চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তাসফিয়ার পিতা আমিনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ জুন, ২০১৯ | ২:২২ পূর্বাহ্ণ

ইয়াবা ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন টেকনাফের ডেইল পাড়ার মোহাম্মদ আমিন। পরিবারের সদস্য নিয়ে বসবাস করতেন নগরীর অভিজাত এলাকা ও আর নিজাম আবাসিক এলাকায়। সবাই জানতো আমিন খাতুনগঞ্জের বড় মাপের ব্যবসায়ী। ২০১৮ সালে কর্ণফুলী নদীর নেভাল এলাকায় তার মেয়ে তাসফিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় আমিন বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে আমিনের ইয়াবা ব্যবসার বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি আত্মগোপন করেন। স্বামীর বদলে স্ত্রী নাঈমা মেয়ের হত্যা মামলার বাদি হতে আদালতে আবেদন করেন। গতকাল বুধবার আলোচিত ইয়াবা ব্যবসায়ী আমিনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নগরীর ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন মামলার বাদি হয়েছেন। আমিনের স্ত্রী নাঈমা বেগমের সম্পদ বিবরণীও যাছাই করছে দুদক। নাঈমার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশে বলা হয়, নাঈমা বেগম একজন গৃহিনী। তাঁর আয়ের কোন উৎস না থাকলেও তিনি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরে বিপুল সম্পদের মালিক। সে কারণে নাঈমার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
ডবলমুরিং থানায় দায়ের করা মামলার বিবরণে জানা গেছে, মো. আমিন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার কালা মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি ২০১৮ সালের ২০ জুন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মো. আমিন নিজ নামে মোট এক কোটি ৪১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে এক কোটি ৭৩ লাখ ৮২ হাজার ৯৩৮ টাকার সম্পর্দ অর্জনের তথ্য মেলে। এ ছাড়া ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনেরও তথ্য পান দুদক কর্মকর্তা।
মামলার বাদি দুদকের উপ সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন জানান, ‘৩২ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৩ টাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন পূর্বক ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করে এবং ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮৪ হাজার টাকার স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জন পূর্বক ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু আমিন নন। তার ছোট ভাই আবদুল আমিনও ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। ফ্ল্যাট বাসা নিয়ে তিনিও নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করেন। দুজনেই আলোচিত দেশের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হাজী সাইফুলের ব্যবসার অংশীদার। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার নেভাল একাডেমি এলাকা থেকে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি প্রাইভেটকারসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আবদুল আমিন ও তার ভাই মোহাম্মদ আমিনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আসাদুজ্জামান টিটু বাদি হয়ে পরদিন ( ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬) কোতোয়ালী থানায় মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন ঘটনার তিনমাসের মাথায় ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর আবদুল আমিনকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মোহাম্মদ আমিনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কেশব চক্রবর্তী। আবদুল আমিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এবং দেড় বছর আগে ইয়াবাসহ ধরা পড়লেও সেই বিষয়ও রহস্যজনক কারণে তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পুর্ব ইতিহাসের কলামে উল্লেখ করেনি। তদন্ত কর্মকর্তার বদৌলতে ইয়াবা গডফাদার আব্দুল আমিন ইয়াবাপাচার করা সত্বেও আইনের আওতায় আসেনি। এর আগে ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যববসাী আবদুল আমিনকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ স্টেশন রোড এলাকার হোটেল প্যারামাউন্টের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করেছিলো নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় আব্দুল আমিনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে ঐ দিনই কোতোয়ালী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দায়ের করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে ওই বছরের ১১মে মাদক পাচারের অভিযুক্ত থাকার অপরাধে আব্দুল আমিনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশীট) দাখিল করে মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ মঈন উদ্দিন। কয়েকমাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে ফের ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে আমিন সহোদর।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে টেকনাফে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করা ১০১ জন ইয়াবা পাচারকারির সাথে আব্দুল আমিন আত্মসমর্পণ করেন। মোহাম্মদ আমিন বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট