চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কিশোর অপরাধ দমন করা হবে

ইফতেখারুল ইসলাম 

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:২৬ অপরাহ্ণ

কিশোর অপরাধ এবং মাদক বন্দর নগরীর একটি বড় সমস্যা। সংঘবদ্ধ কিশোরদের দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হলেও এর মূলে কিন্তু কিশোররা থাকে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে কোন না কোন রাজনৈতিক বড় ভাই। এই অপরাধে রাজনৈতিক ছত্রছায়া মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যও পরোক্ষভাবে ছত্রছায়া দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

চসিক নির্বাচনের আগে এম রেজাউল করিম চৌধুরী যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন তাতে কিশোর অপরাধের কারণ ও অপরাধী এবং মাদকের আখড়া গুঁড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সচেতন মহলের অভিমত, শহরের এই সমস্যা সমাধান করা মেয়রের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই চ্যালেঞ্জটা বেশ কঠিন হবে।

ইশতেহারে তিনি সাইবার দূষণ ও আসক্তি নির্মূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ রাখা, মেয়েদের নিজস্ব নিরাপত্তা সুরক্ষায় কিশোরীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা এবং মহিলা উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে প্রতি ওয়ার্ডে মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার উপর গুরুত্ব দেন। এছাড়া দুঃস্থ ও বিশেষ চাহিদার নাগরিক ও শিশুদের বাড়তি যত্ন ও সেবার পাশাপাশি তাদের মেধাবিকাশে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়ার কথাও বলেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কারিগরি ও আত্মকর্মসংস্থান উপযোগী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইন্টারনেট শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা। নগরীর উন্মুক্ত স্থান বা সরকারি জমি লিজ নিয়ে আধুনিক ইকোপার্ক, থিমপার্ক, শিশুপার্ক গড়ে তোলা। ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও সৃজনশীল সব কাজে উৎসাহ ও বইপড়া কর্মসূচি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক করা। বহুমুখী সাংস্কৃতিক ও ডিজিটাল পাঠাগার কমপ্লেক্স গড়ে তোলা এবং সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও অনুশীলনকে সর্বাধিক উৎসাহিত করার ঘোষণাও দেন।

বাংলাদেশ ক্রিমিনোলজি এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সমাজবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, কিশোর অপরাধ এবং মাদক প্রতিরোধের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রয়েছে। তাই এই দায়িত্ব সরাসরি মেয়রের উপর পড়ে না। তারপরও নগরপিতা হিসেবে পরোক্ষভাবে তার দায়িত্ব হল নগরকে বাসযোগ্য করে রাখা। কিশোর গ্যাং এবং মাদক শুধু দেশকে ধ্বংস করছে না। আগামী প্রজন্মকেও ধ্বংস করে দেবে। এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রজন্মকে নিরাপদভাবে গড়ে তুলতে হবে।

গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে বড় ভাই সংস্কৃতির মাধ্যমে কিশোর গ্যাং অপরাধ সংঘটিত করছে। এই শিশু-কিশোররা অপরাজনীতির শিকার। বড় ভাইয়েরা তাদেরকে বেচাকেনার কাজে ব্যবহার করছে। আবার মাদকের ব্যবসা স্থায়ী করার জন্য তাদেরকে মাদকসেবনেও অভ্যস্ত করছে। একবার অভ্যাস হয়ে গেলেই টাকা যোগাড় করার জন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি খুন পর্যন্ত করে ফেলছে। মাদকাসক্তরা সচেতনভাবে এই অপরাধ করে না। তাদের যখন মাদকের আসক্তি আসে তখনই তারা অপরাধ করে। এই সমস্যা সমাধান করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি মেয়রের পক্ষে এককভাবে সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাথে নিয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, গণ্যমান্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মসজিদের ইমামসহ সবাইকে নিয়ে একটি কমিটি করা যায়। এই কমিটি সততা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে এলাকায় কারা অপরাধে জড়িত, কিভাবে করছে, তাদের কারা সহযোগিতা করছে তার তালিকা তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে। তবে প্রথমে সচেতন করতে হবে পরিবারকে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্লাশে মাদক, বাল্যবিবাহ, চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি থেকে দূরে থাকার বিষয়ে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট