চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দেশে করোনার এক বছর: পূর্বকোণ ছিল সম্মুখ সারিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক 

৮ মার্চ, ২০২১ | ২:৩১ অপরাহ্ণ

শিশুর মুখে অক্সিজেন মাস্ক। চাচার কাঁধে সিলিন্ডার।  শিশুপুত্রকে বুকে জড়িয়ে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছিলেন বাবা। পেছনে ছুটছেন মা-ও। কোনো নাটক-সিনেমার গল্প নয় এটি, গেল বছর করোনা সংক্রমণকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা একটি জীবন্ত কাহিনী। নাড়িছেঁড়া ধনের চিকিৎসার জন্য কী প্রাণান্তর চেষ্টা। এই দুঃসময়ে চলছিল অক্সিজেন-হাহাকার। অক্সিজেন সেবা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন অনেকেই।

দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নিয়ে চিকিৎসাসেবার এই ভঙ্গুর চিত্র তুলে ধরছে পূর্বকোণ। সংবাদ প্রকাশের এক পর্যায়ে সংবাদপত্রের বাইরে ভিন্ন রূপে হাজির হয় পূর্বকোণ। সংবাদ আর পেছনের সংবাদ-সংবাদের বিশ্লেষণ। সংবাদ ছাড়াও অন্য এক মানবিক পূর্বকোণকে দেখে চট্টলাবাসী। ‘শ্বাস নিতে চায় চট্টগ্রাম’ পূর্বকোণের এই স্লোগান নাড়া দিয়েছিল দেশবাসীকে। অক্সিজেনের তীব্র সংকটকালে এই স্লোগান নিয়ে চট্টগ্রামবাসী, বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও কর্পোরেট হাউসের কাছে আকুলতা প্রকাশ করে। কখনো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় পরামর্শ, কখনো বিশেষজ্ঞ প্রশ্নোত্তর, কখনো বা  মানবতার আকুলতা-দেশের দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায় পূর্বকোণ।

‘সচেতনতাই আপনাকে রাখবে রোগমুক্ত’ সচেতন ও নানা দিকনির্দেশনামূলক প্রচারণা দিয়ে শুরু হয় পূর্বকোণের করোনানামা।

প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।

করোনা সংক্রমণকালে চিকিৎসাব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। ডাক্তার ও নার্সসহ সবার মাঝে অজানা শঙ্কা ও আতঙ্ক ছিল। উন্নত বিশ্ব ও চিকিৎসাসেবা নিয়ে হিমশিম খেয়েছিল। সেই মুহূর্তে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল করার প্রস্তাব দিয়ে রূপরেখা দেয় পূর্বকোণ। একশ শয্যার করোনা হাসপাতালে রূপরেখা, সুপারিশ ও আন্তর্জাতিক মানচিত্র তুলে ধরা হয় পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে।

করোনার সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ যোগাতে পূর্বকোণ সেন্টারের সামনে হাততালি কর্মসূচি পালন করা হয় ১২ মে। সেই কর্মসূচিতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিশিষ্টজনেরাও অংশ নেন।

করোনা সংক্রমণের শুরুতেই ছিল অক্সিজেন সংকট। সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অনেকেই। করোনায় আক্রান্ত ধনাঢ্য ও বিত্তশালী পরিবারের দুই সহোদর হাইফ্লো নজেল ক্যানুলার অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এক ভাই। অক্সিজেন সংকটে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল চট্টগ্রামবাসীর। ‘শ্বাস নিতে চায় চট্টগ্রাম’ মাস্টহেডে তিন মাস ছাপা হয় এই স্লোগান। ব্যাপক সাড়া মিলে এ আহবানে অনেকেই তীর্ষক চোখে দেখেছিল। তারপরও থেমে থাকেনি পূর্বকোণ। দেশ-বিদেশের অনেক সামর্থ্য ও বিত্তবান ব্যক্তি, সংস্থা অক্সিজেন সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এই আহবানে সাড়া দেন এক স্কুল শিক্ষক। মিরসরাই থেকে সাইকেল চালিয়ে অক্সিজেন সিলিণ্ডার নিয়ে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। ওই শিক্ষক ছাড়াও অনেক শিল্পপতি ও ধনাঢ্য ব্যক্তি অক্সিজেন সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্র ছিল আরও ভয়াবহ। এক চিত্রে দেখা যায়, ২৫ জন রোগীর স্থানে ঠাঁই নিয়েছিল ৯০ জন। অক্সিজেন সাপোর্ট ছিল ১৮-২০ জনের। অক্সিজেন পোর্ট নিয়ে কাড়াকাড়ি অবস্থা। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় অক্সিজেন সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। মানবতার ডাক দেয় পূর্বকোণ। এই দুঃসময়ে চট্টগ্রামের বিগ বিজনেস হাউসগুলোর প্রতি বিশেষ আহবান ছিল ‘চট্টগ্রামবাসীর পাশে থাকার এখনই সময়’। পুরো প্রথম পাতাজুড়ে জানানো হয় এই আহবান। এতে বেশ সাড়া পড়ে। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন চট্টগ্রামের বিত্তশালী, বড় কর্পোরেট হাউস, শিল্প গ্রুপ ও বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ও প্রবাসী শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ ‘শ্বাসের আশ্বাস’ স্লোগানে এগিয়ে আসেন। চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু হয় অক্সিজেন সহায়তায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

করোনা সংক্রমণকালে পূর্বকোণের এই মানবিক উদ্যোগ দেশ-বিদেশে সাড়া পড়েছিল। অক্সিজেন সংকট, সিলিন্ডার সহায়তা, করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালের রূপরেখা ছাড়াও দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম নিয়ে করোনাকালীন চিকিৎসা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্বও শুরু করেছিল পূর্বকোণ। এই টিমে ছিল কিডনি ও ডায়ালাইসিস বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. প্রদীপ কুমার দত্ত, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অশোক কুমার দত্ত, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. খন্দকার এ কে আজাদ, চট্টগ্রাম কার্ডিওলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. এ কে এম মঞ্জুর মোরশেদ, ঢাকার মহাখালী আইইডিসিআরের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ডা. আসিফ মুজতাবা মাহমুদ, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আফতাব উজ্জামান, মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মো. শফিউল হাসান, ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মো. ইফতিখার হোসেন খান এবং নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইএনটির প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর ডা. মাহমুদুল হাসান। এই টিমের মাধ্যমে প্রতিদিন রোগীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ছাপা হয়।

করোনা সংক্রমণের পর আসে করোনা ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়। মানুষের দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করতে করোনা ভ্যাকসিনমানা প্রকাশ করে পূর্বকোণ। এতে ভ্যাকসিন বিষয়ে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। টিকা নেওয়ায় উদ্বুদ্ধ করা হয়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট