চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চন্দনাইশ জামিজুরীতে ১৪ শহীদের বধ্যভূমি এখনো অবহেলিত

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

২ মার্চ, ২০২১ | ১:৫০ অপরাহ্ণ

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন দোহাজারী জামিজুরীর ক’টি হিন্দু পরিবার। সেখানে ১৪ জনকে দিন-দুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে একই গর্তে সবাইকে পুঁতে ফেলা হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এ বধ্যভূমিতে সরকারি তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতায় স্থাপনা বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১৪ জনের নাম সম্বলিত একটি স্মৃতিফলক ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। সরজমিনে দেখা যায়, অযত্ন-অবহেলা এবং অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিলিয়ে দেয়া ১৪ জন শহীদদের বধ্যভূমিটি। জীবন উৎসর্গকারী শহীদরা হলেন ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য্য, মাস্টার প্রফুল্ল রঞ্জন ভট্টাচার্য্য, কবিরাজ তারাচরণ ভট্টাচার্য্য, মুক্তিযোদ্ধা বিমল দাশ (নলুয়া), মাস্টার মিলন কান্তি ভট্টাচার্য্য, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য্য, ডা. করুণা চৌধুরী, অমর দাশ, হরিরঞ্জন মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ দাশ (আমিরাবাদ), রেনুবালা ভট্টাচার্য্য, নগেন্দ্র রাণী, মনিন্দ্র দাশ ও রমনী দাশ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্যের স্ত্রী মাধুরী লতা ভট্টাচার্য্য গত পাঁচ বছর আগে জীবিত থাকা অবস্থায় বিষাদময় স্মৃতি বর্ণনা করেছেন এভাবে রাজাকারদের সাথে এদেশের ক’জন লোকও ছিল। তারা প্রথমে তারাচরণকে গুলি করে হত্যা করে। পরে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ করে। এতে অনেকের মাথার খুলি উড়ে যায়। একজন অতিথিসহ ১৪ জনকে হত্যা করে দড়ি দিয়ে বেঁধে তাদেরকে ঘরের পিছনে গর্তে ফেলে মাটি চাপা দেয়। ঘটনার দিন ছিল বুধবার ১৪ বৈশাখ, ২৮ এপ্রিল ১৯৭১ সাল। কালের সাক্ষী হিসেবে সৃষ্টিকর্তা তাকে স্বাধীনতার পর ৪৩ বছর বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। গত পাঁচ বছর আগে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। 

শহীদ ডা. বগলা প্রসাদের ছেলে ডা. সুনীল ভট্টাচার্য্য বলেন, স্বাধীনতার পর পর বঙ্গবন্ধু সরকার থেকে মাত্র ২ হাজার টাকার সাহায্য পাওয়া যায়। আর কোন সাহায্য সহযোগিতা সরকারি বা বেসরকারিভাবে শহীদ পরিবারগুলো পায়নি। তারা কোন সাহায্য না পেলেও নিজস্ব তাগিদে ১৪ জন শহীদের সমাধিস্থলে তাদের নাম র্লিখে একটি বেদী নির্মাণ করেছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ রাষ্ট্রীয় কোন আনুকূল্যও তাদের ভাগ্যে জুটেনি। সরকারের সদিচ্ছার আলোকে কয়েক দফা ছবি তুলে তথ্য সরকারিভাবে উপরে মহলে পাঠানো হয়েছিল ।

বধ্যভূমিটি সংস্কার করার জন্য সাবেক সাংসদ আ.লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমদ তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। তাছাড়া গত ২০১৬-১৭ অত্র বছরে জেলা পরিষদ থেকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সে টাকায় বধ্যভূমিকে সংস্কার করা হয়। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ থেকেও গত অর্থ বছরে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ হোসেন বলেছেন, তিনি গত বছর জানুয়ারিতে যোগদান করার পর থেকে কোন ধরনের বরাদ্দ পাননি। এদিকে বরকল-সুচিয়াতে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান। সেখানেও কোন ধরনের বরাদ্দ পাওয়া যাইনি বলে জানান তিনি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট