়ে সদরঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় রুবেলকে আসামি করা হয়। তিনি নরসিংদীর রায়পুরা থানার মীরের কান্দি বাড়ির শুক্কুর আলী ভা-ারীর ছেলে। নগরীর ডবলমুরিং থানার আসকারাবাদ মিস্ত্রী পাড়ায় ভাসমান অবস্থায় বসবাস করেন। সেখানে তার সুনির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই

গত ৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত আনুমানিক সাড়ে বারোটায় বন্ধু ইমন, আনোয়ার ও সাগর মিলে ডিটি রোডের রেলবিটে বসে মাদক (গাঁজা) সেবন করছিলেন। এ সময় কালাম রেলবিট ধরে হেঁটে আসছিলেন। তাকে লক্ষ্য করে টর্চ মারলে তিনি কথা কাটাকাটি করেন। এরমধ্যে আড্ডায় থাকা তিন বন্ধু চলে যান। রাত দেড়টার দিকে ডিটি রোডের রেলওয়ে মার্কেটের ইউনুস কোম্পানির ওয়ার্কসপ গলির ভেতরে কালামের সাথে ফের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কালামকে বুকের বামপাশে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ফরহাদ। ভোরেই ফরহাদকে মিস্ত্রিী পাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সদর ঘাট থানায় ২০১৮ সালে দুটি ও ডবলমুরিং থানায় ২০১৯ সালে একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে।

 

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট