চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

রেল ভ্রমণ: অবাঞ্চিতের উৎপাতে অতিষ্ঠ যাত্রীরা

আল-আমিন সিকদার 

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:১৯ অপরাহ্ণ

যাত্রীসেবা নিশ্চিতে রয়েছে রেলের নানা পদক্ষেপ। যাত্রীদের মানসম্মত খাবার নিশ্চিতেও প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে দেয়া হয়েছে ক্যাটারিং সার্ভিস। স্টেশনেও রাখা হয়েছে ভাসমান দোকান। প্রয়োজনীয় পানি থেকে শুরু করে শুকনো খাবার মিলে এসব দোকানে।  এত আয়োজনের পিছনে রয়েছে ট্রেন হকারমুক্ত করা। অথচ, হকারমুক্ত করার এ আয়োজনের ফাঁদেই পড়েছে রেল। ট্রেনে হকার উৎপাতের পিছনে রয়েছে স্টেশনের এসব ছোট দোকানগুলো।

এছাড়াও, হিজড়া ও ভিক্ষুকদের উৎপাতেও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রেল যাত্রীরা। যা স্বচক্ষে দেখেও নীরব রেল প্রশাসন। এ যেন, যাত্রীর অপচ্ছন্দই রেলের পচ্ছন্দ হওয়ার ইঙ্গিত। তথ্য রয়েছে, ট্রেনে দায়িত্বরত রেলের নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও রেল পুলিশদের ম্যানেজ করেই এই উৎপাত সৃষ্টি করে বেশকিছু সিন্ডিকেট। তাইতো, এসব নিয়ন্ত্রণে গার্ড ও পুলিশকে মাসের পর মাস চিঠি দিয়েও কোন সুফল মিলছে না বলে মন্তব্য করেছে রেলের বাণিজ্যিক বিভাগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রেনে হকার বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিভিন্ন স্টেশনে থাকা হকারদের সিন্ডিকেট। স্টেশনে দোকান না থাকলে ট্রেনে উঠে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না কেউ। উঠতে হলে দিতে হবে মাসিক মাসোয়ারা। অন্যথায়, ট্রেন থেকে নামিয়ে দিবে রেলের গার্ড ও রেল পুলিশের সদস্যরা। কারণ, ট্রেনে হকার তোলার বিনিময়ে দৈনিক ও মাসিক মাসোয়ারা তুলে দেয়া হয় স্টেশন ও ট্রেনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও রেলের আরএনবি সদস্যদের কাছে। একইভাবে পুলিশ ও আরএনবি সদস্যদের ম্যানেজ করে যাত্রীদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে হিজড়ারা। হিজড়া এলাকাভিত্তিক এ চাঁদা বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। ভিন্ন ভিন্ন স্টেশনে এবং চলন্ত ট্রেনেও চলে তাদের এ চাঁদাবাজি। প্রতিটি স্টেশনে অবাঞ্চিতদের এ উৎপাত থাকলেও সব থেকে বেশি উৎপাত ঘটছে চট্টগ্রাম, ফেনী ও সিলেট স্টেশনে।

তথ্য রয়েছে, ফেনী স্টেশনে ট্রেনে হকার বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ করছে রেলের বাণিজ্যিক দপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে দোকান পরিচালনাকারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। যিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চালিয়ে আসছে হকার বাণিজ্য। অবশ্য এর তথ্যও রয়েছে রেলের বাণিজ্যিক দপ্তরে। দপ্তর থেকে এই ব্যক্তিকে হুঁশিয়ার করা হলেও এখনও ট্রেনে চলছে এ হকার বাণিজ্য। সাথে হিজড়া ও ভিক্ষুকদের উৎপাততো রয়েছেই।

গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে হকারদের এ উৎপাতের কথা উল্লেখ করে একটি ছবিও আপলোড করেছেন এক যাত্রী। যেখানে হাতে থালা নিয়ে পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে এক হকারকে। সাথে এসি কোচেও ছিল স্ট্যান্ডিং যাত্রী। সাইফ জাকারিয়া নামে ওই যুবক এমন চিত্রের ৩টি ছবি দিয়ে লিখেন, ‘চট্টগ্রাম-সিলেট বাংলাদেশ রেলওয়ে এসি কোচের অবস্থা। বাদ নেই কেউ। হকার, হিজরা থেকে শুরু করে সবাই ঢুকে। টাকা খুঁজে আরো গা ধরে। নর্মাল আর এসির মধ্যে পার্থক্য কোথায়? অনেকে তো ৭৫০ টাকার টিকেট না কেটে, অল্প টাকা দিয়ে এসি কোচে করে চলে যায়। কিছুক্ষণ এই সিট, কিছুক্ষণ ওই সিট এইভাবে। আফসোস। দেখার কেউ নাই।’

সাইফ জাকারিয়া নামে ওই যুবকের রেল ভ্রমণ নিয়ে এই আফসোস তুলে ধরা হয়েছিল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যক কর্মকর্তা মো. আনসার আলীর কাছে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ট্রেন হকারমুক্ত করতে ও হিজড়ামুক্ত করতে আরএনবি ও রেল পুলিশকে প্রায় প্রতিমাসে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তেমন কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। কেন এমনটা হচ্ছে, এটা বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ সমস্যা সমাধান হবে না।’

হকার সিন্ডিকেটে স্টেশনের লাইসেন্স প্রাপ্ত হকররাই জড়িত রয়েছে এমন তথ্য তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘এমন একটি অভিযোগ এসেছিল ফেনী স্টেশনের এক হকারের বিরুদ্ধে। তিনি নাকি ট্রেনে হকার তুলে ব্যবসা করতেন। এটা শোনার পরপরই আমরা তাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছি। পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল করার কথাও বলেছি। আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।’

ট্রেন হকার ও হিজড়ামুক্ত করতে আরএনবির ভূমিকা কেন প্রশ্নবিদ্ধ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম স্টেশনে দায়িত্বরত আরএনবির পরিদর্শক মো. সালামত পূর্বকোণকে বলেন, ‘ট্রেনেতো দূরের কথা স্টেশনেই হিজড়া প্রবেশ নিষেধ। আর হকাররা হয়ত অন্য স্টেশন থেকে উঠে চট্টগ্রাম স্টেশন পর্যন্ত চলে আসে।’ আরএনবির এই পরিদর্শকের অস্বীকারের পর প্রতিবেদক স্টেশনে হিজরা প্রবেশের ছবি আছে জানালে তিনি বলেন, ‘এখনতো বন্ধ। ছবি মনে হয় আগের। যদি এমন খবর আপনার কাছে আসে আমাকে জানালে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিব।’

একই প্রশ্ন করতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার পরিদর্শক কামরুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট