চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস আজ

বিলুপ্ত ৩১ প্রজাতির প্রাণী

মোহাম্মদ আলী

৩ মার্চ, ২০২১ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

১০০ বছরে বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির প্রাণী। একই সময়ে মহাবিপন্ন প্রাণী ৫৬টি, বিপন্ন ১৮১টি এবং ঝুঁকিতে আছে ১৫৩টি প্রজাতির প্রাণী। আর ঝুঁকির কাছাকাছি রয়েছে ৯০ প্রজাতির প্রাণী। তবে ৮০৩ প্রজাতির প্রাণী নিয়ে এখন পর্যন্ত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।  বাংলাদেশের ১ হাজার ৬১৯ প্রজাতির বন্য প্রাণীর কোন্ধসটির কী অবস্থা, সে বিষয়ক লাল তালিকা বা রেড লিস্টের হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এটি যৌথভাবে তৈরি করেছে সরকারের বন বিভাগ এবং আইইউসিএন।

বিলুপ্ত প্রাণীদের মধ্যে ডোরাকাটা হায়েনা রাজশাহী অঞ্চলে, ধূসর নেকড়ে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে, নীলগাই দিনাজপুর-পঞ্চগড় এলাকায়, বান্টিং বা বনগরু চট্টগ্রাম ও সিলেটে এবং বনমহিষ দেশের সব বনাঞ্চলেই দেখা যেত। এ ছাড়া তিন ধরনের গন্ডার ছিল বাংলাদেশে: সুমাত্রা গন্ডার, জাভা গন্ডার ও ভারতীয় গন্ডার। বাদা বা জলার হরিণকে স্থানীয়ভাবে বলা হতো বারো শিঙা হরিণ। এটি সিলেট ও হাওর এলাকায় দেখা যেত। কৃষ্ণষাঁড় নামে একটি প্রাণী ছিল রাজশাহী ও দিনাজপুর এলাকায়। আর মন্থর হরিণ পাওয়া যেত পার্বত্য চট্টগ্রামে।

এই ১৩ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে বেশির ভাগই গত শতাব্দীতেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে আইইউসিএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র মন্থর ভালুক নামে ভালুকের একটি প্রজাতি গত ৪০ বছরে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে। এছাড়াও বিলুপ্ত হয়েছে গোলাপী মাথা শীর হাঁস, ময়ুর, মিঠা পানির কুমির, শ্লথ ভাল্লুক, বুনো মহিষ ইত্যাদি। মহাবিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় রয়েছে বেঙ্গল টাইগার, হাতি, ভোঁদড়, লামচিতা, চিতা, বনরুই, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, বনগরু, সাম্বার হরিণ, প্যারাইল্লা বানর, হিমালয়ান ডোরা কাঠবিড়ালি ও কালো ভালুক। এদিকে বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনতে নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বন আইনে বন্যপ্রাণীকে বনজ সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি বন এলাকায় বন্যপ্রাণী ধরা, শিকার ও পাচার নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বন্যপ্রাণী রক্ষায় সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালন করা হয়। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘মানুষ ও পৃথিবী বাঁচাতে বন ও জীবিকা।’

দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বন্যপ্রাণী বিভাগ নানামুখী কার্যক্রম চালাচ্ছে। এজন্য দেশে ১৮টি জাতীয় উদ্যান, ২৪টি অভয়ারণ্য, ২টি বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, ২টি বোটানিক্যাল গার্ডেন, ১০টি ইকো পার্ক, ২টি সাফারি পার্ক, ১টি মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া এবং ২টি শকুন নিরাপদ এলাকা তৈরি করা হয়েছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘গত ১০০ বছরে বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ৩১ প্রজাতির প্রাণী। পরিবেশের ক্ষতির কারণে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। নানা উন্নয়নমূলক কাজ এবং প্রকৃতির পরিবর্তনের প্রভাবও বন্য প্রাণীর ওপর পড়ছে। মূলত বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার কারণে বাসস্থান হারিয়ে এই প্রাণীগুলো বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইইউসিএন এর মহাবিপদাপন্ন তালিকায় রয়েছে হাতি। আবাসস্থল ধ্বংস ও খাদ্যের জন্য লোকালয়ে নেমে আসার কারণে চট্টগ্রামসহ ৫ জেলায় বিগত পাঁচ বছরে ৫২টি হাতি মারা গেছে। একই সময়ে হাতির আক্রমণে নিহত হয়েছে ৭০ জন মানুষ। বসতঘর ও ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার। সর্বশেষ ২০১৩-২০১৫ সাল পর্যন্ত আইইউসিএন এর জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে হাতি রয়েছে ২৬৮টি। এর আগে ২০০৪ সালে একই সংস্থার জরিপে সারাদেশে হাতি ছিল ২২৮ থেকে ৩২৭টি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট