চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মিরসরাইয়ে পর্যটনে উপেক্ষিত ৫ স্পট

এনায়েত হোসেন মিঠু, মিরসরাই

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ২:৩৮ অপরাহ্ণ

সরকার বিভিন্ন সময় দেশে পর্যটন শিল্প বিকাশের কথা বললেও কার্যত তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আলোর মুখ দেখছে না মিরসরাই উপজেলার পর্যটন সম্ভাবনাময় ছয়টি স্থান।

২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মহামায়া সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প উদ্বোধন করতে এসে এখানে কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র বাস্তবায়নের কথা বললেও এগারো বছর পরও এর কোন অগ্রগতি হয়নি। পর্যটন কর্পোরেশনের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এখানকার পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে সরকারকে সরেজমিন প্রতিবেদন দিলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

এখানকার পাহাড়ি এলাকার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া প্রকল্প ছাড়াও মুহুরী প্রকল্প, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী, খৈয়াছড়া জলপ্রপাত, করেরহাট ডাকবাংলো ও পাহাড়ি এলাকার বাওয়াছড়া প্রকল্প পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে। যথাযথ নজরদারি পেলে মিরসরাইয়ে কমপক্ষে ছয়টি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্র না হয়েও এ ছয়টি স্থানে বিভিন্ন মৌসুমে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ঢল নামে। এ ধরনের অপার সম্ভাবনা থাকার পরও মিরসরাইয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে না ওঠায় এখানকার মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

১৯৯৬ পরবর্তী ৫ বছর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এখানকার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকলেও তিনি এখানে পর্যটন কেন্দ্র বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন। অবশ্য ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তিনি মিরসরাইয়ে অন্তত ২টি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এদিকে ২০১৪ সালে সরকারের বনবিভাগ কোন প্রকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াই মহামায়াকে ইকো-পার্ক নাম দিয়ে দেশের বৃহত্তর লেক ‘মহামায়া’ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়। তবে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের পর্যটন কর্পোরেশন বেশ কয়েকদফা উদ্যোগ নিয়েও পরবর্তীতে অজানা কারণে চুপ হয়ে গেছে। সাম্প্রতিককালে উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ে ৮ স্তরবিশিষ্ট বৃহদাকার জলপ্রপাত নিয়ে গণমাধ্যম বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তুমুল হৈচৈ হলেও কার্যত নিরাপত্তা ও যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় ঝর্নার সৌন্দর্য উপভোগ করা পর্যটকদের কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।

নাম ও পদবি প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা পূর্বকোণকে জানান, ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মিরসরাইয়ে পর্যটন স্পট গড়ে তোলার ঘোষণা দিলে ২০১১ সালে আমরা মহামায়া এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে খুব দ্রুত একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম। এরপর এটি কি অবস্থায় আছে তা আর আমার জানা নেই।

পর্যটন কর্পোরেশনের কক্সবাজার ইউনিটের উপ-ব্যবস্থাপক সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম ইউনিটের দায়িত্বে থাকাকালীন মুহুরী প্রজেক্ট এলাকাকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সে কমিটিতে আমি নিজেও সদস্য ছিলাম। সেইসময় সেখানে একটি রিসোর্ট নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি কি অবস্থায় আছে তা আমার জানা নেই’।

মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, ‘প্রথম ধাপে মহামায়াকে ইকো-পার্ক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হবে। তারপর পর্যটনের অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে কাজ করা যাবে। ইতিমধ্যে আমি খৈয়াছড়া ঝর্না ঘুরে এসেছি। অসম্ভব সুন্দর একটি স্থান। এটি নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট