চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘ওয়েল ফুড’-এর পণ্য যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে

তাসনীম হাসান

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:৪৭ অপরাহ্ণ

মাত্র একটা আউটলেট দিয়েই শুরু হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির পথচলা। এরপরের গল্পটা শুধু এগিয়ে চলার। তাদের তৈরি খাবার পণ্য নিয়ে মানুষের চাহিদা এমনই তুঙ্গে পৌঁছে, এখন দেশের তিনটি শহরের পথে পথে দাঁড়িয়ে আছে ৬৫টি আউটলেট। চট্টগ্রামের মানুষ আর অতিথিদের চাহিদা পূরণই ছিল প্রথমদিকের লক্ষ্য। সেখানে এখন দেশ ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য থেকে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেছে এই প্রতিষ্ঠানের খাদ্যপণ্য। খাবারের জগতে বিপ্লব এনে দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানকে এক নামেই সবাই চেনে ‘ওয়েল ফুড।’

সম্প্রতি নিজের কার্যালয়ে বসে পূর্বকোণের কাছে ওয়েল ফুডের উত্থানের সেই সব নেপথ্যের গল্প শোনান ওয়েল গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ হাসান। ওয়েল ফুডের শুরুর গল্পটা অবশ্য মানুষের চাহিদা থেকে। গত দশকের শুরুর দিকের কথা। মোহাম্মদ আসিফ হাসানের ভাষায়, তখন ঢাকা থেকে বিদেশি পোশাক শিল্পের ক্রেতারা চট্টগ্রামে আসতেন তখন তাঁদের লাগেজের ভেতরে থাকতো আলাদা একটা প্যাকেট। সেই প্যাকেটভর্তি থাকতো হয় ব্রেড বান, না হয় বিস্কুট। কারণ, তখনো যে ভালো মানের বেকারিপণ্য সহসা মিলতো না এই শহরে। সেই বিষয়টি চোখ এড়ায়নি ১৯৭০ সাল থেকে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ওয়েল গ্রুপের। গ্রুপের মালিকদের মাথায় ভর করে একটি প্রশ্ন এত বড় শহরে আসতে কেন ব্রেড বান নিয়ে আসতে হবে। সেই প্রশ্নের সমাধান দিতেই জিইসি মোড়ে ছোট্ট পরিসরে শুরু হয় ওয়েল ফুডের প্রথম আউটলেটের যাত্রা। দিনটি ছিল ২০০৪ সালের ৩১ডিসেম্বর। শুরু থেকেই ওয়েল ফুড মানের প্রতি ছিল আপোষহীন। সেই লক্ষ্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে তাঁদের অংশীদার করার চেষ্টা চালান।  সেই প্রচেষ্টার ফল মেলে দ্রুত। তাঁরা সহায়তা পান বেলজিয়ামভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের। সেই প্রতিষ্ঠানটি কাঁচামাল সরবরাহের পাশাপাশি মানসম্পন্ন বেকারি পণ্য উৎপাদন থেকে কর্মীদের প্রশিক্ষণ যাবতীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে।  শুরুতে ১০০টির কাছাকাছি পণ্য উৎপাদন করতো প্রতিষ্ঠানটি। এখন প্রায় আড়াইশ পণ্য উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। বেলা বিস্কুট থেকে পাউরুটি, সেমাই থেকে চানাচুর কী নেই ওয়েল ফুডের? কয়েকজন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানে এখন সারাদেশে কাজ করছেন প্রায় ৪০০ কর্মী।

এ তো গেল ওয়েল ফুডের বেকারি পণ্যের কথা। চট্টগ্রামে ফাস্ট ফুড মানুষের মুখে মুখে তুলে দেওয়ার পেছনেও আছে এই প্রতিষ্ঠানটির নাম। পিৎজা, বার্গারের মতো খাবারগুলো তো মেলেই মালয়েশিয়ান প্রযুক্তিতে তৈরি সুগার বানও পাওয়া যাচ্ছে আউটলেটগুলোতে। আছে ইতালির প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে তৈরি আইসক্রিমও। আবার ইউরোপের দেশগুলোর আদলে ছয়টি আউটলেটে গড়ে তোলা হয়েছে কফি হাউস। সেখানে গল্প-আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে কফির কাপে চুমুক দিতে পারবেন যে কেউ। মানুষদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই সব নতুন ধারণা। তাই তো  দেশের বেশিরভাগ মানুষ তৈরি পোশাকের জন্য বিখ্যাত ওয়েল গ্রুপের মালিকদের খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ী হিসেবেই এখন বেশি চিনছেন।

ওয়েল গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ হাসান পূর্বকোণকে বলেন, একটা সময়ে ভালো মানের পণ্যের জন্য মানুষকে ঘর থেকে অনেক দূরে যেতে হতো। যাতায়তের ঝক্কি তো ছিলই, সঙ্গে যাওয়া-আসার খরচও যেত। তাই আমরা মানুষের দুয়ারে ভালো অথচ দামে কম পণ্যেটা পৌঁছে দিতে চাই। সেজন্য আমাদের আউটলেটের প্রসার ঘটিয়েছি। মানুষ বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে আমাদের পণ্য। কারণ, আমরা শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মান ধরে রেখেছি।

অবশ্য এখন করোনা মহামারীর কারণে সব ব্যবসায় মন্দা চলছে। তার বাইরে নয় ওয়েল ফুডও। কিন্তু এই সময়টাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন মোহাম্মদ আসিফ হাসান। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা এখন নয় ভালো নয় মন্দ। কিন্তু আমরা এই দুঃসময়েও আমাদের কর্মীদের বেতন দিতে পারছি। এই সময়েও টিকে আছি। এটাই তো বড় পাওয়া।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট