চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঠিকাদারের গাফেলতিতে মরিচ্যা-গোয়ালিয়া-মেরিন ড্রাইভে যোগাযোগ থমকে আছে

রামুতে দৃষ্টিনন্দন সেতু অপূর্ণতায় অকেজো

আরফাতুল মজিদ,  কক্সবাজার

৩ মার্চ, ২০২১ | ২:৩০ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের রামু খুনিয়াপালং ইউনিয়নের গোয়ালিয়া এলাকায় মাত্র ২০ লাখ টাকার সংযোগ সড়কের অভাবে ৫ কোটি টাকার ব্রিজটি ৫ বছরেও চালু হচ্ছে না। ব্রিজটি চালু হলে মেরিন ড্রাইভ-গোয়ালিয়া-মরিচ্যা সড়কে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে। একই সাথে নিরসন হবে রেজু ব্রিজের যানজটেরও।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, ব্রিজটির সংযোগ সড়কের নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য এলজিইডিকে অসংখ্যবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তবে শীঘ্রই এটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা জানান, ‘গোয়ালিয়া ব্রিজটি নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। প্রায় সময় উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। এর প্রেক্ষিতে আমি এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলাপও করেছি’।

ইউএনও বলেন, ‘অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী তাকে জানিয়েছেনও। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করতে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও তাগিদ উঠেছে’।

অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের চরম গাফেলতির কারণেই ব্রিজটির কাজ সম্পাদনের দুই বছরের স্থানে টানা ৫ বছর অতিবাহিত হচ্ছে। তারপরেও কোন কূল কিনারা হচ্ছে না। অথচ মাত্র বিশ লাখ টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়কের কাজটি করে দিলেই মরিচ্যা থেকে এ সড়কে মেরিন ড্রাইভের যোগাযোগ সহজ হয়ে পড়ে। আর মরিচ্যা-গোয়ালিয়া-মেরিন ড্রাইভের যোগাযোগ শুরু হলেই পর্যটন এলাকা রুপসী গোয়ালিয়া এলাকাটিতে উপচে পড়বে পর্যটকে। সেইসাথে মেরিন ড্রাইভের সোনারপাড়া-কোটবাজার সড়কের চাপও কমে যাবে।

জানা গেছে, কক্সবাজারের রামু উপজেলাধীন খুনিয়াপালং ইউনিয়নের গোয়ালিয়া পালং রেজুখালের উপরে মেরিন ড্রাইভ-গোয়ালিয়াপালং-মরিচ্যা সংযোগ ব্রিজটি ২০১৪ সালে ধসে পড়ে। এতে মরিচ্যা-উখিয়া-রামু’র জনগণের সাথে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে কক্সবাজারের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান’র জোর তদবিরের কারণে ব্রিজটি এলজিইডি’র প্রকল্পভুক্ত হয়ে ডিপিপি’র অনুমোদন হয়। এলজিইডি’র বৃহত্তর চট্টগ্রাম সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ৮৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে প্রায় ১৫ শতাংশ নি¤œদরে কাজ দেয়া হয় কিশোরগঞ্জ জেলার বড়বাজার স্টেশন রোডের মেসার্স সাহিলা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে।

অভিযোগ রয়েছে, মূলত লাইসেন্স ভাড়া করে ও অতিরিক্ত নি¤œদর দিয়ে অতি লাভের আশায় কক্সবাজারের এক ঠিকাদার উক্ত কাজটি হাতিয়ে নেন। ২০১৬ সালের ৪ জুলাই বহুল আকাক্সিক্ষত গোয়ালিয়া ব্রিজের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২ বছরের মধ্যে ব্রিজটি চলাচলের উপযোগী করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের গাফেলতি ও অবহেলার কারণে মন্থর গতিতে কাজ চলে। বার বার সময় বর্ধিত করে ৪ বছর সময় ক্ষেপণ করে ব্রিজের ছাদ ঢালাই করলেও সংযোগ সড়কটির অভাবে গত ৫ বছরেও ব্রিজটির কাজ শেষ হয়নি। এতে বিগত ৭ বছর ধরে ব্রিজটির সুফল থেকে এলাকাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে।

গত ২ মাস আগে সর্বশেষ ব্রিজটি পরিদর্শনে আসেন এলজিইডির ঢাকা অফিসের বৃহত্তর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক মো. মহসিন। ১৫ দিনের মধ্যে ব্রিজটি চলাচল উপযোগী করতে তার নির্দেশের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিশ্রুতি দিয়েও গত ২ মাসেও সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজে কোন উদ্যোগ নেননি। এতে ব্রিজটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

এ বিষয়ে এলজিইডির রামু উপজেলা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, একাধিক পত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়ার পরও তারা কর্ণপাত করছে না। তিনি জানান, টেন্ডারে কাজ পাওয়া ঠিকাদারি সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধি আসাদ উল্লাহ নামের একজন তার সব কাজেই কাল ক্ষেপণ করে থাকেন। উক্ত ঠিকাদারের আওতায় মনিরঝিল এবং টাইঙ্গাকাটা এলাকার আরো দুটি ব্রিজের বিষয়েও উঠেছে একই অভিযোগ।

কক্সবাজারের এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘নানা অজুহাতে ঠিকাদারের কাজের বিলম্বের ফলে জনগণেরও ভোগান্তি বাড়ছে এটা সত্যি। তবে একটু টেকনিক্যাল সমস্যাও এখানে রয়েছে। এ কারণে কাজের বিলম্ব। তবে শীঘ্রই সংযোগ সড়কটির কাজ শেষ করা হবে’।

স্থানীয় খুনিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ জানান, ব্রিজটি অকেজো থাকায় দীর্ঘ ৭ বছর ধরে পর্যটকসহ হাজার হাজার জনগণের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অসংখ্যবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেওয়ার পরও কাজটি শেষ না হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। রামু উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় পরিষদে এ বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্তও হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট