চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আয়বর্ধক প্রকল্প নেই একযুগ: অর্থসংকটে ধুঁকছে চসিক

ইফতেখারুল ইসলাম  

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১২:০২ অপরাহ্ণ

একদিকে অর্থসংকটে ধুঁকছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। অপরদিকে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ না করে চসিকের অনেক ভূ-সম্পত্তি ইজারা এবং সাময়িকভাবে ভাড়া দেয়া অব্যাহত রেখেছে সংস্থাটি। একারণে চসিক বঞ্চিত হচ্ছে আশানুরূপ আয় থেকে। কিন্তু ফলপ্রসূ আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণে চসিকের আগ্রহও নেই।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চসিকের অনেক ভূ-সম্পত্তি আছে, যা সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করলে বাড়তি আয় হতো। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসেও বেশ কিছু ভূ-সম্পত্তি ইজারা দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে লালদিঘি মসজিদ সংলগ্ন গণশৌচাগার, ঝুমুর সিনেমা হলের উত্তর পাশে জয় পাহাড় মৌজার বিএস দাগের ৫৪০ বর্গফুট খালি জায়গা ভাড়ায় সাময়িকভাবে ব্যবহারের অনুমতি, মাদারবাড়ি ওয়ার্ড অফিস সংলগ্ন ৬৫৩৪ বর্গফুট খালি জায়গা সাময়িকভাবে ব্যবহারের অনুমতি, ইউনুছ মিয়া মেটারনিটি সংলগ্ন ১০৬৪ বর্গফুট খালি জায়গা সাময়িকভাবে ব্যবহারের অনুমতি, মাদারবাড়ি এপার্টমেন্ট সংলগ্ন একতলা ২০০ বর্গফুট ভবনের অস্থায়ী বরাদ্দ, বিআরটিসি মার্কেট সংলগ্ন ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে সেমিপাকা ২৮৯ বর্গফুট অস্থায়ী বরাদ্দ, সাগরিকা রোডের চৌরাস্তার উত্তর পূর্ব পাশে খালি জায়গা বরাদ্দ, কেসিদে (পাবলিক টয়লেট) গণশৌচাগারের পাশে পরিত্যক্ত ৩৭৬ বর্গফুট খালি জায়গা, শাহ আমানত মার্কেটের সম্মুখে আইএফআইসি ব্যাংকের বারান্দার প্রথম তলার ছাদের উপর ৩৯০ বর্গফুট খালি জায়গা সালামি ও মাসিক ভাড়ায় ব্যবহারের অনুমতি, শাহ আমানত মার্কেটের সিঁড়ির উত্তর পাশে বারান্দায় ১৫৩ বর্গফুট খালি জায়গা সালামি ও মাসিক ভাড়ায় ব্যবহারের অনুমতি, কেসিদে (পাবলিক টয়লেট) গণশৌচাগারের পাশে পরিত্যক্ত ৩৭৬ বর্গফুট খালি জায়গা ও ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ভবনের উত্তর-পশ্চিম পাশের ১৭৫৭ বর্গফুট খালি জায়গা ভাড়া দেয়াসহ ১২টি খালি ও পরিত্যক্ত জায়গা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত এক যুগ ধরে এধরনের বহু জায়গা এবং সম্পত্তি অস্থায়ী ইজারা দিয়েছে। যেখান থেকে ইজারা গ্রহীতারা আর্থিকভাবে বেশ ভালই লাভবান হচ্ছে। কিন্তু চসিকের আয় বাড়ছে না।

জানা যায়, চসিক অতীতে আবাসন, পরিবহন, গণশৌচাগার, মার্কেট নির্মাণসহ নানা আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে নগরে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৩৭টি গণশৌচাগার নির্মাণ, গণপরিবহন সংকট নিরসনে ২০০৬ সালের ১ এপ্রিল ১০টি ভাড়া বাস (প্রতিটি বাসে ৪৮ সিট) নিয়ে ‘নিরাপদ মহিলা ও শিশু যাত্রীসেবা’ চালু, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে স্বাধীনতা পার্ক নির্মাণ, ২০০৭ সালে ‘সিটি কর্পোরেশন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’ নামে ওষুধ কারখানা নির্মাণ, বর্জ্য থেকে লাকড়ি উৎপাদন, আটটি আবাসন প্রকল্প নির্মাণ, ছোট-বড় ৪৮টি মার্কেট (প্রতিবছর রাজস্ব আদায় হয় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা) নির্মাণ করে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত প্রায় ১২ বছর ধরে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। একারণে চসিকের আর্থিক সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এমনকি চসিকের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ গৃহকর আদায় করেও সংস্থাটি অর্থের অভাবে ধুঁকছে।

জানতে চাইলে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অতীতে যেসব আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তার কোনটিতেই লাভ হয়নি। নিজস্ব লোকবল দিয়ে প্রকল্প পরিচালনা করতে গেলেই লোকসান হচ্ছে। তাই চসিক আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করছে না। তবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর মাধ্যমে উদ্যোগ নিলে প্রকল্প লাভজনক হত উল্লেখ করে বলেন, জমি সিটি কর্পোরেশনের বিনিয়োগ কোন বেসরকারি উদ্যোক্তার হলে এবং ব্যবস্থাপনায় সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃত্ব থাকলে প্রকল্প অবশ্যই লাভজনক হতো। কারণ কোন বেসরকারি উদ্যোক্তা তার আর্থিক ক্ষতি হতে দেবে না। উদ্যোক্তা যখন লাভ করবে, লাভের অংশ সিটি কর্পোরেশনও পাবে। তিনি বলেন, ‘লালদিঘি  মসজিদ সংলগ্ন গণশৌচাগারটি অতীতেও ইজারা ছিল। গত ১ জানুয়ারি থেকে আবার ইজারা দেয়া হয়েছে। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় এক ঘণ্টা সময় বিনামূল্যে শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট