চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্বাস্থ্য বিভাগের জৌলুস ফেরাতে চাই

ইফতেখারুল ইসলাম 

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:৫৭ অপরাহ্ণ

চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের জৌলুস ফিরিয়ে আনা এবং রোগীদের আস্থা অর্জন করতে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে নবনির্বাচিত মেয়রকে। নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং আধুনিক সরঞ্জাম, নেই বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা এবং বিনামূল্যের ওষুধ। তাতেও প্রতিবছর বিশাল অংকের ভর্তুকি গুনতে হয় চসিককে। তবে সেবার মান বাড়াতে পারলে জৌলুস ফিরে আসবে। ভর্তুকিও কমে যাবে। অথচ মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে চিকিৎসা সেবায় মেমন হাসপাতাল বেশ সাড়া জাগিয়েছিল।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্বাস্থ্য বিভাগ চলছে ১৯৮৮ সালের জনবলকাঠামো দিয়ে। ওই কাঠামো অনুযায়ী এখানে চিকিৎসকের স্থায়ী পদ রয়েছে ৩৬টি। এর মধ্যে ১২ জন চিকিৎসক বিভিন্ন সময়ে অবসরে গেছেন। বর্তমানে স্থায়ী চিকিৎসকের সংখ্যা ২৪ জন এবং ১২৩ জন অস্থায়ী হিসেবে মাত্র ২১ হাজার ৮০০ টাকা বেতনে কাজ করছেন। চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ এই বিভাগে মোট জনবল হাজারের উপরে। যাদের বেশির ভাগই অস্থায়ী। নবনির্বাচিত মেয়রের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে অস্থায়ী চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীদের স্থায়ী করা।

এম রেজাউল করিম চৌধুরী ইশতেহারে প্রতি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাস্তবতা হল ৪১ ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে ৫৬টি। অর্থাৎ কোন কোন ওয়ার্ডে একাধিক কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু এসব কেন্দ্রে শিশুদের টিকা দান ছাড়া অন্যকোন সেবা মিলেনা বললেই চলে। চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, বিনামূল্যে ওষুধ না দেয়াসহ নানা কারণে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতি রোগীদের তেমন আগ্রহ নেই। বড় চ্যালেঞ্জ হবে রোগীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রমুখী করা।

রেজাউল করিম তার ইশতেহারে চসিকের একটি ৫শ বেডের পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগও মনে করে তাদের আইএইচটি এবং ম্যাটসকে ঘিরে হাসপাতাল করা সম্ভব। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও আছে।

অস্থায়ী চিকিৎসকের বেতন অত্যন্ত কম হওয়ার কারণে এখানে জুনিয়র চিকিৎসকরাও আন্তরিকভাবে কাজ করতে চান না। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাখা আরো কঠিন। অপরদিকে, মেমন জেনারেল হাসপাতালে একাধিক বিভাগ থাকলেও এখানে রোগী ভর্তি হয় খুবই কম। কারণ এখানে আইসিইউ, সিসিইউ, কিডনি ডায়ালাইসিস কিংবা জটিল রোগী চিকিৎসার সুযোগ নেই। তাই ছোট সমস্যা নিয়েও কোন রোগী এখানে ভর্তি হতে ভয় পায়।

একসময় চসিকের মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের জৌলুস ছিল। সেখানে রোগী ভর্তি করানোর জন্য তদবির করতে হত। এখন সেই জৌলুস নেই। তার অন্যতম কারণ সেবার মান কমে যাওয়া। একই অবস্থা চসিক পরিচালনাধীন অন্যান্য মাতৃসদন হাসপাতালসমূহেরও। লোকবলের অভাবে নুরুল ইসলাম বিএসসি মাতৃসদন ও ওয়াইজ খাতুন মাতৃসদন হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এই দুই হাসপাতালের বেশিরভাগ সরঞ্জামাদি নষ্ট হয়ে গেছে।

নির্বাচনের আগে মেয়র যে ইশতেহার ঘোষণা করেন তাতে নগরীর মানবতাবাদী ধনাঢ্য ব্যক্তি ও কর্পোরেট গ্রুপকে এখাতে যুক্ত করা। স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা। নিরাপদ খাদ্য, পানীয়জল ও পুষ্টির উপর সর্বোচ্চ নজরদারি করা। শিশু অপুষ্টি নির্মূলে স্কুল ফিডিং ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় মুখরোচক দূষিত ও ভেজাল খাদ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

এছাড়া আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য সেবা ইউনিট গঠনেরও প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া চলমান হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহিঃসেবা কার্যক্রম উন্নত ও নতুন বহিঃবিভাগ চালু। মেমন হাসপাতালসহ সব চালু হাসপাতালে চিকিৎসা ও প্রসূতি সেবা উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা। বন্ধ থাকা হাসপাতাল ও মাতৃসেবা কেন্দ্রগুলো পুনঃচালু। পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল নিয়োগ ও মেমন-২ হাসপাতালকে ১০০ বেডে উন্নীতকরণ। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক চিকিৎসকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পূরণ করতে হলে জনবল নিয়োগ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। একাজে মেয়রের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত।

বিশিষ্ট নগরবিদ ও সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ পূর্বকোণকে বলেন, সীমিত সামর্থ দিয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল রোগীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এখানে দূর দূরান্ত থেকে রোগী আসে। স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। আসল কথা হল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা। সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না গেলে কোথাও সফলতা আসবে না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যবস্থাপনার সংকট রয়েছে। সেটি কাটিয়ে উঠতে পারলে এই সংস্থার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহে রোগীর ভিড় বাড়বে। রোগী বাড়লে ভর্তুকিও কমে আসবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট