চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পিতার অভিযোগ, তদন্তে পুলিশ

অন্তঃসত্ত্বা রুমাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে

নিজস্ব সংবাদদাতা , বাঁশখালী

২৯ এপ্রিল, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী গন্ডামারা মাদ্রাসায় পড়–য়া ছাত্রী রুমা আকতার (১৬) এর মৃত্যুর রহস্য খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। গত শনিবার রাতে নিহতের পিতা কৃষক নুরুল আমিন তৌহিদুল আলম নামে এক ব্যবসায়ী সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে তার কন্যা অন্তঃসত্ত্বা রুমাকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ থানায় দাখিল করেছে। গতকাল রবিবার পুলিশ মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেশীদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এ সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক ছিলেন। মৃত্যুর ১৮দিন পর এলাকার মানুষ সত্য ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছে পুলিশকে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই রুমার লাশ দাফন করা হয়। মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গন্ডামারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ঘোনা দক্ষিণ পাড়ার নুরল আমিনের মাতৃহারা কন্যা রুমা আক্তার প্রতিবেশী বজল আহমদের ছেলে তৌহিদুল আলম নামের এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে সম্পর্ক থেকে তাদের মধ্যে অবৈধ মেলামেশাও ছিল। সেই মেলামেশাতে রুমা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে বিয়ে সম্পাদনেরও কথা ছিল বলে প্রতিবেশীদের মধ্যে গুজব ছিল। বিয়ে নিয়ে রুমা আকতার ও তৌহিদুল আলমের মধ্যে ঝগড়া বিবাদও হয়। এ ঘটনার জের ধরে গত ৯ এপ্রিল ভোর রাতে নুরুল আমিনের কন্যাকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে খুন করে পুুকুর পাড়ে গাছের ডালে হত্যাকারীরা ঝুলিয়ে রাখে। প্রতিবেশীরা এলাকায় জ্বিনে ধরে হত্যা করেছে বলে প্রচার

করেন। অভিযোগে আরো জানা যায়, তৌহিদুল ইসলাম নগরীতে থাকাবস্থায় হোটেলে রাত্রিযাপন কালে অপর ১ জন মহিলার সাথে মেলামেশা অবস্থায় ধরা পড়ে বিয়েতে বসেন। নুরুল আমিনের কন্যা রুমা আকতারের সাথে তৌহিদুল ইসলামের মধ্যে হোটেলে অপর মেয়ের সাথে সম্পর্ক এবং বিয়ে নিয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়। এই বিবাদের জের ধরে শ্বাস রোধ করে তাকে খুন করে ঝুলিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
স্থানীয় মোহাম্মদ ফোরকান ও হোছন আহমদ বলেন, মা হারা রুমা আকতারকে প্রতিবেশী কয়েক ব্যক্তি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে বলে এলাকায় গুজব রটে যায়। আমরা এই গুজবকে বিশ্বাস করতে পারিনি। তৌহিদুল ইসলাম নামে এক ছেলের সাথে ঐ মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ছেলেটি সম্প্রতি অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করেছে। এর পরেই কিশোরী রুমা আকতারের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। নিহতের পিতা নুরুল আমিন বলেন, নামাজ শেষে বাড়িতে এসে দেখি সকালে কান্নাকাটি করছে প্রতিবেশীরা। জ্বিনে মেরে ফেলেছে আমার মেয়েকে এই বলে প্রচার করে তারা। কিন্তু দীর্ঘদিন পর জানতে পারি রুমার সাথে প্রতিবেশী তৌহিদুল আলমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে করবে বলে মেলামেশাও করেছে। আমার মেয়েটি গর্ভবতী হয়েছিল বলে শুনেছি। এখন ধারণা আমার মেয়ে বিয়ের জন্য ছেলেকে চাপ দেয়াতে খুন করা হয়েছে।
গন্ডামারার ইউপি সদস্য কহিনুর আক্তার বলেন, রুমা আকতার এক সময় মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত। মায়ের মৃত্যর পর থেকে সংসারের হাল ধরে সে। এজন্য লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। রুমার মৃত্যুর ঘটনাটি প্রথমে জ্বিনে ধরে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার হয়েছে, সকালে প্রতিবেশীরা এসে দেখেও গেছেন। লাশ দাফন ও হয়েছে। এখন এলাকায় গুজব রটে গেছে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
বাঁশখালী থানার এস আই হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, মেয়েটির পিতা নুরুল আলম থানায় অভিযোগ দেয়ার পর ঘটনাস্থল হতে এলাকাবাসীর মৃত্যুর বিষয় নিয়ে স্বাক্ষী চলছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা এলাকায় নেই। তদন্ত করলেই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। এখানে কারা জড়িত তদন্তের বিষয় রয়েছে। কিশোরী রুমা আকতারের পিতা নুরুল আমিন খুবই গরীব। রুমার মৃত্যু যদি খুনের ঘটনা হয় তাহলে তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনা কখনো চাপা থাকবে না।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, অভিযোগটির তদন্ত চলছে। মামলার পর আদালতের নির্দেশ পেলেই লাশ উত্তোলন করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট