চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইভিএম নয়, ব্যালটেই ভোট বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:১৪ অপরাহ্ণ

ভোটের খরা ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। চসিক নির্বাচনের ২৮ দিনের মাথায় উৎসব ছিল পৌর নির্বাচনে। ভোটের হারও বাড়ল প্রায় দুই-তিন গুণ। তবে আগের মতো ভোটের মধ্যে শঙ্কা-আতঙ্ক ও সহিংসতা রোধ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও ভোটে আস্থা ফেরানোর দাবি বিশিষ্টজন ও নির্বাচন বিশ্লেষকদের।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে জেলার পটিয়া, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পটিয়া ও চন্দনাইশে পুরো প্যানেলে নির্বাচন হয়। সাতকানিয়ায় মেয়র ছাড়াও কাউন্সিলর পদে ভোট হয়।

পটিয়া পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং চন্দনাইশে কাগজের ব্যালটে ভোট হয়।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পটিয়া পৌরসভায় ভোটের হার ছিল ৪৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। চন্দনাইশে ভোটের হার ৭২ দশমিক ৬০ শতাংশ। ইভিএমের চেয়ে কাগজের ব্যালটে ভোটের হার বেশি। অর্থাৎ ব্যালটের চেয়ে ইভিএমের ভোটের ব্যবধান ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

সুশাসনের  জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এখন সোনার হরিণ। ইভিএম মেশিনে বিশেষ প্রার্থীর বিশেষ লোকজন পাহারা দিয়ে থাকে। ইভিএমের বাটমে টিম দেন সেই বিশেষ লোকগুলো। পটিয়া পৌরসভায়ও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ভোটের উপর মানুষের আস্থা এখন শূন্যের কোটায়।’

পটিয়া পৌরসভার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭৮৭ ভোট। ভোটকেন্দ্র ছিল ১৮টি। ভোট দিয়েছেন ১৮ হাজার ৩২৮ জন। ভোটের হার ৪৬.০৭ শতাংশ। সবচেয়ে কর্ম ভোট পড়েছে এ এস রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে ভোটের হার ২১.০৪ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে সুচক্রদ-ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ভোটের হার ৫৭.৩৪ শতাংশ। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আইয়ুব বাবুল ১৪ হাজার ৮৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। জামানাত হারিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য তিন প্রার্থী। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে অন্যান্য প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান আগের মতোই বড় ফারাক। বিএনপি প্রার্থী সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম ৫টি কেন্দ্রে ৩০ ভোটের কম পেয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী নিজের ভোটকেন্দ্র এ এস রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন ৪৭ ভোট। এ কেন্দ্রে আ. লীগ প্রার্থী পেয়েছেন ২৩৮ ভোট। আ. লীগ প্রার্থী নিজের ভোটকেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন ৭০৫ ভোট। বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন ২২ ভোট।

সুজনের সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘ইভিএমে ভোট কাউন্টিং হয় না, ঘোষণা হয়। ভোটের এই ফলাফলে মানুষের আস্থা আছে বলে মনে করছি না। কারণ ইভিএমের বাটনে টিপ দেয় বিশেষ প্রার্থীর বিশেষ লোক।’

গত ২৭ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৭৩৫ কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ভোট হয়। আ. লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী নৌকা প্রতীকে তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পান ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। ভোটের হার ছিল ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও বিশিষ্টজনেরা। চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনেও ভোট পড়েছিল ২৩ শতাংশের কম। এই তিনটি নির্বাচনই হয়েছে ইভিএম মেশিনে।

অপরদিকে, চন্দনাইশ পৌরসভায় ভোট হয়েছে কাগজের ব্যালটে। মেয়র পদে আ. লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহাবুবুল আলম খোকা ১৫ হাজার ৯৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এলডিপি প্রার্থী আইনুল কবির পেয়েছেন এক হাজার ৯১৬ ভোট। ভোটের হার ৭২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর সিকান্দর খান বলেন, ‘মানুষ এখনো কাগজের ব্যালটে ভোট দিতে অভ্যস্ত, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।’

পৌর নির্বাচনে ভোটের হার বেশি হওয়ার বিষয়ে গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, আত্মিক ও পারিবারিক সম্পর্কের কারণে হয়েছে বলে জানান নির্বাচন বিশ্লেষকেরা।

নির্বাচন বিশ্লেষক প্রফেসর সিকান্দর খান বলেন, ‘গ্রামে কয়েক পুরুষের বসবাস রয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। সেই আন্তরিক সম্পর্কের কারণে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়। শহরে এটা অনুপস্থিত। তাই সিটি নির্বাচনের চেয়ে পৌর নির্বাচনে ভোটের হার বেশি।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট