চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ইশতেহার বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ পর্ব-৫

ডিজিটাল গৃহশুমারি করে কর

ইফতেখারুল ইসলাম

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ৫:৪১ অপরাহ্ণ

নির্বাচনের আগে নবনির্বাচিত মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার মধ্যে আট নম্বর দফায় বলেছেন, ‘ডিজিটাল গৃহশুমারি করে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন, ওভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে।’

এসময় তিনি নগরীর পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা, সড়ক বাতিসহ, সব ধরনের নাগরিক সুবিধা প্রদানে গৃহকরকেই সিটি কর্পোরেশনের আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আধুনিক চাহিদা ও বাস্তবতায় সিটি কর্পোরেশনকে আরো অনেক নাগরিক সেবা দিতে হয়। গৃহকর নিয়ে নানাসময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আবার কয়েকশ কোটি টাকা গৃহকর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তির কাছে বকেয়া পড়ে আছে। নাগরিক সেবা চালু রাখার পূর্বশত হল করদাতাদের স্বচ্ছতা-দায়বদ্ধতা। কর বিভাগে সর্বোচ্চ নজরদারি ও স্বচ্ছতা-দক্ষতা ফিরিয়ে আনারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

সচেতন মহলের অভিমত, গৃহকর হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষমতা চসিক মেয়রের নেই। কারণ এটি আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) কনজারভেন্সি ওয়ার্ডে ১৭ শতাংশ এবং ননকনজার্ভেন্সি ওয়ার্ডে ১৪ শতাংশ হারে গৃহকর আদায় করে। এর মধ্যে বছরের ১০ মাসের ভাড়ার উপর গৃহকর আদায় করা হয়।

সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম বর্গফুটের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি এলাকার বাণিজ্যিক গুরুত্বের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করেন। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আইনানুযায়ী গৃহকর মূল্যায়ন করতে গিয়েই তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন। শুরু হয় আন্দোলন সংগ্রাম। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হন। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে গৃহকরের ওই মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে বছরে ব্যয় হয় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। গৃহকর খাতেও চসিকের বাৎসরিক আয় হয় প্রায় একই পরিমাণ। এর সাথে রয়েছে চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে গৃহীত নানা উন্নয়ন প্রকল্প এবং মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত প্রকল্পের ম্যাচিং ফান্ড। চসিকের উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যাচিং ফান্ড খাতে এ পর্যন্ত হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। নিজস্ব আয় বাড়াতে না পারলে ভবিষ্যতে যত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করবে ম্যাচিং ফান্ড খাতে ঋণ তত বাড়বে। চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণ করা কঠিন হবে।

চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ও সংগঠনের মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমি পূর্বকোণকে বলেন, নবনির্বাচিত মেয়র ইশতেহারে গৃহকর নিয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে তারা শঙ্কিত। কারণ ডিজিটাল কিংবা ম্যানুয়েল পদ্ধতি যাই হোক না কেন, বর্তমান আইনে মূল্যায়ন করা হলে বাড়ি মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

১০ মাসের ভাড়া থেকে ১৭ শতাংশ কর দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই উল্লেখ করে বলেন, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম কিছু এলাকায় গৃহকর বাড়িয়েছিলেন। তা সহনীয় মাত্রায় ছিল। কিন্তু তার পরের মেয়র আইনানুযায়ী মূল্যায়ন করতে গিয়ে তুমুল আন্দোলনের মুখে পড়েছেন।

নবনির্বাচিত মেয়র এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে আন্দোলনের সম্মুখীন হবেন। তাঁর উচিত হবে গৃহকর সহনীয় মাত্রায় রাখতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া। এক্ষেত্রে তিনি সবার সহযোগিতা পাবেন।

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট