চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

প্রাণ হাতে নিয়ে হাঁটা যে সড়কে

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:০০ অপরাহ্ণ

নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে খাজা রোডের মুখ। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরত্বের এই সড়কের দুই পাশেই আছে শতাধিক গ্যারেজ আর গাড়ির নানা সামগ্রীর দোকান। এসব দোকানের জিনিসপত্র ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের ওপর চলে এসেছে। আবার দিনরাত সড়কের ওপর শতাধিক গাড়িকে দাঁড় করিয়ে করা হয় মেরামত।

ফুটপাত ও সড়কের দুই পাশের অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় মানুষজনকে হাঁটতে হয় সড়কের একেবারে মাঝখান দিয়ে। ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় প্রাণ হাতে নিয়ে তাঁদের দ্রুতগামী গাড়ির গা ঘেঁষে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে। একই কারণে ওই সড়কে প্রায় সময় যানজট লেগে থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী তাঁদের সমস্যা নিরসনের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

ওই সড়কের পূর্বপাশে ছোটবড় চারটি আবাসিক এলাকা রয়েছে। এসব আবাসিক ও স্থানীয় জনসাধারণ মিলে সেখানে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। সড়কের পাশে কয়েকটি মাদ্রাসা ও দুটি স্কুল রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় সড়কের মাঝপথ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে শিশুদের নিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সোনালী আবাসিকের একটু উত্তরে সড়কের ওপর একটি গাড়ির চাকা মেরামত করছিলেন গ্যারেজের তিন শ্রমিক। এভাবে সড়কের ওপর গাড়ি মেরামতের কারণ জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এ ছাড়া তো উপায় নেই। কারণ গ্যারেজে জায়গা নেই। সেজন্য সড়কের ওপরেই নিয়মিত মেরামত করতে হয়। একই দৃশ্য দেখা গেল আশপাশের অন্য গ্যারেজগুলোতেও।

সেখান থেকে কয়েক মিনিট চান্দগাঁও থানার দিকে হাঁটলেই রূপালী আবাসিক এলাকা। আবাসিক লাগোয়া সড়কের পূর্বপাশে আছে আরেকটি বড় গ্যারেজ। সেই গ্যারেজের সামনে সড়কের ওপর কয়েকটি গাড়ি রাখা হয়েছে মেরামতের জন্য। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখানে দিনের পর দিন সড়কের ওপর গাড়ি রেখে কখনো মেরামত করা হয়, কখনো রং করা হয়।

চট্টগ্রামের দক্ষিণের জেলাগুলোতে যাওয়ার বেশিরভাগ গাড়ি বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ে। তাই স্বাভাবিকভাবে ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চলাচল করে এই সড়কে। একদিকে গাড়ির অতিরিক্ত চাপ, অন্যদিকে সড়কের তিনভাগের দুইভাগ দখল হয়ে যাওয়ায় প্রায় সময় যানজট লেগে যায় এই সড়কে। হাঁটাচলার ভোগান্তি তো নিয়মিত ঘটনা।

ফুটপাত ও সড়ক দখল নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের অন্ত নেই। গতকাল সোনালী আবাসিক এলাকায় কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা মোছাম্মৎ জাহিনের সঙ্গে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, প্রতিদিন ছোট ভাইকে মাদ্রাসায় আনা নেওয়া করতে হয়। ফুটপাতের ওপর দোকানের জিনিসপত্র রাখায় সেখান দিয়ে হাঁটা যায় না। আবার সড়কের পাশ দিয়েও হাঁটা যায় না। কারণ সেখানে দাঁড় করিয়ে গাড়ি মেরামত করতে হয়। তাই প্রায় মাঝখান দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। একদম চলাচল করা গাড়ির পাশ ঘেঁষে চলতে হয়। কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটলে হয়তো প্রশাসনের নজর পড়বে। একই কথা বলেন রূপালী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মুজিবুল করিম।

সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী গ্যারেজের গাড়ি মেরামতের জন্য নিজস্ব জায়গা থাকা দরকার। কিন্তু সেখানকার ৯৫ শতাংশ গ্যারেজের গাড়ি মেরামতের জন্য কোনো খোলা জায়গা নেই। গ্যারেজ মালিকেরা সড়ক আর ফুটপাতকেই তাই বানিয়ে ফেলেছেন নিজেদের কাজ করার জায়গা।

সড়ক-পরিবহন আইনে এ বিষয়ে অতীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করাদের একজন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অনেক গাড়ি জব্দ করে থানায় পাঠিয়েছি। মানুষের ভোগান্তি দূর করতে এরকম অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হবে। সড়কের ওপর গাড়ি রাখা হলে জব্দ করা হবে। গ্যারেজগুলোকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট