চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গবেষণায় চট্টগ্রামের নারীদের জয়জয়কার

ইমাম হোসাইন রাজু 

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:০১ অপরাহ্ণ

একটা সময়ে ধরে নেয়া হতো একজন নারীর পড়াশোনার গন্ডি সর্বোচ্চ কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। একজন নারী গবেষক, প্রযুক্তিবিদ কিংবা বিজ্ঞানী হতে পারে সেটিও একসময়ে ছিল স্বপ্নের মতো। কিন্তু সেই বাস্তবতা এখন পুরোই ভিন্ন। নারীরা এখন উদ্ভাবন করছেন সফটওয়্যার, এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিতে, গবেষণা করছেন টিকা কিংবা বংশগত রোগ নিয়ে। পিছিয়ে নেই রাসায়ন বা পদার্থ বিজ্ঞানের গবেষণাতেও। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই চট্টগ্রামের নারীরা।  রক্ষণশীল পরিবেশে আজ থেকে ৫০ বছর আগে যেখানে হাতেগোনা কয়েকজন নারী বিজ্ঞান গবেষণায় ছিলেন। এখন সে জায়গায় চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারি অন্তত দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী গবেষক আছেন দুই শতাধিক। কেউ গবেষণা করছেন কমপিউটার প্রযুক্তি নিয়ে, কেউ সফটওয়্যার, জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা গাছের বিভিন্ন গুণাগুণ নিয়ে। কেউবা আবার রাসায়নিক জৈবপ্রযুক্তি নিয়ে। আবার পদার্থ বিজ্ঞানের নতুন সব তথ্য নিয়েও কাজ করছেন অনেকেই। 

তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামের নারীরা শুধু চট্টগ্রামেই নয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্থান করে নিয়েছেন। বিগত পাঁচ বছরে একের পর এক প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র। তাদের হাত ধরে ওঠে এসেছে বিভিন্ন নতুন নতুন উদ্ভাবন। কেউ কেউ আবার পেয়েছেন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পদকও। বিগত কয়েক বছরের স্কোপাস গবেষণা র‌্যাঙ্কিং এবং বিভিন্ন ডাটাবেজে স্থান করে নিয়েছেন চট্টগ্রামের শতাধিক নারীরা। তারমধ্যে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন পাঁচজন নারী বিজ্ঞানী। বিগত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি গবেষণা নিয়ে যারা কাজ করেছেন কিংবা উল্লেখযোগ্যদের এ পাঁচজন হলেন : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের সাবেক চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বানু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড.তাফসী ঘোষ রায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ- বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. লুলু ওয়াল মরজান, ড. নাজনীন নাহার ইসলাম, অধ্যাপক ড. ওয়াহিদা সুমি।

এদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বানু কাজ করেন জনস্বাস্থ্য নিয়ে। পাশাপাশি শিশুদের বিভিন্ন বংশগত রোগ এবং ক্যান্সার নিয়ে। তাঁর গবেষণাপত্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দেশের গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

একইভাবে অটিজম এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জৈবপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লুলু ওয়াল মরজান। অটিস্টিক শিশুদের বংশগত ও পরিবেশগত কারণ অনুসন্ধানে তিনি ছুটে যান চট্টগ্রামের বিভিন্ন অটিজম স্কুলগুলোতে। দেশি ও বিদেশি জার্নালে তাঁর ২৭টি গবেষণাপত্র ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ- বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষণাগারে তিনি তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেছেন ৩০ এর অধিক শিক্ষার্থীর। তাঁর শিক্ষার্থীরা অস্টোলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

বিভিন্ন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. তাফসী ঘোষ রায়। তিনি উদ্ভাবন করেন নতুন সব রাসায়নিক জৈব প্রযুক্তি। তিনি গবেষণায় দেখেন তার কার্যকারিতা এবং বিভিন্ন গ্রোথ। তিনি মূলত জীবাণুনাশক বিভিন্ন জৈব উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিগত পাঁচ বছরে তিনি প্রকাশ করেছেন ১৫ এর অধিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রবন্ধ। তার গবেষণাগার থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী এ পর্যন্ত গবেষণা করে ছড়িয়ে পড়েছেন দেশে বিদেশের বিভিন্ন গবেষণাগারে।

নতুন নতুন এনজাইন এবং বংশগত রোগ থেলাসেমিয়া রোগ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম কাজ করছেন। পর্যবেক্ষণ করছেন বিভিন্ন বংশগত রোগের প্রচলিত ডায়াগনস্টিক টেস্টগুলোকে কিভাবে উন্নত করা যায়। থেলাসেমিয়াসহ একাধিক বংশগত রোগ নিয়েও কাজ করেছেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন উপকারী প্রোটিন কীভাবে জৈব প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে উদ্ভাবন করা যায় তা নিয়ে কাজ করেন এ নারী বিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণাপত্র বিভিন্ন স্বনামধন্য গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

বিভিন্ন ওষুধের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণ এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বিভিন্ন রকম রাসায়নিক উপাদানের চরিত্র বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করছেন অধ্যাপক ড. ওয়াহিদা সুমি।

গবেষণায় চট্টগ্রামের নারীরা সামনে আরও এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা করে গবেষক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, নারীরা আগের মতো পিছিয়ে নেই। স্বাস্থ্যখাতসহ বিভিন্ন বিভাগে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা একটু সুযোগ পেলে আরও সামনে এগিয়ে যাবেন এমন প্রত্যাশা।

এদিকে, গবেষণা ক্ষেত্রে নারীদের জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে অংশগ্রহণ বাড়ছে। কিন্তু উদ্যোগের বিষয় হলো প্রকৌশল ও গণিত সংশ্লিষ্ট উচ্চ শিক্ষায় চট্টগ্রামের মেয়েদের অংশগ্রহণ এখনও আশানুরূপ নয়। ২০৩০ সালে চট্টগ্রামের মেয়েরা সমানভাবে জীব বিজ্ঞান, প্রকৌশল, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে এবং উদ্ভাবনে সাফল্য বয়ে আনবে এমন প্রত্যশা চট্টগ্রামের অধিকাংশ নারী গবেষকরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট