চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সড়কে অকাতরে ঝরছে প্রাণ

নাজিম মুহাম্মদ  

৪ মার্চ, ২০২১ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

সড়কে অকাতরে ঝরছে প্রাণ। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড লোহাগাড়া-ঈদগাহ ও টেকনাফে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন দুই জন নিহত হয়। সড়কে যানবাহন তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত হাইওয়ে পুলিশ ও পরিবহন নেতাদের দাবি- দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে সিএনজি, মিনি পিকআপ ও লবণবাহী ট্রাকের পানিতে সড়ক পিচ্ছিল হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমীর ফারুক জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে অধিকাংশ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় রাতে। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা হচ্ছে এমনটি মনে করা হচ্ছে। দিনের বেলায় স্পিড মিটারের কারণে গাড়ি চালকরা গতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। রাতের বেলায় স্পিড মিটার ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এ সুযোগে চালকরা দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত হয়।   শনি ও রবিবার দুই দিনে সীতাকুণ্ড, ঈদগাঁ ও টেকনাফে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক, স্কুলছাত্রী, পথচারীসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন।

সীতাকু-ে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক ও স্কুল ছাত্রীসহ ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রবিবার ও শনিবার রাতে উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। রবিবার সকাল ১০টায় সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি এলাকায় বাসে উঠার সময় শামস তাহিয়াদ মৌনতা (১৫) নামের শিক্ষার্থীকে একটি লোকাল বাস সজোরে ধাক্কা দিলে সে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত চট্টগ্রামের মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১১টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মৌনতা উপজেলার শীতলপুর কাসেম জুট মিলস এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা মো. সেলিম উল্লাহর মেয়ে। সে উপজেলার ভাটিয়ারীর বিএমএ হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী।

এ ঘটনার পর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় উপজেলার কদমরসুল এলাকায় চট্টগ্রামমুখী একটি ট্রলি একটি রিক্ধসঢ়;শাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রিক্শাচালক মহাসড়কের উপর ছিটকে পড়েন। এতে মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ব্যক্তির নাম পরিচয় জানা যায়নি।

গত শনিবার রাত ৮টার দিকে সীতাকু-ের সিরাজ ভূঁইয়া রাস্তার মাথা এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন ফকিরহাট সাদেক মস্তান (র.) হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম জাফর (৫১)।

গত শনিবার সকাল ৭টায় কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে পিকআপ ও ডাম্পারের  মুখোমুখি সংঘর্ষে পথচারী নিহত হয়। সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ডুলাফকির মাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সালাহ উদ্দিন বাবুল (৪০) পূর্ব-নাপিতখালী এলাকার আলী আহমদের ছেলে।

গত রবিবার সকাল আনুমানিক পৌনে ১১টায় অফিসিয়াল কাজে টেকনাফ থেকে শামলাপুর যাওয়ার পথে বাইক দুর্ঘটনায় আহত হন ওষুধ বিপণন প্রতিষ্ঠানের কর্মী মেহেদী হাসান।

২০ ফেব্রুয়ারি পৌনে আটটায় মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর অজ্ঞাতনামা গাড়ি ধাক্কা দিলে এক মহিলার মৃত্যু হয়। একইদিন রাত ১১টায় মিরসরাই সিরাজ মিঞা রাস্তার মাথা এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় ২ হেলপার মারা যায়।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় চকরিয়া উপজেলার চুনতির জাঙ্গালিয়ায় যাত্রীবাহী মারছা বাসের সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন- চকরিয়ার পূর্ব ভেওলার সিকদার পাড়ার মো. লোকমানের স্ত্রী রীনা আক্তার (১৮) ও রামুর পূর্ব জোয়ারিয়ানালা এলাকার আলতাফ আহমদের কন্যা ছেনু আরা বেগম (২১)।

আরকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের লোহাগাড়া অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি রহিম বকসু জানান, কক্সবাজার বর্তমানে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা-যাওয়া করছে অসংখ্য দূরপাল্লার বাস। চলতি মৌসুমে লবণভর্তি ট্রাকের পানিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়। রহিম বকসু বলেন, লোহাগাড়া-সাতকানিয়া-চন্দনাইশ অংশে অসংখ্যা মিনি পিকআপ ও সিএনজি চালিত ট্যাক্সি চলাচল করছে। রুট পারমিট ছাড়া এসব চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে চলাচল করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নীরব।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ডে  স্ক্র্যাপবাহী ট্রলির ধাক্কায় এক রিকশাচালক নিহত হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় কদমরসুল ছালেহ কার্পেট মিল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় মিনিট্রাক চাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত ও একজন গুরুতর আহত হন। নিহতরা হলেন- বরইতলীর মাহমুদনগর এলাকার নেজাম উদ্দিনের ছেলে মো. ছোটন (২২) ও রামু উপজেলার গর্জনিয়া এলাকার আমির হোসেনের ছেলে শামসুল আলম (২০)। তারা ৩ জনই বানিয়ারছড়া স্টেশনের একটি ওয়ার্কশপের কর্মচারী।

পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি আবারও যাত্রীবাহী এনা বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে চকরিয়ায়। এতে মাইক্রোবাসের চালকসহ ২ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে ইসলামনগর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের মো. হোসেনের ছেলে মাইক্রোবাস চালক এনামুল হক (২৫) ও পেকুয়ার শিলখালির চাঁদ মিয়ার ছেলে মাইক্রোবাসের যাত্রী আবু তালেব (৪২)।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট