চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নেগেটিভ সনদ সংগ্রহে ৪ আপদ

মোহাম্মদ আলী 

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ৩:১০ অপরাহ্ণ

৪ কারণে করোনা পরীক্ষায় পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। এতে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ভোগান্তির ৪ কারণ হচ্ছে- পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায়, নমুনা সংগ্রহে বুথের সংকট, দালাল চক্রের হয়রানি এবং ত্রুটিপূর্ণ সরকারি আদেশ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদেশ গমনেচ্ছু যাত্রীদের কোভিড-১৯ মুক্ত সনদ (করোনা নেগেটিভ সনদ) গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে প্রত্যেক দেশের সরকার। এ কারণে যাত্রার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই সনদ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু করোনা পরীক্ষা ও সনদ গ্রহণের ক্ষেত্রে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা।

প্রবাসীদের অভিযোগ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ত্রুটিপূর্ণ এক আদেশের কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের স্মার্ট কার্ডধারী বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের ১৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা পুনর্নির্ধারণ হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের পরিচালনাধীন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে যাদের ২০২০ ও ২০২১ সাল মেয়াদের বিএমইটি’র বহির্গমন ছাড়পত্র (স্মার্ট কার্ড) রয়েছে মূলত তাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে থাকা প্রতিজন প্রবাসীর কাছ থেকে ১৫০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। আদেশে যেসব প্রবাসীর স্মার্ট কার্ড নেই, বিশেষ করে যাদের ম্যানুয়ালি ছাড়পত্র এবং ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ডের মেম্বারশীপ রয়েছে তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে তাদের কাছ থেকে ১৫০০ টাকা করে করোনা পরীক্ষার ফি আদায় করা হচ্ছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী সাংবাদিক কামরুল হাসান জনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চরম ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা করা হয়। দিনে ৬শ’ থেকে ৯শ’ জন বিদেশগামীকে একটি মাত্র বুথে নমুনা দিতে হচ্ছে। নমুনা দিতে সবাইকে গাদাগাদি করে অপেক্ষা করতে হয় একই শামিয়ানার নিচে। ভোগান্তি এখানে শেষ নয়, দীর্ঘ সময়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও। করোনা সনদ প্রত্যাশী বিদেশ যাত্রীকে টানা তিনদিনই যাতায়াত করতে হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। প্রথম দিনের ফরম সংগ্রহ, দ্বিতীয় দিনের নমুনা প্রদান ও পরেরদিন সনদ সংগ্রহ পর্যন্ত একটি বাড়তি চাপ মাথায় নিয়ে প্রবাসীদের ঘুুরতে হচ্ছে।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিবলী আল সাদিক বলেন, ‘করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রবাসীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ত্রুটিপূর্ণ আদেশের কারণে যাদের ম্যানুয়ালি ছাড়পত্র এবং ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ডের মেম্বারশীপ রয়েছে তাদের ৩০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০০ টাকা দিয়ে করোনা সনদ নিতে হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’

কাতার প্রবাসী সাংবাদিক ও বাংলাদেশ কমিউনিটি কাতার সম্পাদকম-লীর সদস্য নুর মোহাম্মদ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘২০০ টাকা দিয়ে দেশের একজন সাধারণ মানুষ করোনা পরীক্ষা করতে পারে। কিন্তু প্রবাসীরা এমনি দুর্ভাগা যে, তাদের সে সুযোগ নেই। বেশিরভাগ প্রবাসীকে ১৫০০ টাকা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করতে হয়। করোনা পরীক্ষা নিয়ে সর্বশেষ মন্ত্রণালয় একটি আদেশ জারি করলেও তাও ত্রুটিপূর্ণ। যেসব প্রবাসীর ম্যানুয়ালি ছাড়পত্র কিংবা ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ডের মেম্বারশীপ রয়েছে তাদের ৩০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০০ টাকা দিয়ে করোনা সনদ নিতে হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনা সনদ সংগ্রহে প্রবাসীদের ফি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ আমি পেয়েছি। তা সমাধানে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। প্রবাসীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘শুরুতে প্রবাসীদের মধ্যে যাদের ২০২০ ও ২০২১ সাল মেয়াদের স্মার্ট কার্ড রয়েছে মূলত তাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর বাইরে থাকা প্রতিজন প্রবাসীর কাছ থেকে ১৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম অফিসের সুপারিশের ভিত্তিতে সব স্মার্ট কার্ডধারীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি বহির্গমন ছাড়পত্রধারী এবং ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ডের মেম্বারশীপ যাদের রয়েছে, তাদের কাছ থেকে ১৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ১০০০ প্রবাসীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়।’

ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেনালে হাসপাতালের ৪টি বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার খবর সত্যি নয়। সব ধরনের ফি রশিদের মাধ্যমে আদায় হয়।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট