চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কার্ডধারীদের এক-তৃতীয়াংশ ভুয়া

সন্দ্বীপে সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছে না অর্ধেক জেলে

নিজস্ব সংবাদদাতা, সন্দ্বীপ

২১ জুন, ২০১৯ | ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

৩৫ বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন হরিবন্ধু জলদাস। ৫ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। সরকার ঘোষিত ৬৫ দিন মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীতে মাছ শিকার বন্ধের সাথে তার পরিবারের দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। প্রকৃত জেলে হওয়ার পরেও তার কাছে নেই জেলের কার্ড। দুইবার ছবি তোলার পরেও তার নাম সরকারি খাতায় জেলে হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাই মাছ ধরা বন্ধে সরকারি সহোযোগিতা জুটেনি তাদের ভাগ্যে। সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বৈষ্ণব বাড়ির বাসিন্দা হরিবন্ধু জলদাসের একই বাড়ির মিলন জলদাস, বিন্দু জলদাস, যুবধন জলদাসের কাছেও নেই এই কার্ড।
বৈষ্ণব বাড়ির মত সারিকাইত ইউনিয়নের আরো প্রায় দুই শতাধিক জেলে বাদ পড়েছেন মৎসজীবী কার্ড থেকে।
অন্যদিকে, মাছ ধরা ও মাছের ব্যবসার সাথে সম্পর্ক নেই কিন্তু মৎস্যজীবী কার্ড করে সরকারি সুবিধা নিচ্ছে এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এদের বেশির ভাগ সংশ্লি­ষ্ট ওয়ার্ডের তালিকা প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিকটাত্মীয়। তালিকা তৈরির সময় কৌশলে তাদের নাম উঠিয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা টাকার বিনিময়ে অনেক প্রবাসীদের মৎসজীবীর খাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সন্দ্বীপের সারিকাইত, মাইটভাঙ্গা, মুছাপুর, আজিমপুর, মগধরা, বাউরিয়া, হরিশপুর, রহমতপুর, কালাপানিয়া, দীর্ঘাপাড়, উরিরচর ইউনিয়নের প্রায় আট হাজার জেলে মাছ শিকার ও ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী সন্দ্বীপে মৎসজীবীর কার্ড রয়েছে ৩ হাজার ৮৯ জনের। এছাড়া আবেদন রয়েছে আরো ১ হাজার ৭শ ৮৩ জনের। তবে আবেদনকারী সহ মোট ৪ হাজার ৮ শ ৭২ জনকে ৪০ কেজি চাউল দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি উপজেলা মৎস্য অফিসের। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের জেলেদের দাবি, তাদের এক তৃতীয়াংশ জেলেরা সরকারি কার্ডের তালিকায় নেই। ফলে বন্ধের মৌসুমে জাল বন্ধ রাখার সাথে চুলায় হাঁড়ি উঠানো বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা জাগ্রত জলদাস সমিতির নেতা নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, সন্দ্বীপে প্রকৃত জেলেদের প্রায় অর্ধেকেরই মৎসজীবী কার্ড নেই। অনেক জেলে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন ফল পায়নি। কার্ড ছাড়া সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা তারা পাচ্ছেনা। দ্রুত প্রকৃত জেলেদের তালিকা করে সহযোগিতা না করলে জেলেরা না খেয়ে মরে যাবে।
জেলেদের অভিযোগ স্বীকার করে আজিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের কার্ডধারী মৎসজীবীর সংখ্যা ১৬০ জন। এর ভিতর যারা পুকুরে মাছ চাষ করছে তারাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু সরাসরি নদীতে গিয়ে মাছ ধরে এমন জেলের সংখ্যা ৪ শতাধিক।
একই মতামত পোষণ করে সারিকাইত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম পনির বলেন, তালিকাগুলো পুরনো হওয়ায় এগুলোতে অনেক সমস্যা রয়েছে। তাই নতুন করে প্রকৃত জেলেদের কাছে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছাতে না পারলে তারা হয় না খেয়ে মরবে, না হয় আইন অমান্য করে সাগরে নামবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট