নগরীর আকরবশাহ থানার পুর্ব ফিরোজশাহ নাছিয়াগোনা পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী নুরে আলমের অনুমতি ছাড়া কয়মাস আগেও সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারত না। সরকারি পাহাড় কেটে সেখানে নুরু গড়ে তুলেছিলো নিজের সাম্রাজ্য। বছরের পর বছর দখলে থাকা নুরুর সেই সাম্রাজ্য এখন অতীত। দুর্গম নুরুর আস্তানার চিহ্ন মুছে দিয়ে সেখানে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। নাছিয়া ঘোনায় এখন মানুষের অবাধ যাতায়াত। নুরুকে উচ্ছেদ করে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ওই এলাকায় বসবাসরত ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, পাহাড়ি দুর্গম এলাকাটিতে নুরু সরকারি জমি দখল করে নিজের মতো সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। তার বিরুদ্ধে ২৫টির বেশি মামলা রয়েছে। ওই এলাকার মানুষ তার তটস্থ থাকতো। নুরুকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তার দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সেখানে একটি অস্থায়ী ফাঁড়ির কাজ শুরু করেছি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ওই এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। থানা থেকে দূরে হওয়ায় পুলিশ দ্রুত যেতে পারে না। আর পাহাড়ি এ এলাকা ঘিরে অপরাধীরা আশ্রয় নিয়ে থাকে। ফাঁড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকলে ওখানে বসবাসরত লোকজন নিজেদের নিরাপদ মনে করবে। ওই এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নতুন এ ফাঁড়ি আশা করছি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আনুমানিক ত্রিশ বছরের যুবক নুরে আলম। আকবরশাহ থানার নাছিয়া ঘোনা এলাকায় মানুষের কাছে নুরু নামে পরিচিত। থাকতেন আকবরশাহ থানার নাছিয়া ঘোনা পাহাড়ি এলাকায়। সরকারি পাহাড় কেটে বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন তিনি। ২৫ মামলার আসামি নুরু পাহাড় দখল, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র-বেচাকেনা ও কাঠপাচার হেন কাজ নেই করেনি। তার রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। দীর্ঘদিন পুলিশ তাকে খুঁজলেও কখনো দেখা পায়নি। রীতিমতো লোহার গেট নির্মাণ করে তালা লাগিয়ে দিনরাত সমান তালে সরকারি পাহাড় কেটে গড়ে তুলেছে বিশাল সাম্রাজ্য। গত ২৬ ডিসেম্বর সাম্রাজ্যে অভিযান চালালে বেজায় রেগে যান নুরু। নিজেই নেতৃত্ব দিয়ে রীতিমতো সদলবলে হামলা করে শতাধিক পুলিশের উপর। পুলিশও তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রায় পঞ্চাশ রাউন্ডের বেশি শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।
পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনির নাছিয়া ঘোনা এলাকায় পাহাড় কেটে চলাচলের পথ তৈরি করেছিলো নুরু। ঢালু পাহাড়ি পথ পার হতেই দেখা মিললো ঈসা ভবন নামে বিশাল লোহার গেট। পার হতেই রয়েছে একটি মসজিদ, আল মাদরাসাতুল ইসলামিয়া দারুল কুরআন ও এতিমখানা লেখা আরো একটি বিশাল গেট। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বাস্তবতা হচ্ছে এতিমখানায় কোন এতিম নেই। মূলত মসজিদ আর এতিমখানার সাইনবোর্ডের আড়ালে সরকারি পাহাড় কেটে নুরু গড়ে তুলেছে নিজের সাম্রাজ্য। দুই পাহাড়ের মাঝখানে মাটির সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখা মিললো কয়েক’শ বাড়ি। যেটি নুরুর কলোনি হিসাবে পরিচিত। কলোনিতে প্রবেশের মুখেই রয়েছে নুরুর দৃষ্টি নন্দন বাড়ি। বাসার ভেতরে দামি টাইলস আর সোফা।
তার বিরুদ্ধে আকবরশাহ থানায় মাদক,অস্ত্র ও কাঠ পাচার আইনে আঠারোটি মামলা রয়েছে। তাকে ধরতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়ে।
নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার ফারুক উল হক জানান, উদ্ধার করা জমিটির মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেখান আমরা একটি অস্থায়ী ফাঁড়ি তৈরি করেছি। উদ্ধার করা জায়গা একটি পাহাড় মাত্র। ভেতরে আরো অনেক পাহাড় রয়েছে। যেখানে পুলিশ কিংবা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরা সহজে যাতায়াত করতে পারে না। পুলিশ ফাঁড়ি থাকলে এলাকায় পুলিশের টহল দেয়া সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
পূর্বকোণ/এএ