চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাদ যায়নি কোন অপরাধীই!

ইফতেখারুল ইসলাম 

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

কিশোর গ্যাং লিডার, মোবাইল চোর, চাঁদাবাজ, বিবাহিত এবং ধর্ষণ মামলার আসামি সব অপরাধীই আছে নগর ছাত্রলীগের ঘোষিত ১৩ ইউনিটের কমিটিতে। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) নবগঠিত মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ককে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে, তিনটি ইউনিটে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছে নগর ছাত্রলীগের অপর একটি অংশ। নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল আলম রণি পূর্বকোণকে জানান, নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিথুন মল্লিক এবং যুগ্ম আহবায়ক রাসেল স্বাক্ষরে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক যেসব ইউনিটে কমিটি ঘোষণা করেছেন সেসব ইউনিটে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হবে উল্লেখ করে বলেন, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে বোরহান উদ্দিন ইমনকে সভাপতি এবং রবিউল ওয়াহব কমলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। পাহাড়তলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে সাজিদ হোসেন স্বাক্ষরকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে কাজী রবিউল ইসলাম ফাহাদকে। বাকলিয়া থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে শহিদুর রহমান মানিককে এবং যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে আবদুল্লাহ আল মামুনকে।

এদিকে, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ইমু-দস্তহীর গত বুধবার মহসিন কলেজের কাজী নাঈমকে আহ্বায়ক করে মিজানুর রহমান, আনোয়ার পলাশ, জয়জিৎ চৌধুরী, মাঈমুন উদ্দিন মামুন, রবিউল হোসেন কমল ও বোরহান উদ্দিন ইমনকে যুগ্ম-আহবায়ক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় ।

নগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীরা সাথে আলাপকালে অভিযোগে তারা বলেন, মনসিহন কলেজের আহ্বায়ক কাজী নাঈমের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত নিজ দলীয় ব্যানার ছেঁড়ার অভিযোগ উঠে। এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছিল। এছাড়া চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিবির তকমা দিয়ে মোবাইল কেড়ে নেয়ার অভিযোগও উঠে আহ্বায়কের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মী তাকে হাতেনাতে ধরে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রসংসদে এনে পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন। মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুটি মামলা হয় বলে বঞ্চিতরা জানিয়েছেন। এই কমিটির ২৪ নম্বর সদস্য সাইফুল ইসলাম বিবাহিত।

মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মায়মুন উদ্দীন মামুন পূর্বকোণকে বলেন, রাতের আঁধারে অবৈধ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে মোবাইল চুরির অপরাধে গণধোলাই খেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতেও দেখা যায় কাজী নাঈমকে। কমিটি বাতিলের দাবিতে (মায়মুন উদ্দীন মামুন ও আনোয়ার হোসেন পলাশের নেতৃত্বে) মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলবে উল্লেখ করে বলেন, কমিটিতে যারা বড় বড় পদ পেয়েছেন তারা কেউই ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর শিবিরের সাথে সংঘর্ষের সময় ছিল না। মোবাইল চোর, বিবাহিত, মাদকাশক্ত, ছাত্রদল-শিবিরের কর্মীদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। তাই এই বিতর্কিত কমিটিকে কোন অবস্থাতেই কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে দেয়া হবে না।

এদিকে, গতকাল (বৃহস্পতিবার) পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মোহাম্মদ হোসেনকে। তিনি বিবাহিত এবং একটি হত্যা মামলার আসামি বলে অভিযোগ এসেছে। কথা বলার জন্য ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, এজাহারে হোসেনের নাম নেই।

চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম নিয়মিত ছাত্র নন এবং আফমি প্লাজায় ব্যবসা করে বলে বঞ্চিতদের অভিযোগ। এছাড়া সহ-সভাপতি আওয়ারাজ ভূইয়া রওনক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কমিটির সহ-সভাপতি নাইমুল হাসান তুষারের নাম থানার কিশোর গ্যাং তালিকায় আছে।

১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ইভান থানা পুলিশের তালিকায় এক নম্বর কিশোর গ্যাং লিডার। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারামারির একাধিক মামলা আছে।  ১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ড মিটির সহ-সভাপতি হায়দার আলী বিবাহিত বলে বঞ্চিতদের অভিযোগ। বায়েজিদ থানা ছাত্রলীগের এক নম্বর যুগ্ম-আহবায়ক রুবেল খান ধর্ষণ মামলার আসামি বলে অভিযোগ উঠেছে। হালিশহর থানা কমিটিতে সাইকেল চুরির আসামি রয়েছে বলে ক্ষোভ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।

পাহাড়তলী এলাকার ছাত্রলীগ কর্মী জহিরুল ইসলাম মিজান বলেছেন, অছাত্র, বিবাহিতদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়তলী থানা ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই। ভাইদের যারা হাজিরা দেয় তাদের জায়গা হয়েছে। তাই এই কমিটি বয়কট করেছি।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের মোবাইলে একাধিকার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুমতিক্রমে এসব কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে। কোন ত্যাগী নেতাকর্মী যাতে বাদ না পড়ে সেই নির্দেশনা আছে। কমিটিতে যাদের নিয়ে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। অপরাধী হলে অবশ্যই কমিটি থেকে বাদ পড়বে।

উল্লেখ্য, এক বছর আগে বিতর্কিতদের নিয়ে চান্দগাঁও ও ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেছিল নগর ছাত্রলীগ। সেসময় ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়, এমনকি ইমু দস্তগীরকে নগর কমিটির অর্ধশত পদধারী নেতা অনাস্থা জানান। অভিযোগ তদন্তে কেন্দ্র থেকে তদন্ত দল আসে চট্টগ্রামে। তারা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও যাচাই-বাছাই করে তথ্য প্রমাণ নিয়ে ঢাকায় যান। সেসময় ৭ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা থাকলেও, এক বছরেও সুরাহা দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সংসদ।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট