চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

‘ভিক্ষার টাকায় ঘর করেছি, সেটা ছেড়ে যাব না’

আল-আমিন সিকদার 

২ মার্চ, ২০২১ | ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

লালদিয়ার চরে দিনভর ছিল হাতুড়ি দিয়ে দেয়াল ভাঙার শব্দ। নিজ হাতে চার যুগের বসতভিটা নিজেরাই ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছিলেন চরের বাসিন্দারা। কেউ ব্যস্ত মালামাল সরাতে আবার কেউবা ভাঙতে। বুলডোজারের ধ্বংস লীলার আগেই যে সরিয়ে নিতে হবে শেষ সম্পদটুকু। দিকভ্রান্ত হয়ে বাসিন্দাদের অনেকে ছুটেছেন এদিক- সেদিক। এসব শতব্যস্ততার মাঝেও ব্যতিক্রম ছিল লালদিয়ার চরের খাল পাড়ের একটি ছোট্ট টিনের ঘর। চারদিকে উচ্ছেদ আতঙ্ক চললেও অস্বাভাবিক নির্বিকার ছিলেন ঘরের বাসিন্দারা। ক্ষিপ্ত গতিতে চলা উচ্ছেদের মাঝেও টিনের তৈরি ঘরটি ছিল অক্ষত। ব্যতিক্রম এ ঘরের প্রতি কৌতুহলী হয়ে উঠেন গণমাধ্যমের কর্মীরা।

ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ছোট্ট একটি চৌকিতে ৩ সন্তান নিয়ে বসে আছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী এক নারী। ৩৫ বছরের ওই নারীর নাম হাসিনা আক্তার। ১৯৮৯ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে তার বাম পা। পঙ্গু ওই জীবনে একসময় তার জীবনসঙ্গী হন মো. জাকির হোসেন। তবে জাকির হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী হয়েও আক্ষেপ নেই হাসিনার। পঙ্গু জীবনে সংসারের স্বাদ পেয়েই খুশি তিনি। এই সাংসারিক জীবনে তার কোলজুড়ে আসে তিন সন্তান। ১২ বছর আগে জন্ম নেয় প্রথম সন্তান রাহিমুল হোসেন জীবন আর এর ৩ বছর পর ভুমিষ্ঠ হয় দ্বিতীয় সন্তান তাসফিয়া। সবশেষে তার কোলজুড়ে আসা দেড়বছরের ইমাম হোসেন ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। উপায়ান্ত না দেখে সন্তানদের মানুষ করার জন্য ভিক্ষা করে সংসার চালায় হাসিনা। সেই ভিক্ষার টাকা জমিয়ে খালের পাড়ে একটু একটু করে গড়েছিলেন এই ঘরটি। তাইতো, যত কিছুই হোক না কেন এই ঘর ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

হাসিনা আক্তার বলেন, আপনারা হয়তো চিন্তা করছেন এতকিছুর পরও কেন আমি ঘর ছাড়ছি না। ভাবছেন, এত সংকটের মাঝেও আমার মুখে হাসি কেন?। আইয়ুব বাচ্চুর (প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পি) হাসতে দেখো গানটি শুনেছেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, দেখো না কেউ হাসি শেষে নীরবতা। আমিও নীরবে কাঁদছি। আমার কষ্ট কেউ দেখে না। তাই হাসতেছি।

এরপরই কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে উঠেন, কি করবো বলেন না, মারামারি করবো। সেই ক্ষমতাও আমার যেমন নেই তেমনি কোথাও থাকার মত সামর্থ্যও নেই।

‘মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা জমিয়ে এই ঘরটা করেছি’, বলেন প্রতিবন্ধী হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই ঘরেই জন্ম নেয় আমার ৩ সন্তান। ছোট ছেলে ইমাম হোসেন ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। এখনো ভিক্ষার টাকায় আমার প্রতিদিনের বাজার হয়। এই আমার মাথার চালটুকু নিয়েও টানাটানি চলছে। কই যাবো আমি? কার কাছে যাবো? কে খাওয়াবে আমার সন্তানদের? – প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন হাসিনা। বলেন, ‘আমার নামও হাসিনা। আমি চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আমার জন্য মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করে দিবেন। তা না হলে এই ঘরের মধ্যেই মারা যাবো। যাই হোক, এই ভিটা ছাড়বো না।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট