চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

মানসম্মত শিক্ষা ও সমস্যা সমাধান

ইফতেখারুল ইসলাম

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ২:০২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মান বাড়ানো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে নবনির্বাচিত মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী কাছে। কারণ এখানে রয়েছে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য। অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অদক্ষ শিক্ষকসহ নানা সমস্যা।
নির্বাচনের আগে মেয়র যে ইশতেহার প্রকাশ করেছিলেন তার ১৯ নম্বর দফায় স্বল্প খরচে মানসম্মত শিক্ষার সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ইশতেহারে তিনি বলেন, যদিও শিক্ষাসেবা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে পড়ে না। তবুও এক সময়ের জনপ্রিয় পৌর চেয়ারম্যান নুর আহাম্মদ নগরের শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক অবদান রাখেন। তাঁর পথ ধরে প্রথম নির্বাচিত ও সফল মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নগরবাসীকে টানা শিক্ষা সেবা দিয়ে গেছেন। যা এখনো চলমান আছে।
চসিক সূত্র জানায়, এই সংস্থার পরিচালনাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে দুটি। কিন্ডার গার্টেন (কেজি) সাতটি, অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি, মাধ্যমিক স্কুল ৪৮ টি এবং ২৩টি কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। শহরের শিক্ষার্থীদের বড় একটি সংখ্যা চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করলেও শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারেনি এসব প্রতিষ্ঠান। তাই চসিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তি হওয়ার তেমন প্রতিযোগিতাও চোখে পড়ে না। সরকারি স্কুল এবং কলেজসমূহে জায়গা না পেলে অনেকেই চসিকের স্কুল এবং কলেজসমূহে ভর্তি হয়। তাই নবনির্বাচিত মেয়র চসিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার মান বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়াও চসিককে পরামর্শ দিয়েছেন, কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া এবং কিছু প্রতিষ্ঠানকে কাছের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে একীভূতকরনের।
চসিকের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, নানা কারণে চসিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার মান বাড়েনি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করা। যাচাই-বাছাই করে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানকে অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে একীভূত করা যায়। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনার পরামর্শ দেন।
প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া পূর্বকোণকে বলেন, শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে মানসম্মত শিক্ষক দরকার। এর জন্য দরকার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। অতীতে এখানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। কিছুদিন বন্ধ ছিল। লালদিঘি পাড়ের সেই কেন্দ্রটি এখন পুনর্নির্মিত হয়েছে। এখানে প্রচুর শিক্ষক আছেন যারা সর্বসাকুল্য বেতনে চাকুরি করেন। স্থায়ী শিক্ষকদের সাথে তাদের বেতন পার্থক্য অনেক বেশি। একই কর্মস্থলে একই ধরনের কাজ করে বেতনে পার্থক্য হলে তারা উৎসাহ কম পায়। অবকাঠামোগত সমস্যা গত পাঁচ বছরে বেশ সমাধান হয়েছে। এভাবে কাজ চললে বছর দুয়েকের মধ্যে অবকাঠামো সমস্যা আর থাকবে না। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যেমন অনলাইন ক্লাস, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম ইত্যাদিতে জোর দিতে হবে। শিক্ষা সেবা খাত। এখানে লাভ করা উচিত নয়। ভর্তুকিকে ন্যূনতম অবস্থায় আনতে হবে। দুইভাবে কমিয়ে আনা যায়। একটি হল বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো। দ্বিতীয়টি হল বেতন বাড়ানো। বাস্তবতা হল বেতন বাড়ানো সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন ব্যয়সংকোচন করা। গত পাঁচ বছরে ব্যয় অনেক কমানো হয়েছে। ভর্তুকি একেবারে শূন্য হবে তা চিন্তা করা উচিত হবে না। এছাড়া আর নতুন কোন প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ না করে যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তার মান বাড়ানোতে মনযোগী হওয়া।

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট