চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চবিতে ফের সক্রিয় হচ্ছে হিযবুত তাহরীর

রায়হান উদ্দিন, চবি

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:২৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আবারো সক্রিয় হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর। দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকার পর গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার-লিফলেট লাগিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে তারা।

জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসের শিক্ষকদের আবাসিক ভবন সংলগ্ন নিপবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেখা যায় হিযবুত তাহরীরের পোস্টার। সর্বশেষ গতকাল ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক ভবনের মাঝামাঝি আইটি ফ্যাকাল্টির সামনের রেলিংয়ে সুতায় আবারও ঝুলতে দেখা গেছে সে পোস্টার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে পরবর্তীতে তা নামিয়ে নেয় নিরাপত্তা দপ্তরের লোকজন। বিগত বছরগুলোতে শাটল ট্রেন ও ক্যাম্পাসের বাইরে প্রচারণা চালালেও এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পোস্টার লাগাচ্ছে তারা।

‘হিযবুত তাহরীর উলাই’য়াহ্ধসঢ়; বাংলাদেশ’ প্রকাশিত এসব পোস্টারে লেখা রয়েছে, খিলাফত রাষ্ট্র ধ্বংসের একশ বছর (হিজরী ১৩৪২-১৪৪২)। বিশ্বের একশ শহর থেকে মুসলিম উম্মাহ’র প্রতি হিযবুত তাহরীর এর আহবান : ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠা করুন।’

এদিকে ১৫ দিনের মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের পোস্টার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে অস্থিরতা ও ভীতির সঞ্চার হয়েছে। বিষয়টিকে উদ্বেগের সাথে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের পোস্টারিংকে অশনি সংকেত, তাদের অস্তিত্ব ও কার্যক্রমের নতুন মাত্রা হিসেবেও মত প্রকাশ করেছেন অনেকে।

ছাত্র ইউনিয়ন চবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আশরাফী নিতু বলেন, ‘ক্যাম্পাসে হিযবুত তাহরীরের এমন ঝটিকা পোস্টারিং এর ব্যাপারটা মোটেও স্বস্তিকর না। সন্ত্রাস, মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজাধারী এই সংগঠনের এমন কার্যক্রম তাদের শক্তি জানান দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া। এই ধরনের ঝটিকা কার্যক্রম প্রশ্রয় পেলে পরবর্তীতে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে যেখানে আমরা কথা বলতে পারি না, সে জায়গায় কিভাবে হিজবুত তাহরীর পোস্টার লাগায় তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষাকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা ও ত্রাস সৃষ্টি করতে এ ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হঠাৎ করে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পোস্টারিংকে আমরা ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্টের অপতৎপরতা হিসেবে দেখছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এসব বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার আহবান জানাই।’

জঙ্গীবাদি যেকোন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ব্যাপারে চবি ছাত্রলীগ জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তারা চোরাগোপ্তাভাবে পোস্টার লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির কোনো কার্যক্রম নেই। পোস্টারিংয়ের বিষয়টি শুনেই আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো নামিয়ে এনেছি। চোরাগোপ্তাভাবে পোস্টার লাগিয়ে পালিয়ে গেছে তারা। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। অনভিপ্রেত পরিস্থিতি ঠেকাতে আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করছি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট