চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নগরীর বুকে ‘একাত্তর’

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

১ মার্চ, ২০২১ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার চট্টগ্রাম মহানগরীতে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর। এছাড়াও নগরীর ফয়’স লেক বধ্যভূমিতে কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ও জাাদুঘর নির্মাণের জন্য নগরীর উত্তর কাট্টলি, মোহরার হামিদচরসহ একাধিক প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে স্থান নির্ধারণ করবে। 

দেখা যায়, উত্তর কাট্টলি এলাকায় ‘চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর’ নির্মাণের নির্ধারিত স্থান উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে জেলা প্রশাসন। সরকারি খাস জমিতে এই সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, বিপুল পরিমাণ সরকারি খাস জমি দখল করে ইটভাটা নির্মাণ করেছিল প্রভাবশালীরা। সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে দীর্ঘদিন দখল করেছিল। আইনি প্রক্রিয়া শেষে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে এখন সরকার দখলে নিয়েছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ও জাাদুঘর নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

কাট্টলি সার্কেলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল আলম বলেন, ‘স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য উত্তর কাট্টলিসহ মহানগরী থেকে একাধিক জায়গার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সেখানে নির্ধারণ করবে সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে।’

চান্দগাঁও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মায়মুন আহমেদ অনিক বলেন, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের হামিদচর এলাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

মোহরা ওয়ার্ডের হামিদচর এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। ব্লু-ইকোনমি অর্জনের লক্ষ্যে মেরিটাইম বিষয়ক উচ্চতর পড়াশোনার বিশেষায়িত বিশ^বিদ্যালয় এটি।

চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্ধসঢ়;ফর আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘৬ দফা আন্দোলন ঘোষণা করা হয়েছিল ঐতিহাসিক লালদিঘি ময়দান থেকে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও চট্টগ্রাম থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূতিকাগার। এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, গণকবর ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি ও আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। শেষতক সরকার চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আশা করব, মুজিব বর্ষে দৃশ্যমান হোক স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ।’

সরেজমিন দেখা যায়, কাট্টলি এলাকায় সাগর তীর জেগে প্রায় দুইশ একর সরকারি খাস জায়গা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সরকারি খাস জায়গা দখল করে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয় চারটি ইটভাটা। এছাড়াও খাস জমি দখল করে নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন প্রভাবশালীরা। গত বছর অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দখলমুক্ত করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ সরকারি জায়গা।

জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, নগরী থেকে চারটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। স্থান নির্ধারণ করবে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, সমুদ্র তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রেখে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে।

স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ছাড়াও নগরীর ফয়’স লেক বধ্যভূমিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এক একর দশমিক ৭৫ শতক জায়গাজুড়ে এই কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এর প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে কমপ্লেক্স নির্মাণ বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট