চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সুদীপ্ত হত্যা: কোথায় সেই আবু জিহাদ

নাজিম মুহাম্মদ  

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:১২ অপরাহ্ণ

নগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৮ জন গ্রেপ্তার হলেও ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন আবু জিহাদ নামের এক যুবক। সুদীপ্তকে পেটানোর সময় প্রতিবেশী লোকজন এগিয়ে আসতে চাইলে জিহাদ তার কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে পর পর পাঁচরাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছিলো। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে সদরঘাট এলাকায় অবস্থান করে হত্যাকারীদের সুদীপ্তর বাসা চিনিয়ে দিয়েছিলো আবু জিহাদ। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে থাকা জিহাদ ঘাটফরহাদবেগ এলাকার জনৈক বখতিয়ার উদ্দিন মজনুর ছেলে। তিনি বাকলিয়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ করিম টিটুর অনুসারী।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগরীর সদরঘাট নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি সুদীপ্ত হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন  (পিবিআই)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, সুদীপ্ত হত্যায় জিহাদ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে। ইতিমধ্যে তার বাবা মারা গেছেন। বাবার জানাজায়ও তাকে দেখা যায়নি। জিহাদকে পলাতক দেখিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হানিফ, নিয়াজ মোর্শেদ নিপু, মোক্তার হোসেন, রুবেল কান্তি দে, জাহিদুর রহমান জাহেদসহ অন্যদের সুদীপ্ত হত্যায় বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়া হয়। এর বাইরেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কিছু ছেলে ও মাসুমের বন্ধু মাসুদ করিম টিটুর অনুসারী আবু জিহাদ ছিদ্দিকী এ হত্যাকা-ে সম্পৃক্ত রয়েছে। হত্যায় পিস্তল, রিভলবার, লোহার পাইপ ও লাঠি ব্যবহার করা হয়েছে। যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল এবং সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ব্যবহার করা হয়। হত্যার ঘটনার সময় কে কোন দিকে থাকবে ঘটনার পর কীভাবে চলে যাবে তার একটি ম্যাপও করা হয়। টিটুর অনুসারী আবু জিহাদ ছিদ্দিকী পথ চিনিয়ে দিতে আগে থেকে সুদীপ্তর বাসার গলির মুখে অবস্থান নিয়েছিলো।

আবু জিহাদ ছিদ্দিকী সুদীপ্তের বাসার পথ চিনিয়ে দেয়ার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নেয়। আনুমানিক সাড়ে সাতটায় রুবেল কান্তি দে, মোজাম্মেল হক মুরাদ, মোক্তার হোসেন, নিয়াজ মোর্শেদ নিপু, মামুনুর রহমান রাব্বি, রাজিবুল ইসলাম রাজিব, ইব্রাহিম খলিল, জিয়াউল হক ফয়সাল ও ফয়সাল আহম্মেদ পাপ্পু সুদীপ্তর বাসার মেইন গেটে প্রবেশ করে। এসময় প্রতিবেশী চন্দন বিশ্বাস বাইরে পানি ট্যাপে স্নান করছিল। সুদীপ্ত কোন বাসায় থাকে জানতে চাইলে চন্দনের স্ত্রী শিল্পী বিশ্বাস সুদীপ্তকে ঘর থেকে ডেকে দেয়। সুদীপ্ত ঘুম থেকে উঠে বাসার বাইরে আসতেই নিয়াজ মোর্শেদ নিপুরা তাকে টেঁনে হেঁচড়ে বাসার মূল গেটের বাইরে নিয়ে আসে। তারা লোহার পাইপ দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটায়। মারধরের পুরো ঘটনা ভিডিও করেন মোক্তার।

সুদীপ্ত হত্যায় জড়িত খাইরুল নুর ইসলাম খায়ের ঘটনার পরদিন তার এক বন্ধুর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, সিটি কলেজের রাজনীতির বিষয় নিয়ে সুদীপ্তর সাথে প্রথমে জিহাদের ঝামেলা বাঁধে। সুদীপ্তকে পিটিয়ে আসার পর পর জিহাদ তার ফেসবুকে বাকলিয়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা টিটুকে সাথে নিয়ে ‘আলামত’ ক্যাপশান দিয়ে একটি ছবিও পোস্ট করেছিল। পরে সুদীপ্ত মারা যাবার ঘটনা জানাজানি হবার পর ফেসবুক থেকে সেই ছবি মুছে দেয়। ঘটনার পর থেকে জিহাদ আত্মগোপণ করেছেন।

সুদীপ্ত হত্যায় গ্রেপ্তার মোক্তার আহমদ আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, সুদীপ্ত হত্যায় তিনটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছিলো। এরমধ্যে একটি মোটরসাইকেলে  মোক্তার, ফয়সাল ও জাহেদ উঠেছিল। ওয়াসার মোড় পার হবার পর জাহেদ নিপুকে ফোন করে বলে তাদেরকে রিসিভ করবে। তখন আইনুল কাদের নিপু জাহেদের মুঠোফোনে একটি এসএমএস করে। এসএমএসে দেয়া ওই নম্বরটি ছিলো আবু জিহাদের। পরে ওই নম্বরে ফোন করে জিহাদের কাছ থেকে ঘটনাস্থলের (সুদীপ্তের বাসা) ঠিকানা জেনে নেয়। তারা ডিলাইট হোটেলের সামনে মোটরসাইকেলের গতি কমায়। সেখানে আগে থেকে আবু জিহাদ অপেক্ষা করছিল। গলির মুখে আগে থেকে দুটি সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়ানো ছিল।

মোক্তার তার জবানবন্দিতে বলেন, গলির ভেতর থাকা সিএনজি  অটোরিকশা সম্পর্কে জানতে চাইলে জিহাদ বলেন, সমস্যা নেই গাড়িগুলোতে আমাদের লোক আছে। সুদীপ্তকে বাসা থেকে টেনেহেঁচড়ে বের করা হয়। ৬/৭ জন মিলে সুদীপ্তকে লোহার পাইপ ও কাঠের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। এ সময় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে চেষ্টা করলে আবু জিহাদ তার কাছে থাকা পিস্তল থেকে পর পর দুই রাউন্ড গুলি করে। ঘটনার পর ফিরে আসার সময় ডিলাইট হোটেলের সামনে আরো এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে জিহাদ।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট