চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশকমুক্ত নগর ভূ-প্রকৃতি অক্ষত রেখে উন্নয়ন

ইফতেখারুল ইসলাম 

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ৪:০৯ অপরাহ্ণ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশকমুক্ত নগরী এবং ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি না করেই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। ৩৭ দফা  ইশহেতারের ৬, ১১ এবং ১৫ নম্বর দফায় এসব প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ইশতেহারে তিনি সাবেক মেয়রের ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ কর্মসূচিকে আরো জোরালোর ও নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছেন। নির্দিষ্ট বিনবক্স ছাড়া যত্রতত্র ময়লা ছুঁড়ে ফেলার কূ-অভ্যাস বন্ধ করারও আহ্বান জানান। একইসাথে বর্জ্য রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট গড়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তৈরির প্রতিশ্রুতিও দেন।

এছাড়া প্লাস্টিক ও পলিথিন পণ্যের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত প্রাকৃতিক পণ্য বিশেষ করে পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া। অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে আলাদা ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে রপ্তানি উপযোগী গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরির উদ্যোগ নেয়ার কথাও ইশতেহারে উল্লেখ করেন। তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে বেশ কয়েকবছর আগে। তাতে এখনো সফল হয়নি। এমনকি চট্টগ্রামে বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জায়গা পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। কারণ এই কেন্দ্র স্থাপনে যে পরিমাণ জায়গা লাগবে তা সিটি কর্পোরেশনের কাছে নেই। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তেমন তাড়াও নেই। চসিক থেকে যেসব প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে গত তিন বছরেও তার ভিত্তিতে কোন প্রস্তাব এখনো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে যায়নি।  তবে চসিকের অতীত বাস্তবতা হল টিউবলাইট কারখানা, বোতলজাত পানীয় জলের প্ল্যান্টসহ এপর্যন্ত তারা যতগুলো কারখানা গড়ে তুলেছে কোনটাতেই সফল হয়নি। এমনকি নারীবান্ধব যে সিটি বাস সার্ভিস চালু করেছিল তাতেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এসব কারখানা চালানোর মত দক্ষ লোক চসিকে নেই। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় চসিকে চুয়েট-বুয়েট থেকে পাশ করা প্রকৌশলীর সংখ্যা নিতান্তই কমে গেছে। যে ক’জন আছেন, তারাও কয়েক বছরের মধ্যে অবসরে যাবেন।

চট্টগ্রামের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ ও ভূপ্রকৃতির ক্ষতি না করে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু রাখার কথা বলেন। মশকমুক্ত নগর গড়তে কার্যকর ও পরিবেশ উপযোগী কীটনাশক প্রয়োগ ও বদ্ধডোবা, জলাশয় নিয়মিত পরিষ্কার রাখার প্রতিশ্রুতিও তিনি দেন।

জানতে চাইলে সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মেয়রের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেক। তাকে বুঝতে হবে নগরবাসী কি চায়। নগরবাসীর মনের ভাষা বুঝতে না পারলে তাদের মন জয় করতে পারবেন না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন অত্যন্ত খরুচে একটি ব্যাপার। এর জন্য বিদেশি প্রযুক্তি আনতে হবে। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে হবে। বিশাল অংকের অর্থের প্রয়োজন হবে। তাদের যেখানে বেতন দিতে কষ্ট হচ্ছে সেখানে এই ধরনের খরচের প্রকল্প গ্রহণ করা কঠিন হবে।

চট্টগ্রামের ভূ-প্রকৃতি রক্ষার জন্য সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপর দায়িত্ব বেশি। কারণ পাহাড় কাটা, জলাশয় ভরাট ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারাই আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আবার তাদের বিরুদ্ধেও পাহাড় কাটার অভিযোগ আছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মেয়রকে কেন্দ্র করে যতক্ষণ না অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত এসব প্রতিশ্রুতি মেয়রের পক্ষে বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। অর্থাৎ মেয়রের ক্ষমতায়ন দরকার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার ফারমিন এলাহি পূর্বকোণকে বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে পারলে মশা, গন্ধদূষণ ইত্যাদি সমস্যা অনেক কমে যাবে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ভূ-প্রকৃতি তথা পাহাড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ রক্ষার জন্য সব সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কোন প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তিনি জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের লেক সিটি হাউজিং সোসাইটিতে পাহাড় কাটা নিয়ে তারা মামলা করেছিলেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট