শহীদ সিপাহী নায়ের আলী। বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। ‘৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামে কালুরঘাটে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। বোয়ালখালীর গোমদন্ডী বহদ্দারপাড়ার একটি কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে। তিনি ছিলেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম শহীদ। স্বাধীনতার ৫০ বছর ধরে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই বীর শহীদের সমাধিস্থল। সরকারিভাবে কোনো সংস্কার বা সংরক্ষণ করা হয়নি ৫০ বছরেও।
বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম বাবুল বলেন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ হন সিপাহি নায়েব আলী। অযত্নে পড়ে রয়েছে তাঁর সমাধিস্থল। এক সময়ে জাতীয় দিবসগুলোতে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও স্থানীয় লোকজন শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। এখন আর কেউ খবর নেয় না। ঝোঁপ-জঙ্গলে পরিণত হয়েছে সমাধিস্থল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত ওয়াজেদ মিয়া, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা অনেকবার তা পরিদর্শন করেছিলেন। কিন্তু কেউ তা সংরক্ষণ করেনি।
শুধু নায়েব আলী নন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে অনেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল, গণকবর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-বিজড়িত স্থান। এসব স্থান চিহ্নিত করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া পূর্বকোণকে বলেন, ‘বধ্যভূমি চিহ্নিত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উপজেলাগুলোতে চিঠি দিয়েছিলাম। তালিকা জমা দিচ্ছে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা।’
এডিসি জাকারিয়া বলেন, ‘যেখানে ৩০ শতাংশ জায়গা থাকবে সেখানে স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেবে সরকার। না থাকলেও স্মৃতিচিহৃ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন পূর্বকোণকে বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের গণকবর চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন সুলতানা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে গণকবরের সন্ধান বিষয়ে একটি তালিকা জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে। এতে দেখা যায়, উপজেলার বড় উঠানের ৬নং ওয়ার্ডের শাহমীরপুর গ্রামে আবদুল জলিল সড়কের পুরাতন গির্জা (খ্রিস্টান কবরস্থান) ভেতরে বধ্যভূমি রয়েছে। ১৯৭১ সালে ৪ জুন সকালে ১৩ জনকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৩ শহীদকে পাশের গর্তে গণকবর দেওয়া হয়।
এই ধরনের গণকবর বা বধ্যভূমি চিহ্নিত করে তালিকা পাঠানোর জন্য চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসক। বিভিন্ন উপজেলা থেকে তালিকা জমা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এডিসি এস এম জাকারিয়া।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক তালিকা ধরে ২৪২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা, টর্চার সেল, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-বিজড়িত স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের কাজ অনেকটা এগিয়েছে।
ইউএনও রুহুল আমীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সমাধিস্থল বা বধ্যভূমি চিহ্নিত করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ চলছে। আরও একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। গণকবর বা স্মৃতিস্থান চিহ্নিত করার পর তাও সংরক্ষণ করা হবে।
পূর্বকোণ/এএ