চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রাম ওয়াসা: উৎপাদন দ্বিগুণ, লোকবল অর্ধেক

মোহাম্মদ আলী 

৬ মার্চ, ২০২১ | ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার সর্বশেষ ২০১৬ সালে ৩১ জানুয়ারি অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদের সংখ্যা এক হাজার ৪৮। কিন্তু বর্তমানে লোকবল রয়েছে ৬৪৯ জন। এর মধ্যে শূন্য পদ রয়েছে ৩৯৯টি। অর্থাৎ দুই তৃতীয়াংশের কাছাকাছি লোকবল সংকট রয়েছে এ সেবা সংস্থায়। বিশাল এই শূন্যতায় ওয়াসায় প্রতিদিনের কর্মকা-ে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

সেবা সংস্থাটির ২০১০ সালে পানি উৎপাদন হতো দৈনিক প্রায় ১৮ কোটি লিটার। ওই সময়ে ওয়াসার গ্রাহক সংযোগ ছিল ৪৯ হাজার ৪৭৩টি। লোকবলের পদ ছিল ৭২১টি। তাতে শূন্য ছিল প্রায় ২০০টি পদ। এরপর ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের ১৪তম সাধারণ সভায় অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত সেটআপ (অর্গানোগ্রাম) কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫৯টি। এর ৬ বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে ওয়াসার পানি উৎপাদন বৃদ্ধি পায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ৩৬ কোটি লিটার।  গ্রাহক সংযোগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭৯ হাজার ৫৭৩টি। অথচ এ সময়ে ওয়াসার লোকবলের সংখ্যা সে হারে বাড়েনি। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের ৩২তম সাধারণ সভায় অনুমোদিত দ্বিতীয় সংশোধিত সেটআপ (অর্গানোগ্রাম) অনুযায়ী পদের সংখ্যা বাড়ে ১০৪৮টি।

ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, লোকবল সংকটে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। অধিকাংশ কর্মকর্তাকে নিজের কাজের পাশাপাশি অতিরিক্ত দুই থেকে তিনটি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে কোন কোন কর্মকর্তাকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনও দায়িত্ব পালন করতে হয়।

ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রথম অর্গানোগ্রাম তৈরি হয় ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট। ওই সময়ে ওয়াসার লোকবলের পদ ছিল ৭২১ জন। এর ৫ মাসের ব্যবধানে ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় অর্গানোগ্রামে কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ ছিল ৯৫৯টি। ১৯৮৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুল হক কমিটি কর্তৃক ওয়াসার সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করা হয়। ২০১৩ সালে এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়।

সূত্র আরো জানায়, ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে উৎপাদন শুরু করে শেখ হাসিনা শোধনাগার-১। এটির দৈনিক উৎপাদন ১৪ কোটি লিটার। এর দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালের নভেম্বরে মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্পটি চালু করে ওয়াসা। ওই প্রকল্পে দৈনিক পানি উৎপাদন হয় ৯ কোটি লিটার। অথচ এ দুইটি প্রকল্প চালু হওয়ার আগে ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদন হতো মাত্র ১৫ থেকে ১৮ কোটি লিটার। বর্তমানে চালু হওয়া প্রকল্প দুইটি থেকে পানি মিলছে দৈনিক ২৩ কোটি লিটার। এ অবস্থায় পানি উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি হলেও ওয়াসার লোকবলের সংখ্যা বাড়েনি। আগের লোকবল দিয়ে চলছে ওয়াসার কর্মকা-। এরমধ্যে আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এতে কাজের চাপে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে ওয়াসার পানি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কাজের পরিধি কয়েক গুণ বেড়েছে। রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও হাটহাজারীর মদুনাঘাটস্থ শেখ রাসেল পানি শোধনাগার উৎপাদনে যাওয়ার ফলে নতুন করে বিপুল সংখ্যক লোকবল প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এছাড়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে শেখ হাসিনা সরবরাহ প্রকল্প-২ এর কাজ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এটিও এ বছরে উৎপাদনে যাবে। এর মধ্যে চলমান রয়েছে ভা-ালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ। সুতরাং বিশাল এ কর্মযজ্ঞ চালাতে ওয়াসার আরো লোকবল প্রয়োজন হবে। এ নিয়ে ওয়াসা এক হাজার ১১৯ জনের নতুন একটি অর্গানোগ্রাম তৈরি করেছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের ৫৮তম সাধারণ সভায় তৃতীয় সংশোধিত সেটআপ (অর্গানোগ্রাম) অনুমোদিত হয়। এখন পর্যায়ক্রমে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। ’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট