চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘মুজিববর্ষে সবাই ঘর পাচ্ছে, আর আমরা গৃহহীন হতে যাচ্ছি’

দাবি একটাই, পুনর্বাসন চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ৮:২৮ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ পতেঙ্গার লালদিয়ার চর। প্রায় ৫৭ একরের এ কর্ণফুলীর চরে ২৩শ’ পরিবারের বসবাস। প্রায় ১৪ হাজার মানুষের বসবাসের এই স্থান শীঘ্রই উচ্ছেদ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। হাইকোর্টের নির্দেশে এরইমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওই চরের বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ। গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে চর ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে পুনর্বাসন ছাড়া জন্মস্থান ছাড়বেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই চরের বাসিন্দারা।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় লালদিয়ার চরের সামনে ব্যানার, প্লেকার্ড আর ফেস্টুন হাতে নিয়ে মানববন্ধনের মাধ্যমে পুর্নবাসনের দাবি জানায় সেখানকার হাজারো মানুষ। উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির এ মানববন্ধনের ডাকে সাড়া দিয়েছে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা। তারাও উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি দ্রুত ওই চরে কেটে দেওয়া বিদ্যুৎ. পানি ও গ্যাস সংযোগ চালু করতে অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
মানববন্ধনে বেশকিছু প্লে-কার্ড গণমাধ্যমের নজর কাড়ে। যেখানে, একজন বৃদ্ধ মহিলাকে চেয়ারে বসে মানববন্ধনে অংশ নিতে দেখা যায়। যার হাতে থাকা প্লে-কার্ডে গোলাপি রঙের কালিতে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল, ‘রোহিঙ্গা না হয়ে বাংলাদেশি হলাম বলে কি পুনর্বাসন পাব না?’। এর একটু পরেই আরও একটি চেয়ারে প্লে-কার্ড নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় এক বৃদ্ধ পঙ্গু ব্যক্তিকে। তার হাতে থাকা প্লে-কার্ডে লেখা ছিল, ‘মুজিববর্ষে সবাই ঘর পাচ্ছে, আর আমরা গৃহহীন হতে যাচ্ছি’।
অন্যদিকে, বিশাল জনসমুদ্রের এই মানববন্ধনের একটি অংশে হাতে মুক্তিযুদ্ধের সনদ নিয়ে কান্না করতে দেখা যায় দুই ব্যক্তিকে। কেন এই সনদ নিয়ে কান্না করছেন জানতে চাইলে ওই দুই ব্যক্তি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই সনদটি আমার ভাই মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের। দেশের জন্য যুদ্ধ করে যিনি স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন আজ তার বসবাসের স্থানকে বলা হচ্ছে অবৈধ। আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, “আমাদের গৃহহীন করবেন না, আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দিন”।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন জানান, ‘এতগুলো মানুষ গৃহহীন হবে তা আমরা কেউ চাই না। যুগ যুগ ধরে তারা এখানে বসবাস করে আসছেন। আজ হঠাৎ করে নোটিশ দিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস আর পানির সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে উচ্ছেদ করবেন তা হতে দেয়া হবে না। যতদিন এই চরের বাসিন্দাদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা না হবে ততদিন এই চরের বাসিন্দারা কোথাও যাবে না। আমি এই বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি দ্রুত কেটে দেওয়া সার্ভিস সংযোগগুলোর চালুরও অনুরোধ করছি।’
উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আলমগীর হাসানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরী ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর শাহানুর বেগম এবং চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজম রনিসহ স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠেনর নেতৃবৃন্দরা।
মানববন্ধন শেষে উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. আলমগীর হাসান সাংবাদিকদের জানান, ‘বিমানবাহিনীর বর্তমান জহুর হক ঘাঁটি ছিল একসময় আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর কথায় বিমানবাহিনীর এই ঘাঁটি করার জন্য আমরা পিতৃভূমি ছেড়ে দেই। বঙ্গবন্ধু তখন আমাদের এই লালদিয়ার চরে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। আজ নিজের সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে আমরা হলাম অবৈধ দখলদার। আমরা উচ্ছেদের বিপক্ষে নয়। তবে উচ্ছেদের আগে আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে কাফনের কাপড় নিয়ে উচ্ছেদের বুলডোজারের মোকাবেলা করবো আমরা।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট