চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

ধোপে টিকেনি টিকার গুজব

তাসনীম হাসান 

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

কেউ গুজব ছড়িয়েছিলেন এই বলে করোনার টিকায় কিছু নেই, পানি ছাড়া। আবার কেউ তো আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে এই টিকা থেকে হতে পারে বন্ধ্যাত্ব। রাজনীতি-অপপ্রচারও কম হয়নি। কিন্তু দিনশেষে জয়ী হয়েছে টিকাই।

যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছিল গুজবের ডালপালা, সেখানেই এখন টিকা নেওয়ার ছবি দেওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিযোগিতা। টিকা কেন্দ্রগুলোতে চোখ মেললেই তাই এখন দেখা মিলছে মানুষের দীর্ঘ সারি। এ যেন টিকার উৎসব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেছেন ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৮ জন। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৫ জন করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে ১ লাখ ৪৫ হাজার ২০৩ জন পুরুষ এবং ৮১ হাজার ৫৫২ জন নারী রয়েছেন। টিকা নেওয়ার প্রবণতা শুরুর কয়েকদিনের চেয়ে এখন কয়েকগুণ বেশি।

টিকা নিয়ে মানুষের দ্বিধা ঝেড়ে ফেলার পেছনে বেশ কিছু কারণ অবশ্যই আছে। তার মধ্যে সরকার ও গণমাধ্যমের অব্যাহত প্রচার-প্রচারণা তো আছেই। সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, বিদেশি কূটনীতিকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও টিকা নিয়েছেন। তাদের দেখে মানুষ টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আর টিকা নেওয়ার পর বড় ধরনের পাশর্^প্রতিক্রিয়ার খবর এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি। এটিও মানুষকে টিকা নিতে আগ্রহী করে তুলেছে। তাই গুজবের ডালপালা সব ভেঙে মানুষ এখন ঝুকছেন টিকার দিকে। কারণ তাঁরা বুঝে গেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো টিকা গ্রহণ।

বাংলাদেশে টিকাগ্রহণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি করোনাভাইরাসের টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওই দিন ২১ জনকে টিকা দেওয়া হয়। পরদিন রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে ৫৪৬ জনকে পর্যবেক্ষণমূলক টিকা দেওয়া হয়েছিল। তখনো টিকা নেওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে সেভাবে আগ্রহ তৈরি হয়নি। এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে বদলে যায় দৃশ্যপট। এখন প্রতিদিনই বাড়ছে টিকা নিতে নিবন্ধনের হার।

৬৪ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড যৌথভাবে বিশ্বজুড়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেই জরিপে উঠে এসেছে দেশের ৬৪ শতাংশের মতো মানুষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে আগ্রহী।

প্রথমদিকে টিকা নিতে ভয় কাজ করলেও পরে নিজ থেকেই টিকা নিতে আগ্রহী হওয়াদের একজন মোহাম্মদ জাবেদ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই তরুণ পূর্বকোণকে বলেন, ‘ফেসবুক খুললেই দেখতাম টিকা নিয়ে নানা গুজব। তাই ভেতরে ভেতরে ভয় তৈরি হয়। কিন্তু পরে দেখি সব ভুয়া। তাই নিবন্ধন করে টিকা গ্রহণ করি। পরে মা-বাবাকেও টিকা দিই।’

সম্প্রতি টিকা নিয়েছেন নজরুল ইসলামও। তিনিও গুজবগুলোকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন। কীভাবে ভয় জয় করলেন এমন প্রশ্নে এই শিক্ষক বলেন, আসলে গুজবের পাশাপাশি বাইরের দেশগুলো থেকে খবর আসছিল টিকা নেওয়ার পর অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তখন মনে হয়েছিল টিকা নিতে যাওয়া ঠিক হবে কীনা। পরে দেখছি যারা টিকা নিচ্ছেন তাদের খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। তাই নিজেও টিকা নিয়ে নিই। কোনো সমস্যা অনুভব করিনি।’

টিকা নেওয়ায় বিশ্বে বাংলাদেশ ১১তম!

করোনার তথ্য নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’ সমীক্ষা চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির সমীক্ষা অনুযায়ী টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা অনুপাতে শতাংশের হারে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে ইসরায়েল। গতকাল পর্যন্ত দেশটির ৭৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ মানুষ টিকা নিয়েছেন। এরপরে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। গতকাল পর্যন্ত দেশটির ৫৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছেন। এরপরের অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ। ১১ তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ০ দশমিক ৯৬ শতাংশ মানুষ এরমধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন।

তাই এখনো যারা টিকা নিয়ে দ্বন্দ্বে ভুগছেন তাঁদের জন্য বিশিষ্টজনের পরামর্শ, ‘গুজব তো গুজবই। জীবন আগে। সেই জীবনের জন্যই টিকা নিন।’

পূর্বকোণ /এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট