চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আগ্রাবাদে জোয়ারে ভোগান্তি

আল-আমিন সিকদার হ

২২ জুন, ২০১৯ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

নৌপথে চলাচল ও মালামাল বহনের সুবিধার্থে পৃথিবীর প্রাচীন (প্রায়) সব নগরী গড়ে উঠেছিল প্রবাহমান নদীর তীরে। তেমনি বাংলাদেশের বন্দর নগরী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম শহরটিও গড়ে উঠেছিল কর্ণফুলী নদীর তীরে। বলতে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জোয়ার নিয়ে এসেছে চট্টগ্রামের এই নদীটি। কেননা প্রতিদিন জোয়ারের সাথে সাথে বিশাল বিশাল বৈদেশিক জাহাজ প্রবেশ করে এই নদীর তীরে গড়ে ওঠা বন্দরে। এই নদীর জোয়ার যেমন একদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল করে তেমনি দুর্ভোগ নিয়ে আসে নদীর পাড়ে বসবাস করা নগরবাসীর জন্য। জোয়ার এলেই তলিয়ে যায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এ নগরীর নিম্নাঞ্চলগুলো। তবে নগরীর অন্যান্য নিম্নাঞ্চলগুলোর তুলনায় জোয়ারে সব থেকে বেশি পানি ওঠে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকাতে। গতকালও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকা। জোয়ারের তোড়ে জমে যায় হাঁটু সমান পানি। দুপুর আড়াইটার দিকে শুরু হওয়া এ জোয়ারে ভাটা লাগে বিকাল ৫টার দিকে। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টার জলাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী এ জোয়ারকে অভিশাপ বলে মন্তব্য করেছে এ এলাকার বাসিন্দারা। আগ্রাবাদ সিডিএ ২১ নম্বর রোডের বাসিন্দা মীর রাজুয়ান বলেন, ‘দুপুর আড়াইটার দিকে শুরু হয় জোয়ার। জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকাতে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এ সময় ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্কুলে, কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন এ জোয়ারের পানি ডিঙিয়ে

যাওয়া আসা করতে হয়। তাছাড়া নদীতে যতক্ষণ জোয়ার থাকে ততক্ষণ আমাদের দুর্ভোগও চলতে থাকে। ভাটা লাগলে আমাদের দুর্ভোগেও ভাটা লাগে। একেতো প্রচ- রোদের বিভীষিকা, তার উপর এই জোয়ারের পানির অভিশাপ। আমরা সিডিএ’বাসি এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই’। ১২ নম্বর রোডের বাসিন্দা খাইরুল আলম সুজন প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষার মৌসুম ছাড়াও নদীতে আসা জোয়ারের পানিতে ভাসতে হয় সিডিএ এলাকায় বসবাসরতদের। পোহাতে হয় দুর্ভোগ। তবে সাধারণ মানুষের বছরের পর বছর সহ্য করা এ দুর্ভোগ নিয়ে এখনো কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। অন্তত জলাবদ্ধতা নিরসনে যে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলো তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করা হলে কিছুটা হলেও জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে জানান এ বাসিন্দা। তবে সাময়িকভাবে এ দুর্ভোগের হাত থেকে হাজারো মানুষকে বাঁচাতে দ্রুত একটি স্লুইস গেট নির্মাণের দাবি জানান তিনি’।
জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের পরিচালক মাঈনুদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকাসহ নগরীর নিম্নাঞ্চলকে জোয়ারের পানি ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি দিতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালের মুখে একটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি বছরের মে মাস থেকে শুরু হয়েছে এ কাজ। রেগুলেটরটিতে থাকবে জাহাজ ও নৌকা প্রবেশের জন্য নেভিগেশন গেট, পানি চলাচলের জন্য ৯টি ড্রেনের মুখ ও ৩টি পাম্পের ব্যবস্থা। জোয়ারের সময় বৃষ্টি পড়লে নগরীতে জমে থাকা পানি এই পাম্প ৩টির মাধ্যমে সেচে ফেলা হবে। আশাকরছি আগামী দুই বছরের মধ্যে এ কাজটির সুফল ভোগ করতে পারবে নগরবাসী’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট