চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট: কর্তৃত্ব নিয়ে দু’সংস্থার কাড়াকাড়ি

নরোত্তম বনিক, সন্দ্বীপ

৩ মার্চ, ২০২১ | ১২:৫২ অপরাহ্ণ

দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের প্রধান যাতায়াত রুট কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে জর্জরিত সন্দ্বীপের ৪ লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে দুই সংস্থার টানাটানিতে উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন হয়নি নৌ রুটটিতে। উপরন্তু বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা রাজস্ব আয় এনে দেওয়া এই নৌ রুটের যাত্রীসেবার মান নিয়ে চরম অসন্তোষ রয়েছে সন্দ্বীপের ৪ লাখ মানুষের। ভৌগোলিক কারণে দেশের মূল ভূখন্ড  থেকে আলাদা হওয়ায় সন্দ্বীপ থেকে পারাপারের একমাত্র ব্যবস্থা নৌপথ-নির্ভর। বর্তমানে সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটে জেলা পরিষদের ৬টি ঘাট চালু রয়েছে। 

২০১৩ সালের আগে কুমিরা গুপ্তছড়া ফেরীঘাট ইজারা দিত বিআইডব্লিউটিএ। ২০১৩ সালে এই ঘাট নিয়ে জেলা পরিষদের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। জটিলতা নিরসনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্যোগে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডের দুই সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে  জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লি­উটিএ কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর  জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লি­উটিএ এর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৬ বছরের জন্য কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট পরিচালনা করবে জেলা পরিষদ।  জেলা পরিষদ টার্মিনাল ও গ্যাংওয়ে ব্যবহার করার বিনিময়ে বার্ষিক ৪০ লাখ টাকা বিআইডব্লি­উটিএকে দিবে। চুক্তিতে আরো শর্ত থাকে, ৩ বছর পর টাকার পরিমাণ বাড়তে পারে।  সেই শর্ত অনুযায়ী পরবর্তী ৩ বছর  জেলা পরিষদ বার্ষিক ৫৫ লাখ টাকা করে বিআইডব্লি­উটিএকে দিয়েছে।

২০২০ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার ফেনীর মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন নদী  থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত পুরো এলাকাকে নৌ-বন্দর ঘোষণা করে। পাশাপাশি বিআইডব্লি­উটিএকে নৌ-ঘাটগুলো পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের সাথে  যেসব ঘাট নিয়ে বিরোধ আছে তার সবগুলোর মালিকানা বিআইডব্লিউটিএ  দেওয়া হয় আন্তমন্ত্রণালয়ের এক  বৈঠকে। এ কারণে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট নিয়ে  জেলা পরিষদের সাথে বিআইডব্লি­উটিএ চুক্তির নবায়ন করেনি। কিন্তু জেলা পরিষদও তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি। উল্টো এ  নৌ ঘাটের মালিকানা ধরে রাখতে মন্ত্রণালয়ে তববির করেছেন তারা।

জেলা পরিষদ ঘাট পরিচালনার অর্ধযুগে যাত্রীদের নিরাপদ নৌযান ও উঠা-নামার কষ্ট দূর করতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে যাতায়াত দুর্ভোগ নিয়ে সন্দ্বীপবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন আন্দোলন করা হলেও এসব বিষয়ে বরাবরই উদাসীন ছিলেন তারা। এসব কারণে বিআইডব্লি­উটিএ’র অধীনে এই রুটে নৌ যাতায়াত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি আছে স্থানীয় পর্যায় থেকেও।

বিআইডব্লি­উটিএ’র চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক বলেন, ‘বিআইডব্লি­উটিএ’র সাথে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ছয় বছর ধরে কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটটি পরিচালনা করছে জেলা পরিষদ। কিন্তু ২০২০ সালের ১ মার্চ ফেনী জেলার সোনাগাজী মৌজায় মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অংশ থেকে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় রাসমনি ঘাট পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে মীরসরাই-রাসমনি নদী বন্দর ঘোষণা করে সরকার। একইদিন এসআরও নং-৬৩-আইন/২০২০ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডাব্লিউটিএ) এই নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম এই প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয়েও বৈঠক হয়। আমরা তাই জেলা পরিষদের সাথে ডিসেম্বরে আর চুক্তি নবায়ন করিনি। এখন আইন অনুযায়ী এটি পরিচালনা করবো আমরা।’

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবাল বলেন, ‘ঘাটের মালিকানা নিয়ে বিআইডব্লি­উটিএ’র সাথে আমাদের সমঝোতা চুক্তি আছে। এখন এটি কিভাবে পরিচালিত হবে তা মন্ত্রণালয়ই ঠিক করবে। এই ঘাটে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ আছে। আমাদের একাধিক প্রকল্প চলমান আছে এখনো। এ বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনবে মন্ত্রণালয়।’

বর্তমানে ঘাটে চলাচল করা স্পিডবোটে ১৬ কিলোমিটার দূরত্বের পারাপারে মাথাপিছু ২৫০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পাশাপাশি জেটির উপর চলাচল করা প্রায় ৪০টি ভ্যান থেকে দৈনিক ১২ হাজার টাকা কমিশন আদায় করা হচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট