চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

ফের জলাশয় ভরাট করে মার্কেট !

পরিবেশ নিয়ে ভাবছে না কেউ ভূমিদস্যুরা আরো বেপরোয়া

সীতাকু-ে হারিয়ে গেছে অসংখ্য জলাশয়, নীরব সংশ্লিষ্টরা

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকু-

২২ জুন, ২০১৯ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

 

সীতাকু-ে একের পর এক জলাশয় ভরাট করে বিভিন্নরকম স্থাপনা নির্মাণ করছে প্রভাবশালী মহল। এতে এলাকা প্রয়োজনীয় পানি সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ভারসাম্য হারাতে থাকলেও এসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এতে পুকুর বা জলাশয় ভরাট বেড়েই চলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকু-ে সর্বত্র জলাশয় ভরাটের মহোৎসব চলছে। মার্কেট, বসত ভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা নির্মাণে প্রভাবশালীরা লাগামহীনভাবে পুকুর, দিঘী, ডোবা থেকে শুরু করে খাল পর্যন্ত ভরাটে পিছুপা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে উপজেলার সলিমপুর থেকে বড়দারোগারহাট পর্যন্ত এলাকায় অসংখ্য জলাশয় ভরাট হলেও এসব অপকর্মের সাথে জড়িতরা কোথাও শাস্তির আওতায় না আসায় এখন ভূমিদস্যুরা কার্যত বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীরা জানান, এখনো উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক জলাশয় ভরাট চলছে। বাড়বকু- বাজারের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন পশ্চিমপাশে সওজের জায়গায় সৃষ্ট সুপ্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ পুকুরটি প্রকাশ্যে ভরাট করে সেখানে নির্মাণ হচ্ছে বহুতল মার্কেট। স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি মো. সিরাজ এটি ভরাট করছেন বলে সবাই জানলেও কোন দপ্তর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। পরিদর্শনকালে দেখা যায় বাড়বকু- বাজারের ঠিক মাঝামাঝি এলাকার পশ্চিমপার্শে এই পুকুরটির বেশিরভাগ অংশই ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। সেখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে একটি বাণিজ্যিক ভবন।
পরিদর্শনকালে এলাকাবাসী জানান, সিরাজ একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। আ.লীগ রাজনীতি ও বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সাথে তার গভীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চান না। তিনি গত কয়েক মাস আগে অতি সুকৌশলে সরকারি এ জলাশয়টি ভরাট করে চারিদিকে টিনের ঘেরা দেন। তারপর সেখানে মার্কেট তৈরির কাজ শুরু করেন। এখন মার্কেটটির কাজ প্রায় শেষের পথে হওয়ায় এটি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি এখানে পরিদর্শনে এসেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক মাঈনুল ইসলাম। কিন্তু তিনিও সিরাজ গংদের সাথে কথা বলে চলে যান। কোন পদক্ষেপ নেননি। এতে নির্বিঘেœ চলছে কাজ। একইভাবে এটি রক্ষায় সড়ক ও জনপদ বিভাগেরও কোন ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি। একইভাবে সলিমপুর ফকিরহাটে কালুশাহনগর পুকুরটি ভরাট হতে হতে এখন মৃত জলাশয়ের আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক কর্মী পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে এটি ভরাট করছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য এটির কাজ বন্ধে বেশ কয়েকবার নির্দেশ দিয়েছেন। তবুও লুকিয়ে চুরিয়ে এটি ভরাটের কাজ চালান সংশ্লিষ্ট ভূমিদস্যুরা। এইভাবে উপজেলার শীতলপুর, কুমিরাসহ বিভিন্ন স্থানে পুকুর, ডোবা ভরাট হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত একদশকে সীতাকু-ের ডেনার দিঘী, রাজার দিঘী, নূরমার দিঘীসহ ৪/৫টি বড় বড় দিঘীসহ অর্ধ শতাধিক জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। কিন্তু এসবের কোন প্রতিকার হয়নি। এসব অপকর্মের সাথে জড়িত কাউকেই কোন জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হয়নি। এ কারণে জলাশয় কমে গিয়ে এলাকায় দারুন নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাড়বকু-ের তেলিপাড়ার বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সম্প্রতি বাড়বকু-ের ঐতিহ্যবাহী নূরমার দিঘীও ভরাট হয়ে গেছে। সেটি এখন প্রভাবশালীদের দখলে। এরপরেই এবার দখল হলো বাজারতলীর পুকুরটি। এটি থেকে স্থানীয় মসজিদের মুসল্লি ও ব্যবসায়ীরা পানি ব্যবহার করতেন। বাজারে অগ্নিকা-ের সময়ও এটি থেকে পানি নেয়া হতো। এটি ভরাটে এলাকায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে জলাশয় ভরাট করে মার্কেট নির্মাণে অভিযুক্ত মো. সিরাজ দাবি করেন তিনি কোন জলাশয় ভরাট করেননি। এখানে আগেই দোকান ছিল। নতুন করে সেখানে কিছু কাজ করা হচ্ছে। তাই পুকুর ভরাট কিংবা মার্কেট তৈরির তথ্য সঠিক নয় !
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর মাঈনুল হাসান বলেন, পুকুরটি ভরাটের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। যারা পুকুরটি ভরাট করছে তাদের কাছ থেকে খতিয়ান চাওয়া হয়েছে। খতিয়ানে যদি পুকুর উল্লেখ থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট