চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘কসাই’ আকতারের এপারে বস্তি ওপারে দোতলা বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ জুন, ২০১৯ | ২:৪২ পূর্বাহ্ণ

চার মাস তিন দিনের ব্যবধানে আবারো আগুনে দগ্ধ হয়েছে ভেড়া মার্কেট বস্তি। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে শতাধিক ঘর। তবে সম্পদের ক্ষতি হলেও জানের ক্ষতি হয়নি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারির আগুনে নারী ও শিশুসহ নিহত হয়েছিল ৮ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি খাস জমি দখল করে এই বস্তিঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে কর্র্ণফুলী নদী ড্রেজিংয়ের মাটি ভরাট করে রাজাখালী খালের তীরে এই বস্তি গড়ে ওঠে। এটি চাক্তাই ভেড়া মার্কেট বস্তি হিসেবে পরিচিত। এই বস্তির নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন যুবলীগ নেতা আকতার হোসেন প্রকাশ ‘কসাই’ আকতার। গড়ে ওঠার পর থেকে এই বস্তি সা¤্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক তিনি। বস্তির জায়গা বিক্রি, কলোনি ভাড়া দিয়ে গ্রামে নির্মাণ করেছেন সুরম্য বাড়ি।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বেড়া মার্কেট বস্তির এক পাশে আগুন লেগে নারী ও শিশুসহ আটজন নিহত হয়েছিল। ১৮২ পরিবারের সম্পদ পুড়ে গিয়েছিল। সেই অগ্নিকা-ের ঘটনায় জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে ১০ পৃষ্টার প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।
এতে উল্লেখ ছিল, সরকারি খাস জমি দখল করে চাক্তাই বেড়া মার্কেট বস্তি গড়ে ওঠেছে। ফরিদ, সাত্তার, আবু তৈয়ব, নুরুল আমিন হাজি, আজিজ ও কবির নামে ছয় ব্যক্তি সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে কলোনি নির্মাণ করেছেন। ৩৫ বছর ধরে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা ভাড়া নিলেও ছয় দখলদারের কেউ কলোনিতে বসবাস করেন না। এছাড়া আরও ৪৮ জন ব্যক্তি সরকারি জমিতে অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন ওই বস্তিতে। কিন্তু মূল হোতা আকতার হোসেনের নাম না থাকায় বস্তিবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। তাদের দাবি, আকতারের নেতৃত্বে এই বস্তিতে নানা অপকর্ম চলে আসছিল।
চাক্তাই এলাকার বাকলিয়া মৌজায় অবৈধ দখলদারের হাত থেকে মূল্যবান জমি উদ্ধার করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়োজন বলে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু চার মাস পরও সেই জমি উদ্ধার করা হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে চাক্তাই ভেড়া মার্কেটে সরকারি জমি উদ্ধারে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা দায়েরের জন্য এসি ল্যান্ডের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বস্তিবাসী জানায়, বাকলিয়া বাস্তুহারা বস্তির নিয়ন্ত্রক ছিলেন জসিম উদ্দিন। বাস্তুহারা বস্তিঘর দখল করে কোটিপতি হয়েছেন জসিম। আর ভেড়া মার্কেট বস্তি দখল করে আকতারও লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। সরকারি জায়গা দখল করে দুইজনই গড়ে তুলেছেন দুই সা¤্রাজ্য। দখলদারিত্ব নিয়ে জসিম ও আকতারের মধ্যে বিরোধ ছিল। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জসিম কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। আকতার তার বিরোধিতা করেন। তার দ্বন্দ্বের জের ধরে জসিম যুবলীগ নেতা আকতারকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আঘাত করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভেড়া মার্কেট নির্মাণের পর ১৯৯৮ সালের দিকে কসাই কাজ করতেন আকতার হোসেন। সেই থেকে ‘কসাই আকতার’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আকতার রাতারাতি আওয়ামী লীগ বনে যান। পরবর্তীতে ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি হন। সেই থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নদীর তীরে গড়ে ওঠা সরকারি খাস জমি দখল করে বস্তিঘর নির্মাণ থেকে শুরু করে পুরো বস্তি নিয়ন্ত্রণ তার দখলে চলে যায়। বস্তিঘর নির্মাণের পর আকতারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে চাক্তাই ভেড়া মার্কেট শ্রমজীবী কল্যাণ সমবায় সমিতি। আকতার ওই সমিতির সভাপতি।
অভিযোগ ছিল, ভেড়া মার্কেট বস্তিতে দীর্ঘদিন ধরে মদ-জুয়ার আসর ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসছে। আকতারের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি গ্রুপ পুরো বস্তি নিয়ন্ত্রণ করত। বাকলিয়া, কোতোয়ালী ও চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা জুয়ার আসর থেকে মাসোহারা ও দৈনিক ভিত্তিতে ভাগ পেত। ভেড়া মার্কেট বস্তি থেকে জুয়ার আসর ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে আন্দোলন করা হলেও অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়নি সেই জুয়ার আসর।
আকতারের বাড়ি কর্ণফুলী নদীর ওপারে শিকলবাহা কোদ্যাল্লাপাড়ায়। তিনি শিকলবাহা মাস্টারহাটে কসাই কাজ করতেন। নগরীর ভেড়া মার্কেট এলাকায় এসে কসাই কাজ শুরু করেন এবং থাকার জন্য ভেড়া মার্কেটের পেছনে একটি ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করেন। সেই ঝুপড়ি থেকে বিশাল বস্তি দখলে নেয় আকতার। সরকারি খাস জমি দখল করে আকতার গ্রামের বাড়িতে দুইতলা বিশিষ্ট পাকা দালান নির্মাণ করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট