রং পেন্সিল নিয়ে খাতায় আঁকিবুকি করছে ৫ বছরের শিশু আজুয়াদ। তার পাশেই মায়ের সাথে খাতায় ছবি আঁকছে সাড়ে চার বছরের হাসানুজ্জামান। বেশ খুশি মনেই খেলার ছলে মায়ের সাথে ছবি আঁকছে সে। ফাঁকে ফাঁকে দুষ্টুমিও করছে। এভাবেই গতকাল সারাদিন শিশুদের কলরবে মুখরিত ছিল নগরীর জামাল খান প্রেস ক্লাবের বিপরীতে অবস্থিত ‘অনেস্ট সেন্টার’। সারাদিন বাবা-মায়ের হাত ধরে এখানে আসছে নানা বয়সের শিশু। শিশুদের সুকুমার বৃদ্ধির জন্য গত শুক্রবার এটির উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে সপ্তাহে দুইদিন শুক্রবার ও শনিবার কিড’ডে পালন করবে ‘অনেস্ট সেন্টার’।
এ দিন দুটিতে শিশুরা এখানে আসবে, খেলবে, ছবি আঁকবে ও পড়বে বিনামূল্যে। কথা হয় শিশু হাসানুজ্জামানের মা রাউজান নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক শেখ বিবি কাউছারের সাথে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, শিশুদের জন্য এটি খুব উত্তম একটি মাধ্যম। এমন সুন্দর উদ্যোগগুলো শিশুদের উন্নত মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। শিশুরা আত্ম নির্ভরশীল ও সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী হয়। চাইলেতো শিশুরা ঘরেও এমন কাজ করতে পারে। কিন্তু ঘরের পরিবেশ আর এখানের পরিবেশের মধ্যে পার্থক্য আছে। এখানে এসে যদি এক ঘণ্টা অন্যান্য শিশুদের সাথে মিশে, খেলাধুলা করে, আঁকাআঁকি করলে শিশুদের মন ভালো থাকবে। আমি এ প্রতিষ্ঠানের খবর কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে দেখছিলাম। শুক্রবার এটি চালু হয়েছে। আমি আমার সন্তানকে সে দিনই এখানে এনেছিলাম। যেহেতু সপ্তাহে দুইদিন তাই আজও আসছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৪ হাজার বর্গফুটের অনেস্ট সেন্টারটি সাজানো হয়েছে সুনিপুণ সাজে। এখানে একই ছাদের নিচে করা হয়েছে কনভেনিয়েন্স স্টোর, ক্যাফে, ওপেন লাইব্রেরি, মিনি সংগ্রহশালা, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য প্যারেন্ট’স লঞ্জ ও কিডস জোন। সেখানেই পালন করা হচ্ছে কিড’ডে। এছাড়াও এ সেন্টারে নতুন করে যোগ হচ্ছে ‘আপনার দিনটি খারাপ গেলে আমাদের বলুন’ নামের একটি বক্তব্য। এটির মূল উদ্দেশ্য কেউ টাকার অভাবে যদি সেদিন কোনো সমস্যায় পড়ে তবে সেই ব্যক্তির পাশে দাঁড়াবে অনেস্ট। যেমন কেউ চাকরির ইন্টারভিউ দিবে, কিন্তু তার কোনো ভালো শার্ট নেই। তাকে বিনামূল্যে করে দেয়া হবে শার্টপ্যান্টের ব্যবস্থা। কারো খাবার নেই, সেদিন তাদের পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
এবিষয় অনেস্টের পরিচালক কর কমিশনার ও কথা সাহিত্যিক বাদল সৈয়দ বলেন, শিশুদের জন্য এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি উদ্যোগ। আমরা এটি করেছি মূলত শিশুদের জন্য। এ দুই দিনে শিশুরা এখানে আসবে, তাদের মনের খুশিমত ছবি আঁকবে, খেলবে। এ দুই দিনের মধ্যেই বেশ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আশপাশের অভিভাবকরা তাদের শিশুদের নিয়ে সারাদিন আসছে। এখন যদিও একটা রুমের মধ্যে।
কিন্তু আগামীতে এটি আমরা আরো বড় পরিসরে করার কথা ভাবছি। আমাদের একটাই লক্ষ্য শিশুদের সুন্দর মানসিক বিকাশ। এখনের বাবা-মায়েরাতো বটেই ছোট শিশুরাও মোবাইল ফোনে আসক্ত। যা শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমি এ কিডস জোনটি শিশুদের মনে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই যাতে তারা মোবাইল নয়, বরং এখানে এসে আঁকাআঁকির পাশাপাশি পড়ালেখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই আমরা শিশুদের জন্য আরো একটি নতুন পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি। এটি হচ্ছে ‘পড়ো, পড়ো, পড়ো’ নামে একটি বিষয়। এখানে শিশুদের একটি ই-বুক দেয়া হবে। যেখানে ছবিসহ বিবরণ যুক্ত থাকবে। শিশুরা এটি পড়বে আর বার মাসে বারটি প্রতিযোগিতা হবে। প্রতিযোগিতা যারা ভালো করবে তারা পুরস্কার পাবে। আমরা চাই মানবতা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ুক। আসুন মায়া ছড়াই।
পূর্বকোণ/এএ