চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কমিটি ঘোষণা: চসিক কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে

ইফতেখারুল ইসলাম 

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১২:২৯ অপরাহ্ণ

নবনির্বাচিত মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহণের আগেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কর্মকর্তাদের দুইটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বেরও প্রকাশ ঘটেছে। সংগঠন দুইটির নামও একই রকম- ‘চসিক অফিসার্স এসোসিয়েশন’। এই দুইটি কমিটি গঠনের পর রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা আলাদা একটি ফোরাম গঠন করে। তবে অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাথে রাজস্ব বিভাগের ফোরামের দ্বন্দ্ব নেই।

১৮৬৩ সালের ২২ জুন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি গঠনের পর ১৫৮ বছরের ইতিহাসে চসিকের কর্মকতারা প্রথমবারের মতো সংগঠন করেছেন। একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পর কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকতা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীকে সভাপতি ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে প্রথমবারের মতো অফিসার্স এসোসিয়েশন ঘোষণা করা হয়। এর কিছুদিন পর অতিরিক্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ন কবির চৌধুরীকে সভাপতি এবং উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদ আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে একই নামে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।

পাল্টা কমিটির সভাপতি ও চসিকের অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কর্মকর্তা হুমায়ন কবির চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, তারা সবার সাথে আলোচনা না করেই একটি কমিটি ঘোষণা করেছেন। যেখানে চিকিৎসক এবং প্রকৌশলীদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাই সব বিভাগকে সাথে নিয়ে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি। তবে একটি সংস্থায় কর্মকর্তাদের দুইটি সংগঠন থাকা উচিত নয় উল্লেখ করে বলেন, তারা যে ভুলগুলো করেছে তা আমরা দেখিয়ে দিয়েছি। এখন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কমিটি গঠন করতে সম্মত হয়েছেন। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, তাদের দাবি ছিল যদি চসিকের কর্মকর্তাদের নামে কোন সংগঠন করতে হয় সেখানে সব বিভাগের যোগ্য কর্মকর্তাকে রাখতে হবে।

প্রথম ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, পরে যারা কমিটি করেছেন সেই কমিটির সভাপতিকে তাদের কমিটিতে সহসভাপতির পদ দিয়েছেন। তবে সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলমকে নিতে পারেননি। কারণ তারা কমিটি করেছেন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়ে। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা চাইলে আলাদা কমিটি করতে পারে। এমনকি রাজস্ব বিভাগ থেকেও তারা কাউকে নিতে পারেননি। যারা অস্থায়ী ভিত্তিতেও প্রথম শ্রেণির পদে কর্মরত আছেন তাদেরকেও নেয়া হয়েছে। তারপরও প্রথম শ্রেণির কোন কর্মকর্তা বাদ পড়ছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আপোষের বিষয়ে জানতে চাইলে পাল্টা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম পূর্বকোণকে বলেন, তারা যে কমিটি ঘোষণা করেছেন তা এখনো বহাল আছে। কারো কোন আপোষ বা আলোচনা হয়নি। তার কমিটির সভাপতির আপোষের বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, সভাপতির সাথে কি হয়েছে তা তার জানা নেই। কেউ যদি গোপনে আপোষ করে থাকে তা একটি বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া উচিত। রাতের আঁধারে তিনি কখনো আপোষ করবেন না উল্লেখ করে বলেন, যদি আনুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে কর্মকর্তারা এক হতে পারে তাহলে খুবই ভাল হবে। প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা যদি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের সংগঠন করতে চায় তাহলে সংগঠনের নামের সাথে প্রথম শ্রেণি কথাটা যুক্ত করতে হবে। তখন হয়তো দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা আলাদা সংগঠন করতে পারবেন। আর যদি শুধু অফিসার্স এসোসিয়েশন করে তাহলে সবশ্রেণির কর্মকর্তাকেই রাখতে হবে। কর্মকর্তাদের মাঝে বিভাজন করার দায়িত্ব তাদেরকে কেউ দেয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

চসিক রাজস্ব বিভাগ অফিসার্স ফোরাম :

চসিক রাজস্ব বিভাগের কর কর্মকর্তা লায়ন এ কে এম সালাউদ্দিনকে আহ্বায়ক এবং আরেক কর কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে এস্টেট অফিসার এবং ১৪ জন কর কর্মকর্তাকে সদস্য করে এই ফোরাম গঠন করা হয়।

ফোরামের আহ্বায়ক বলেন, তারা যে কমিটি করেছেন তা নিজস্ব বিভাগের ঐক্যের জন্যই করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব বিভাগের ৮৮/৮৯ ব্যাচের মধ্যে অনৈক্য ছিল। অথচ চসিকের হৃদপি- হল রাজস্ব বিভাগ। তাই তারা শুধু রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই সংগঠন করেছেন। কমিটির সদস্য করা হয়েছে এস্টেট অফিসার এবং সকল কর কর্মকর্তাকে। রাজস্ব বিভাগের বাইরের কেউ তাদের ফোরামে নেই।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট