চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল: আন্তঃনগরে লোকালের গতি!

আল-আমিন সিকদার

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১২:০৮ অপরাহ্ণ

হঠাৎ করেই দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়ে গেছে রেলপথে। গত একবছরে ঘটেছে ২৫ টিরও বেশি ট্রেন দুর্ঘটনা। যার বেশিরভাগই ছিল লাইনচ্যুত হয়ে পড়ার কারণে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ঘটেছে এ দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশ। এতে প্রায় শতকোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সরকার। কারণ, দুর্ঘটনার শিকার ট্রেনগুলোর বেশিরভাগই ছিল তেলবাহী ওয়াগন। তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, দুর্বল রেলপথ ও নড়বড়ে রেল সেতু পার হতে গিয়ে ঘটছে এ দুর্ঘটনা। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে লোকাল ট্রেনের গতিতে আন্তঃনগর ট্রেন চালাতে বাধ্য হচ্ছে লোকোমাস্টাররা। এতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে গড়ে এক ঘণ্টা পরে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে ট্রেন।

পূর্বাঞ্চলের কন্ট্রোল বিভাগের গত এক সপ্তাহের তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম সিলেট রুটে গড়ে এক ঘণ্টা এবং চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে গড়ে ২০ মিনিট দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে ট্রেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস সঠিক সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশনে ছাড়লেও সিলেট পৌঁছায় এক ঘণ্টা দেরিতে। অর্থাৎ নির্ধারিত সময় সকাল ৬টা হলেও উদয়ন পৌঁছায় সকাল ৭টায়। একইভাবে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরিতে সিলেট পৌঁছায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস। সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি সন্ধ্যা ৬টায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও এটি সিলেট যায় সন্ধ্যা ৭ টা ১০ মিনিটে।

একই দিনে ২০ মিনিট দেরিতে সিলেট পৌঁছায় উদয়ন। এভাবে ১৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটগামী ট্রেন দুটি সিলেট পৌঁছায় ২০ মিনিট পরে। ১৮ ফেব্রুয়ারি পাহাড়িকা ৩৫ মিনিট ও উদয়ন সিলেট পৌঁছায় ২০ মিনিট দেরিতে। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১০ মিনিট পরে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে দেড়ঘণ্টা পরে সিলেট পৌঁছায় পাহাড়িকা, উদয়ন পৌঁছায় ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। ২০ ফেব্রুয়ারি দুটি ট্রেনই সিলেট পৌঁছায় ২০ মিনিট পর। ২১ ফেব্রুয়ারি ১০ মিনিট সময় ক্ষেপণ করে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর সিলেট পৌঁছায় পাহাড়িকা। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারিও দেড়ঘণ্টা পর সিলেট পৌঁছায় উদয়ন।

একইভাবে কন্ট্রোলরুমে রেকর্ড হওয়া ঢাকাগামী ৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুবর্ণ, মহানগর গোধূলী, তূর্ণা-নিশিথা ও সোনার বাংলা ঢাকা পৌঁছেছে গড়ে ২০ মিনিট পর।

ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়ে এত গড়মিল হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম-ঢাকা ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ৩টি ব্রিজকে ‘ডেড স্পট’ ঘোষণা করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ মেরামত চলছে ২১টি স্টেশনের মধ্যবর্তী রেললাইনে। মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা ব্রিজ ৩টি হচ্ছে কুমিরা বারবকুন্ড ও মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া এবং মাস্তাননগর স্টেশন এলাকায়। এগুলোর পাশাপাশি লাকসাম থেকে আখাউড়া ও আখাউড়া থেকে ঢাকা রেলপথে চলছে সংস্কারকাজ। এই দুটি রেলপথের সাথে মেরামত চলছে সিলেট রুটের মুকন্দপুর থেকে মোংলাবাজারের ১৯টি স্টেশনের মধ্যবর্তী রেললাইনের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘হঠাৎ করে দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে রেলের প্রকৌশল বিভাগ। তড়িঘড়ি করে শুরু করেছে রেল লাইনের সংস্কার কাজ। দীর্ঘদিন এই ভঙ্গুর রেললাইন নিয়ে তারা উদাসহীন থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব মেরামতের জন্য এবং দুর্ঘটনা এড়াতে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো এখন ধীরগতিতে চলছে’।

এদিকে সংস্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ট্রেনের গন্তব্যে দেরিতে পৌঁছানোর পুরো কারণ মেরামত কাজ নয় বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘মেরামত কাজ চলছে। এসব কাজের জন্য সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মিনিট দেরি হতে পারে। কি কারণে এক থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে তা জানি না। আর এর জন্য মেরামত কাজ দায়ীও নয়। আমরা ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা রেখেই কাজ করছি। আশাকরছি, আগামী ৬ মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হবে এবং ঝুঁকিমুক্ত হবে রেলপথ। এছাড়া গতি ফিরবে’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট